দুর্গাপুজো মানেই সকাল-বিকেল জমিয়ে প্যান্ডেল হপিং করা। পুজোর এই বিশেষ দিনগুলিতে সবাই চান গ্ল্যামারাস মেকআপে কাছের মানুষটির মাথা ঘুরিয়ে দিতে। ফলে নতুন জামাকাপড়ের সঙ্গে মানানসই মেকআপ এইসময় মাস্ট। কিন্তু কীভাবে করবেন দিনের বেলার হালকা মেকআপ? অক্টোবর মাসের রোদ আর গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কীভাবে এমন মেকআপ করা যায়, যেখানে হাজার প্যান্ডেল হপিংয়েও ঘেঁটে যাবে না আপনার সাধের মেকআপ, আর সারাদিন ঘোরার পরেও স্কিন থাকবে গ্লোয়িং? আজকের লেখায় রইল দিনের বেলায় পারফেক্ট ডে-টাইম মেকআপের স্টেপ বাই স্টেপ গাইডেন্স।
১. প্রাইমার অ্যাপ্লাই করুন
যে-কোনও মেকআপের ক্ষেত্রেই মুখে প্রাইমার অ্যাপ্লাই করা মাস্ট। এর জন্যে আপনি ‘ল্যাকমে’ অ্যাবসোলিউট ব্লার পারফেক্ট মেকআপ প্রাইমার ব্যবহার করতে পারেন। এই প্রাইমারে হালকা গোলাপি একটা টোন থাকে, যার ফলে মুখকে ফ্রেশ দেখায়।
২. গ্লোয়িং এফেক্ট?
পুজোর সময় মুখে দীর্ঘস্থায়ী গ্লোয়িং এফেক্ট কে না চায়! এর জন্য সামান্য ‘প্যাক’ স্টর্বিং ক্রিম নিয়ে গোটা মুখে ভাল করে আঙুল দিয়ে লাগিয়ে নিন। এটি আপনার স্কিনের উপযোগী কোনও শেডে কিনতে পারেন। এই ক্রিমটি দামেও অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে দামেও কম পড়বে।
৩. দাগ-ছোপ ভ্যানিশ!
এরপরের ধাপে কনসিলার দিয়ে মুখের সমস্ত দাগ, ছোপ ঢেকে ফেলার পালা। এর জন্যে ‘এল.এ.’ গার্ল প্রো কনসিল এইচডি (লাইট ট্যান) ব্যবহার করতে পারেন। মুখের ত্বকের যে-সমস্ত স্থানে ডার্ক প্যাচ রয়েছে বা কোনও দাগ, ছোপ রয়েছে, সেগুলিকে ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে এই কনসিলারের জুড়ি নেই। এমনকী চোখের তলার ডার্ক সার্কেলও খুব সুন্দরভাবে ঢেকে ফেলতে সাহায্য করে এই কনসিলার। কনসিলার লাগানোর পর আপনার পছন্দের কোনও কনসিলার ব্রাশের সাহায্যে সেটি স্কিনের সঙ্গে সমানভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
কনসিলার সেট করার জন্য ‘মেবিলিন নিউইয়র্ক’-এর ফিট মি লুজ ফিনিশিং পাওডার কাজে লাগাতে পারেন। একটা ব্রাশের সাহায্যে অল্প-অল্প করে পাওডার নিয়ে চোখের তলা, আপার আই, নাক, চিবুক ইত্যাদি অংশের কনসিলারকে সেট করে নিন। ডে-টাইম মেকআপের ক্ষেত্রে সাধারণত ফাউন্ডেশন না লাগালেও চলে। সেক্ষেত্রে এই পাওডারটি অনায়াসে ব্যবহার করুন।
৪. ঘন ভুরুর রহস্য

ঘন ভুরু এখন সব ফ্যাশনেই ইন। তাই আপনার ভুরু যদি সেরকম ঘন না হয়, তাহলে ‘নিক্স’ প্রফেশনাল মেকআপ মাইক্রো ব্রো পেনসিল-এর সাহায্যে এঁকে নিতে পারেন। প্রথমে ভুরুটি একটি শেপে এঁকে নিয়ে তারপর রং করে নিন। এতে দেখতে ভাল লাগবে। এবার যে-কোনও সেটিং পাওডারের সাহায্যে ভুরুটি সেট করে নিন। এতে ভুরুদু’টি দেখতে ন্যাচারাল লাগবে এবং বেশি সময় ধরে সেট হয়েও থাকবে।
৫. গর্জাস আই মেকআপ
