ইদানীং কি আপনার সারাক্ষণ শুয়ে-বসে থাকতেই ইচ্ছে করছে? যে কাজই করতে যাচ্ছেন, মনে হচ্ছে যে করে আর কি হবে? নাকি আপনার এতদিনকার পছন্দের সব জিনিসগুলোর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এক এক করে? সাবধান! তাহলে হয়তো আপনি ডিপ্রেশনের শিকার হয়েছেন!
ডিপ্রেশন কিন্তু কোনো কাজের কথা নয়। আর আপনি ডিপ্রেসড বলে হাত-পা গুটিয়ে থাকাও একদম ভালো লক্ষণ নয়। তার থেকে হাত-পা ঝেড়ে উঠুন, আর দেখুন ডিপ্রেশন থেকে বেরোনোর উপায়।

১. নিজের রুটিন বানান
‘UCLA’-এর ডিপ্রেশন রিসার্চ অ্যান্ড ক্লিনিক প্রোগ্রামের ডিরেক্টর মনোবিশারদ ডাক্তার ইয়ান কুক মনে করেন ডিপ্রেশন থেকে বেরোনোর প্রথম ধাপ হল নিজের একটা প্রপার রুটিন বানানো। জানেনই ডিপ্রেশনে থাকলে সারাদিন কিছুই করতে ইচ্ছে করে না। তাই এই অবস্থা থেকে বেরোনোর জন্য সারাদিন কী কাজ করবেন না করবেন তার একটা চার্ট বানিয়ে নিন। তারপর ওই রুটিনটাই সারাদিন মেন্টেন করার চেষ্টা করুন। জানি খানিক কষ্ট হবে। ইচ্ছে হবে না। কিন্তু তাও খানিক চেষ্টা করুন না। দেখবেন গোটা একটা দিন রুটিন মেনে চললে নিজেরই খানিক ভালো লাগছে।
২. নিজের লক্ষ্য স্থির করুন
আপনার যখন নিজে থেকে কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না, তখন বুঝতেই পারছেন আপনার এখন বাইরে থেকে পুশ ব্যাক দরকার। তাই নিজে সারাদিনে কী করবেন, কতটা করবেন তার একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করুন। প্রথমে খানিক ছোট লক্ষ্যই না হয় স্থির করুন। তারপর বড় লক্ষ্যের দিকে এগোন। লক্ষ্য থাকলেই দেখবেন আপনার ইচ্ছেও আবার ফিরে আসছে।
৩. ব্যায়াম করুন

ফিট অ্যান্ড হেলদি থাকতে সারাদিন ব্যায়াম তো করবেন। কিন্তু আপনি যদি রোজ সকালে উঠেই ব্যায়াম করেন, তাহলে দেখবেন সারাদিনই কেমন ফুরফুরে লাগে! ব্যায়াম কিন্তু আদতে আমাদের শরীরে ‘ফিল গুড’ কেমিক্যাল এন্ডোরফিনের নিঃসরণ ঘটায়, ফলে ব্যায়ামের পরে আমরা শারীরিক ভাবে তো বটেই, এমনকি মানসিক ভাবেও খানিক চাঙ্গা হয়ে যাই। তাছাড়া নিয়ম করে ব্যায়াম করা কিন্তু আপনাকে পজিটিভ ভাবে ভাবতেও সাহায্য করে। তাই সকালে উঠে খানিক মর্নিং ওয়াক করা বা খানিক জগিং-কেই নাহয় আপনার ডেলি রুটিনে অ্যাড করে ফেলুন।
৪. ঠিকঠাক খাবার খান
মানছি ডিপ্রেশন ঠিক করার জন্য কোনো ম্যাজিক ডায়েট নেই। কিন্তু এমনিতেই ডিপ্রেশন হলে একটু বেশী খেয়ে ফেলার প্রবণতা আমাদের দেখাই যায়। তাই সেটা আটকাতে কী খাচ্ছেন, সেটার খেয়াল রাখুন। আর কুক কিন্তু বলছেন, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার, যেমন স্যামন, টুনা, আর ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার, যেমন পালং শাক, অ্যাভোকাডো ডিপ্রেশন কমাতে নাকি খানিক সাহায্য করে।
৫. ঠিক মতো ঘুমোচ্ছেন তো?
