বিরিয়ানী – মজাদার এই খাবারটি জীবনে কখনোই খেয়ে দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। একবার যে মানুষ বিরিয়ানীর স্বাদ পেয়েছে, সে বারবার খেতেই চাইবে। জনপ্রিয় এই খাবারটির উৎপত্তিস্থল পাশের দেশ ভারত হলেও, বাংলাদেশেও এটি খুবই প্রচলিত খাবার। অনুষ্ঠানাদি ও মেহমানদারীতে এর তুলনা হয় না।
এছাড়াও এই বিরিয়ানীকে ঘিরেই দেশের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কয়েকটি রেস্তোরা। এদের রান্নার ধরণ এবং অতুলনীয় স্বাদের ও সুঘ্রাণের কারণে বিরিয়ানী খেতে মানুষ নিয়মিত আনাগোনা করে এই রেস্তোরাগুলোতেও। এসবের মধ্যে পুরান ঢাকার বিরিয়ানী হাউজগুলো খুবই নামকরা। নিজস্ব রেসিপি, ঐতিহ্য ও স্বাদের কারনে এই দোকানগুলো যায়গা করে নিয়েছে ভোজন রসিক বাঙালীর জীবনে। পুরান ঢাকায় গিয়ে বিরিয়ানী না খেয়ে ফেরত আসা খুবই বোকামী। চলুন আজ জেনে নেই ঢাকার বেস্ট দশটি বিরিয়ানী হাউজের নাম –
হাজীর বিরিয়ানীঃ
বাংলাদেশের বিরিয়ানী জগতের বিখ্যাত ব্র্যান্ড হাজীর বিরিয়ানী। এখন এই নামে অনেক দোকান গড়ে উঠলেও নাজিরা বাজারের হাজীর বিরিয়ানী কোনো সাইনবোর্ড ছাড়াই বিখ্যাত। সরিষার তেল আর খাসির মাংস দিয়ে রান্না করা এই বিরিয়ানী পার্সেল করা হয় কাঁঠাল পাতা দিয়ে বানানো ঠোঙায় করে। এখানকার বিরিয়ানী খেতে হলে অবশ্যই আপনাকে আগেভাগেই যেতে হবে। কারন সকাল বেলা দুই ডেকচি আর বিকেল বেলা তিন ডেকচির বেশি বিরিয়ানী কখনোই বিক্রি করা হয় না। তাই আগে গেলে আগে পাবেন। এখানে বিরিয়ানী বিক্রি করা হয় প্রতি প্লেট ১৪০ টাকা হিসেবে। এই বিরিয়ানী হাউজের প্রধান শাখা হচ্ছে – ৭০ কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার, ঢাকা।
সুলতান’স ডাইনঃ
অথেনটিক বিরিয়ানী আইটেম খেতে চাইলে আপনি যেতে পারেন সুলতান’স ডাইনে। এদের কাচ্চি বিরিয়ানী এবং চিকেন বিরিয়ানী এক কথায় অসাধারণ। গরম গরম কাচ্চির সাথে এরা আপনাকে সার্ভ করবে এদের স্পেশাল বোরহানিও। সুলতান’স ডাইনের বিরিয়ানী খেতে হলে আপনাকে যেতে হবে – ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের গ্রিন প্লাজায়। অসাধারণ এই বিরিয়ানীর দামও হবে আপনার হাতে নাগালেই।
নান্নার বিরিয়ানীঃ
ভোজন প্রিয় বাঙালীর আরেকটি পছন্দের বিরিয়ানীর দোকান হচ্ছে নান্নার বিরিয়ানী। তারা মসজিদের সামনে অবস্থিত এই দোকানটির বিরিয়ানী লোকজনের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে অনেক আগে থেকেই। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বিক্রি হয় নান্নার বিরিয়ানী। তো সুবিধে মত যে কোনো দিন গিয়ে চেখে আসুন বিখ্যাত নান্নার বিরিয়ানী।
হানিফের বিরিয়ানীঃ
এই দোকানটার প্রধান আকর্ষণ কাচ্চি বিরিয়ানী। যদি ঢাকার বেস্ট কাচ্চি খেতে চান তাহলে পুরান ঢাকার ৩০ নং কাজী আলাউদ্দিন রোডের এই বিরিয়ানীর দোকানটায় আপনাকে আসতেই হবে। সকাল এগারটা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত নিয়মিত কাচ্চি বিরিয়ানী পাওয়া যাবে এখানে। ভাববেন না পুরনো দোকান, হয়ত কেবল সুনাম নামেই। মোটেও তা নয়। প্রায় তিন যুগ ধরে নিজেদের সুনাম ধরে রেখেছে হানিফের কাচ্চি বিরিয়ানী। খাবার ভালো না হলে এমনটা কি হয় বলুন?
ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানীঃ
ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজের ক্যান্টিনে শুরু করা এই ফখরুদ্দিন বিরিয়ানীর শাখা রয়েছে এখন দেশের বাইরেও। বাংলাদেশের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়াতেও ছড়িয়ে পরেছে এর সুখ্যাতি ও সুনাম। শোনা যায়, ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ছেলের পছন্দের বিরিয়ানী এই ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানী। ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা ও বাড্ডায় রয়েছে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানীর চারটি শাখা।
বাঁশমতি কাচ্চিঃ
আইটেম নয়, দোকানের নাম এটি। এদের কাচ্চি বিরিয়ানীটা যে মজাদার হয় না! না খেলে পুরাই মিস! দারুণ সুঘ্রাণ আর স্বাদে অতুলনীয় এই কাচ্চি বিরিয়ানী খেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে ধানমন্ডির জিগাতলায়। খেতে বসে এই কাচ্চি বিরিয়ানীর সাথে স্বাদে মিল খুঁজে পাবেন হায়দ্রাবাদি কাচ্চির। তাহলে বুঝতেই পারছেন এখানকার বিরিয়ানী কতটা লোভনীয়!
কোলকাতা কাচ্চিঃ
রাস্তার পাশে কোনো রকমে পাঁচজন বসে খেতে পারবে এমন একটি দোকান হচ্ছে কোলকাতা কাচ্চি। যারা বিরিয়ানীর অতিরিক্ত তৈলাক্ততা পছন্দ করেন না, তারা নিশ্চিন্তে যেতে পারেন কোলকাতা কাচ্চিতে। কম তেল দিয়েও যে এমন দুর্দান্ত বিরিয়ানী রান্না করা সম্ভব, তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত এই কোলকাতা কাচ্চি। পুরান ঢাকার ২৩৫ টাকা দামের এই বিরিয়ানী খেয়ে ভালো লাগেনি এমনটা কখনোই হওয়া সম্ভব না।
গ্র্যান্ড নবাবঃ
দোকানের নামের মতই এদের বিরিয়ানীও ঢাকাই বিরিয়ানীর মধ্যে সেরা, নবাবের মতই। এদের মত এত জুসি আরো দারুন সৌরভে ভরপুর কাচ্চি বিরিয়ানী আপনি আর কোথাও পাবেন না। শুধু খেতেই নয়, দেখতেও দারুন এই বিরিয়ানীর দাম মাত্র ২৩৫ টাকা প্লেট। এর সাথে যদি ওদের স্পেশাল বাদামের শরবত মুখে দিতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। পুরো অমৃত!
স্টার কাবাবঃ
ধানমন্ডির এই দোকানের অসাধারণ বিরিয়ানী খেতে যেতে হবে একটু আগেভাগেই। নয়ত শেষ হয়ে গেলে আর কপালে জুটবে না। এদের গরুর মাংসের বিরিয়ানী, কাচ্চি বিরিয়ানী আর মুরগী বিরিয়ানী তিনটা আইটেমই এত অসাধারণ! অনেকটা না খেলে মিস করবেন ধরনের। সুতরাং ধানমন্ডি এসে এই বিরিয়ানী মিস করা যাবে না কোনোভাবেই
জমিদারী ভোজঃ
অথেনটিক বিরিয়ানীর স্বাদের মধ্যে জমিদারী ভোজের বিরিয়ানীর খ্যাতিই আলাদা। চমৎকার এই বিরিয়ানী অন্যান্য বিরিয়ানীর মত শুকনো ধরনের না, ঝরঝরে ও মশলাদার। পরিমাণমত চাল, বড় বড় পিসের মাংস আর আলুর সমন্বয়ে তৈরি এই বিরিয়ানী খেতে যেতে হবে আপনাকে পুরান ঢাকার লালবাগে। ১৯০ টাকা দামের এই বিরিয়ানী পেটের সাথে সাথে খুশি করে দেবে আপনার মনকেও।
মন্তব্য করুন