অনেক সময়ে অসাবধানতাবশত আমাদের হাত থেকে অতিরিক্ত নুন তরকারিতে পড়ে যায়। তখন আমরা বুঝতেই পারি না ঠিক কী করলে অতিরিক্ত নুনের স্বাদ চলে যাবে। আর নুন বেশি হলে রান্না তো খুবই খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের হাতের কাছেই এমন কিছু জিনিস থাকে যা দিয়ে আমরা সহজেই তরকারির অতিরিক্ত নুন কমিয়ে ফেলতে পারি।
১. ঘি’এর কামাল
রান্নায় কখনও নুন বেশি হয়ে গেলে তার মধ্যে খানিক ঘি দিয়ে দিন। তারপর আঁচ কমিয়ে কড়াই চাপা দিয়ে রেখে দিন দশ মিনিট মতো। দশ মিনিট পর টেস্ট করলেই বুঝবেন যে নুন অনেকটা কমে গেছে। অনেকে আছেন যারা ঘরে ঘি তৈরি করেন এখনও। সেই ঘরে তৈরি ঘি দিয়েও অতিরিক্ত নুনের স্বাদ কম করা যাবে।
২. ভিনিগার আর চিনি
অতিরিক্ত নুনের স্বাদ কমাতে ভিনিগার আর চিনির মিশ্রণও খুব ভালো কাজ করে। ভিনিগারের বদলে লেবুর রসও নেওয়া যেতে পারে। এক চামচ ভিনিগার বা লেবুর রস আর তার সঙ্গে এক চামচ চিনি মিশিয়ে সেই মিশ্রণ তরকারিতে দিয়ে পাঁচ মিনিট নাড়ালে নুনের স্বাদ ঠিক হয়ে যায়।
৩. ব্রেডক্রামস
ব্রেডক্রাম বা বিস্কুটের গুঁড়ো যে কোনও মুচমুচে জিনিস ভাজতে অত্যন্ত দরকারি। কিন্তু নুন কমাতেও যে এর জুড়ি মেলা ভার তা তো জানতেন না। আমাদের বাড়িতে ব্রেডক্রাম আনাই থাকে। আর না থাকলে বিস্কুট গুঁড়ো করে নিন। সেটা এবার তরকারিতে দিয়ে দিন। এতে তরকারির স্বাদ যে খুব একটা বদলে যাবে তা কিন্তু নয়। আর খুব ঘন লাগলে একটু জল দিয়ে দেবেন। তাতে নুনের স্বাদ আরও কমে যাবে।
৪. আলু
তরকারিতে নুন কম হয়ে গেলে এটা সহজেই নুন কমিয়ে দেয়। অন্য কিছু বাঙালি বাড়িতে থাক বা না থাক, আলু থাকবেই। তাই কয়েক টুকরো আলু তরকারিতে দিয়ে দিন নুন বেশি হয়ে গেলে। কাঁচা আলু দিলেই ভালো হয়। অবশ্যই খোসা ছাড়িয়ে দেবেন। আপনি সেদ্ধ আলুও দিতে পারেন। ২০ মিনিট তরকারি অল্প আঁচে দিয়ে রাখুন। আলু ততক্ষণে অতিরিক্ত নুন টেনে নেবে। যদি আপনি চান আলু রেখে দিতে পারেন। নয়তো তুলে নিতে পারেন।
৫. লেচি
এটা কিন্তু আপনারা আগে শোনেননি। নুন বেশি হলে আটা বা ময়দার লেচি করে তরকারিতে দিয়ে দিন। তিন – চারটি লেচি দিলেই হবে। দশ মিনিটের মধ্যে এই লেচি অতিরিক্ত নুন টেনে নেবে। তারপর লেচি তরকারি থেকে সরিয়ে দিন। আপনি শুধু আটা বা ময়দাও ওপর থেকে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে অবশ্য তরকারি ঘন হয়ে যাবে। তরকারিও রইল আর নুনও কমল।
৬. ফ্রেশ ক্রিম
রান্নায় আলাদা স্বাদ আনতে এটি ব্যবহার তো করেইছেন। এবার নুন কমাতে ফ্রেশ ক্রিম ব্যবহার করুন। এটি ব্যবহার করলে নুন তো কমবেই। তার সঙ্গে রান্নায় একটা আলাদা ক্রিমি টেক্সচার আসবে, আর বাড়বে রান্নার স্বাদ। রান্নার পরিমাণ আর কতটা নুন বেশি হয়েছে সেটা বুঝে ফ্রেশ ক্রিম দিতে হবে।
৭. দই বা দুধ
অনেকের বাড়িতে ফ্রেশ ক্রিম থাকে না অনেক সময়ে। তার বদলে আপনি দুধ বা দই দিতে পারেন। দুধ বা দই প্রায় সবার বাড়িতেই থাকে। দুধ বা দই যেমন রান্নার নুন কমাবে, তেমনই রান্নার স্বাদ বাড়াবে। দই তো অনেক রান্নারই মূল উপকরণ হয়ে থাকে।
৮. পেঁয়াজ
আরেকটি ঘরোয়া জিনিস যা প্রায় সব বাঙালির লাগেই। নুন কমাতে কাঁচা পেঁয়াজ বড় বড় টুকরো করে কেটে তরকারিতে দিয়ে দিন। কাঁচা পেঁয়াজ হলে খানিক পর পেঁয়াজ তুলে নিন। চাইলে আপনি ভাজা পেঁয়াজও দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজ রান্না থেকে না সরালেও চলবে।
৯. টম্যাটো
রান্নায় নুন বেশি হলে টম্যাটো চার টুকরো করে কেটে কেটে রান্নায় দিয়ে দিন। টম্যাটো নরম বলে রান্নায় সহজেই মিশে যাবে। তাই আলাদা করার দরকার নেই। বীজ সমেতই দিতে পারেন রান্নায়। খুব ভালো করে অতিরিক্ত নুন কমিয়ে দেবে টম্যাটো।
১০. নারকেল
নারকেলের এই গুণ আমরা অনেকেই জানি না। অতিরিক্ত নুন কমাতে টুকরো করে নারকেল রান্নায় দিন। পনেরো মিনিট পর নারকেল চাইলে তুলে নিতে পারেন। যদি নারকেল পছন্দ হয় বা ওই রান্নায় নারকেলের স্বাদ মানায়, তাহলে নারকেল রেখেও দিতে পারেন। নারকেল ঘরে না থাকলে, যদি নারকেলের দুধ থাকে, তাতেও ভালোই কাজ চলবে।
আশা করি আজকের এই টিপস আপনাদের রোজকার সমস্যায় সমাধানের আলো দেখাবে। এই সব উপকরণই আমাদের কাছে থাকে। তাই নুন বেশি হয়ে গেলে এখন আর না কেঁদে স্মার্ট হয়ে চললেই প্রশংসা আপনার হাতের মুঠোয়।
মন্তব্য করুন