কেউ ডিপ্রেসড অবস্থায় সারাদিন শুয়ে থাকেন, কেউ আবার ঘুমোতেই পারেন না। এই বেশী ঘুমোনো বা না ঘুমোনো—দুটোই কিন্তু ডিপ্রেশনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই আপনি ঠিকমতো ঘুমোনোর অভ্যেস করুন। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যান, আবার সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। ঘুমোনোর আগে টি.ভি. বা মোবাইল, ল্যাপটপ না ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন, কারণ ওতে ঘুমের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। আর হ্যাঁ, ঘুম না এলেও কিন্তু চোখ বুজে শুয়ে থাকবেন। দেখবেন ঘুম কোনো এক সময়ে ঠিকই এসে গেছে।
৬. দায়িত্ব নিন
ডিপ্রেসড হলে আপনার স্বাভাবিক প্রবণতাই থাকবে কিন্তু দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া। তাই এই কাজটি ভুলেও করবেন না। দায়িত্ব নিন। বরং খানিক বেশী করেই নিন। ঘাড়ে যদি কাজের চাপ আর দায়িত্ব থাকে, তাহলে দেখবেন ডিপ্রেশনের মোকাবিলা করা খুব সহজ হয়ে উঠছে।
৭. খারাপ বা নেগেটিভ চিন্তা করবেন না
ডিপ্রেশন একটা মানসিক সমস্যা। তাই একে মোকাবিলা করাটাও খানিক মানসিকই হবে। ডিপ্রেশনের সময় গুচ্ছের বাজে চিন্তা মাথায় আসে। আমার কিছু হল না, বা আমি বেকার—এই ধরণের অনেক চিন্তাও আসে। যখনই দেখবেন এসব ভাবছেন, যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন যে আপনার ভাবনাটা ঠিক কিনা। মনে রাখবেন, খারাপ চিন্তাকে যত দূরে সরাতে পারবেন, ততই আপনি ডিপ্রেশনকেও দূরে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন।
৮. নিজের ভালো লাগার কাজ করুন
সারাদিন মন মরা হয়ে বসে না থেকে নিজের যা ভালো লাগে, তাই খানিক করার চেষ্টা করুন না। ধরুন সারাদিন বাড়ির সবার সাথে বসে মনের আনন্দে হাসুন, আড্ডা দিন। বন্ধুদের সাথে গল্প করুন। অনেকদিন ধরে ভাবছেন হয়তো মিউজিয়াম বা কোথাও যাবেন, কাজের চাপে যাওয়া হয়নি। এবার সময় করে সেটা ঘুরে আসুন। নিজের পছন্দের বই পড়ুন, মুভি দেখুন, বা রান্নাবান্না করুন। মোদ্দা কথা, যা ভালো লাগে সেটাই করুন। আনন্দে, ফুর্তিতে, মজায় থাকুন। দেখবেন, ডিপ্রেশন আপনার আনন্দের চোটেই পালিয়ে যাচ্ছে।
১০. ডাক্তার দেখান
ওপরে যা যা বললাম, তা তো করবেনই। কিন্তু সমস্যা যদি গুরুতর হয়? না কমে? তাহলে কিন্তু আর দেরী করবেন না। ভালো কোনো সাইকায়াট্রিস্টকে দেখান। কাউন্সেলিং করান। সাইকায়াট্রিস্টকে দেখানো মানে কিন্তু একদমই আপনি পাগল নন। অনেকে এই ভেবে সাইকায়াট্রিস্টকে দেখাতে চান না। ডাক্তারের কথা মতো চলুন। দেখবেন ডিপ্রেশনের হাত থেকে আপনি বেরিয়ে এসেছেনই।
আর হ্যাঁ, ডিপ্রেশনের সময় কাছের মানুষদের ডিপ্রেসড মানুষটির পাশে থাকা কিন্তু খুব দরকার। তাই আপনার প্রিয়জন যদি ডিপ্রেসড হয়ে পড়েন, তাহলে তাঁর পাশে থাকুন, তাঁর সাথে কথা বলে তাঁর সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন, ভরসা যোগান। দেখবেন তিনিও ভরসা পাচ্ছেন আর ডিপ্রেশনকে কাটানোরও চেষ্টা করছেন।
মন্তব্য করুন