বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গা পুজো চলে গেলো। এইবার আসছে কালীপূজা। গৌরী এবার শ্যামা হয়ে ফিরে আসবেন মর্ত্যভূমিতে। সকলে মেতে উঠবেন দেবী কালিকার বন্দনায়।
কয়েকটি সামান্য ভুলের কারণে দেবী রুষ্ট হতে পারেন। তাই জেনে নিন কালীপূজার দিন কোন ভুলগুলো নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
কালীপূজার দিন যে ভুলগুলো করা উচিত নয়
১. জুতো পরে প্রবেশ করবেন না
দেবী যেখানে পূজিতা হচ্ছেন সেই ঘরে কখনোই জুতো পরে প্রবেশ করবেন না। শুধু তাই নয় পুজোর ঘরের আশেপাশে ও জুতো রাখবেন না। পুজোর ঘর থেকে অনেকখানি দূরেই জুতো রেখে তারপরে প্রবেশ করুন।
২. টাটকা ফুল ছাড়া মায়ের পুজো করবেন না
অনেকেই তাড়াহুড়োর কারণে অথবা অন্য কোন নিত্যনৈমত্তিক কাজের জন্য প্রতিদিন বাজার থেকে টাটকা ফুল আনতে পারেন না। তারা আগের দিন ফুল কিনে এনে সেটা রেখে দেন এবং পরের দিন পুজো করেন। কিন্তু মায়ের পুজোর ক্ষেত্রে এটা করবেন না। মা কালীর পুজো করুন টাটকা ফুল দিয়ে। যেদিন ফুল কিনবেন সেইদিনই মাকে সেই ফুল নিবেদন করতে হবে, ফুল রেখে দিয়ে পরেরদিন নিবেদন করলে চলবে না।
৩. চামড়া দিয়ে তৈরি কোন জিনিস ঠাকুর ঘরে রাখবেন না
পুজোর ঘরে চামড়া দিয়ে তৈরি কোন জিনিস ঢুকাবেন না,বলা হয় যে পুজোর ঘরে চামড়ার কোন জিনিস নিয়ে ঢুকলে পুজোর ঘর অপবিত্র হয়ে যায়। তাই চামড়ার তৈরি ব্যাগ বা চামড়ার তৈরি অন্য কোন জিনিস পুজোর ঘরের বাইরে ই রাখুন।
৪. ভাঙ্গা মূর্তিকে পুজো না করা
মূর্তি ভেঙে গেলে অবশ্যই নতুন মূর্তি স্থাপন করবেন। কোন মূর্তি ভেঙে গেলে তা জোড়া দিয়ে পুজো করবেন না। আর কালীপূজার দিন অলক্ষ্মী পূজা অবশ্যই করবেন।
৫. পূর্বপুরুষদের ছবি ঠাকুর ঘরে রাখবেন না
পূর্বপুরুষদের ছবি ঠাকুর ঘরে রাখবেন না। তারা কখনোই ঠাকুরের সমতুল্য নয়। ঠাকুর ঘরে শুধুমাত্র দেবদেবীর ছবিই রাখুন।
৬. পরিষ্কার বা নতুন কাপড় পরিধারন করুন পুজোর সময়
মা কালীর পুজোতে বসার সময় শুদ্ধ বসন পরিধান করুন। নতুন কাপড় থাকলে তা পরে পুজোয় বসুন বা অঞ্জলি দিন।
৭. অঞ্জলির সময় কোন খারাপ চিন্তা নয়
মা কালীর মূর্তির সামনে বসে করজোড়ে প্রার্থনা করুন যাতে মনের কালিমা দূর হয়। দেবী মূর্তির সামনে বসে বা অঞ্জলির সময় ভুলেও কোন অনিষ্ট চিন্তা মাথার মধ্যে আনবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কালীপূজার সঠিক বিধি জেনে তবেই বাড়িতে পুজো করুন।
৮. ভোগ প্রস্তুতির সময় কথা বলবেন না
দেবীর ভোগ প্রস্তুতির সময় কথা বলবেন না অথবা মুখে একটা কাপড় বেঁধে ভোগ প্রস্তুত করুন। কারণ কথা বললে অনেক সময় আমাদের মুখের থেকে থুতু ছিটকে এসে পরে খাবারের মধ্যে। তাই সে ক্ষেত্রে থুতু ছিটকে এসে যদি ভোগের রান্নার মধ্যে পরে তাহলে তা উচ্ছিষ্ট হয়ে যায়।আর উচ্ছিষ্ট অন্ন দেবীকে নিবেদন করা মহাপাপ।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি কথা উল্লেখ্য যারা মহাপুরুষ যেমন সাধক বামাক্ষ্যাপা অথবা রামকৃষ্ণ তারা নিজেদের মুখের খাবার দেবীকে নিবেদন করতেন, তারা এমন অনেক কার্য ই করেছেন তাদের সাধনার জন্য। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে তারা সাধক মানুষ।
তারা যে ভাব নিয়ে ভগবানের পুজো করে ছিলেন আমরা কখনোই সেভাবে ভগবানের পুজো করতে পারিনা,উপরন্তু তারা যতখানি নিষ্কাম, নিষ্কলুষ, স্বার্থশূন্য ও পবিত্র ছিলেন আমরা তেমন নয়। তাই কোন রকম পুজোর ক্ষেত্রেই মহাপুরুষদের অনুকরণ করা উচিত নয়। শাস্ত্র সম্মতভাবেই ভোগ নিবেদন করা উচিত।
৯. কালীপূজার দিন বাড়ির বাইরে থাকবেন না রাতে
কালীপুজোর দিন এবং ভূত চতুর্দশীর দিন কবরস্থান ও শ্মশান ইত্যাদি জায়গা এড়িয়ে চলুন। কারণ এই সময় সেখানে একটি নেগেটিভ শক্তি বিরাজ করে।তাই কালীপুজোর দিন বা ভূত চতুর্দশীর দিন যদি কবরস্থান অথবা শ্মশানে যাওয়া হয় তাহলে অমঙ্গল হওয়ার ই আশঙ্কা থাকে।
১০. মহিলারা কখনোই খোলা চুলে থাকবেন না
কালীপুজোর দিন ও ভূত চতুর্দশীর দিন মহিলারা কখনোই সন্ধ্যেবেলায় খোলা চুলে থাকবেন না। এতেও নেগেটিভ শক্তি বৃদ্ধি পায়।
১১. সন্ধ্যে বেলার পর ঘর ঝাড়ু দেবেন না
কালীপূজার দিন ও ভূত চতুর্দশীর দিন সন্ধ্যেবেলার পর ঘর ঝাড়ু দেবেন না। মনে করা হয় এরকমটা করলে লক্ষীদেবী ঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে যান।
১২. দুগ্ধ জাতীয় জিনিস সন্ধ্যে বেলায় দেওয়া নেওয়া করবেন না
এছাড়া এই দুই দিন সন্ধ্যার পর কেউ যদি আপনার কাছ থেকে দুধ জাতীয় কোনো রকম জিনিস চায় তাহলে সেটা দেবেন না। মনে করা হয় এরকমটা করলে যে দুধ জাতীয় জিনিস দেয় তার বাড়ি থেকে পজিটিভ শক্তি বিদায় নেয় ও এর পরিবর্তে নেগেটিভ শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মন্তব্য করুন