দিন হোক কি রাত, পুজোর সময় আই মেকআপ ভাল করে না করলে চলে? বিশেষ করে দিনের বেলা যেহেতু আমরা মুখে হালকা মেকআপ করব, ফলে সেক্ষেত্রে চোখের মেকআপটি গর্জাস করা দরকার। এর জন্যে ‘ফেসেস কানাডা’-র আলটাইম প্রো এ ম্যাট মেড ইন হেভেন ইঙ্ক আইলাইনারের সাহায্যে চোখের উপরের পাতার মাঝামাঝি পর্যন্ত এঁকে নিন। এবার ‘ল্যাকমে’ ৯ টু ৫ আই কালার কোয়ার্টেট আই শ্যাডোর থেকে ‘মিস্টিক নুড’ শেডটি (বা আপনার স্কিন টোনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যে-কোনও আই শ্যাডো) বেছে ভাল করে অ্যাঙ্গুলার ব্রাশের সাহায্যে আপার আই ল্যাশে লাগিয়ে নিন।
এটি অ্যাপ্লাই করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন না করলে কিন্তু আপনার গোটা মেকআপটিই ঘেঁটে যেতে পারে। ব্ল্যাক আইলাইনারের সামান্য উপর থেকে আই শ্যাডোটি অ্যাপ্লাই করুন। তবে ব্রাশ দিয়ে ড্র্যাগ করবেন না একেবারেই। এক্ষেত্রে আপনার চোখে খুব সুন্দর একটি স্মাজি লুক দেবে। এবার লোয়ার আই ল্যাশেও ব্রাশের সাহায্যে এই একই শেডের আই শ্যাডো লাগিয়ে নিয়ে স্মাজ করে নিন।
৬. হাইলাইটার
এবার চোখের ইনার কর্নার আর ব্রো বোন হাইলাইট করার পালা। এর জন্যে ‘ফেসেস কানাডা’র আলটাইম প্রো ইলিউমিনেটিং পাওডার ব্যবহার করতে পারেন। অপেক্ষাকৃত একটি ছোট ব্রাশের সাহায্যে চোখের ইনার কর্নার ও ব্রো বোন হাইলাইট করে নিন।
৭. স্মাজি আই চাই?
‘মেবিলিন নিউইয়র্ক’-এর ল্যাশ সেনসেশনাল ওয়াটারপ্রুফ মাস্কারা ব্যবহার করে এবার আই ল্যাশে লাগিয়ে নিন। এটি শুকিয়ে যাওয়ার পর আবার আর একটি কোট তার উপর দিয়ে নিন। এর ফলে আপনার আই ল্যাশগুলি ঘন লাগবে। এবার ‘কে’ বিউটি ২৪ হাওয়ার কাজল-স্পেড-এর সাহায্যে চোখের আপার ওয়াটারলাইনে ও অর্ধেক লোয়ার ওয়াটারলাইনে অ্যাপ্লাই করে নিন। দেখবেন আপনার চোখে কি সুন্দর একটি স্মাজি লুক এসেছে।
৮. স্কিনের সঙ্গে ব্লেন্ডিং মাস্ট
এবার ‘ল্যাকমে’ অ্যাবসোলিউট ফেস স্টাইলিস্ট ব্লাশ ডুয়োজ-এর কোরাল ব্লাশ শেডটি বেছে গালে, চিবুকে, নাকে হালকা করে ব্রাশের সাহায্যে অ্যাপ্লাই করুন। আপনার স্কিন টোনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, এমন যে-কোনও ব্লাশই এক্ষেত্রে নিশ্চিন্তে কাজে লাগাতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, ব্লাশ যেন ত্বকের সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে ব্লেন্ড হয়ে যায়।
তারপর ‘ফেসেস কানাডা’র আলটাইম প্রো ইলিউমিনেটিং পাওডারের সাহায্যে গাল, চিবুক, নাক, কপালে ভাল করে লাগিয়ে ব্রাশের সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিন। এই হাইলাইটার আপনার মুখকে খুব সুন্দর শার্প একটি লুক দেবে। মনে রাখবেন, মেকআপ যাই করুন না কেন, ভাল করে স্কিনের সঙ্গে ব্লেন্ড না করলে কিন্তু সেটা দেখতে খুব বিচ্ছিরি লাগবে।
৯. মানানসই লিপ কালার
মেকআপের শেষ ধাপে লিপ কালার মাস্ট। এর জন্যে আপনি ‘প্যাক’ রেট্রো ম্যাট গ্লস- ৩৮ পশ শেডের লিকুইড লিপ কালার ব্যবহার করতে পারেন। তবে আপনার পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং যে-কোনও শেডের লিপ কালারই ব্যবহার করতে পারেন। তবে যেহেতু ডে-টাইম মেকআপের কথা আমরা বলছি, তাই লিপ কালার বেশি ডিপ না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
১০. দীর্ঘস্থায়ী মেকআপের টোটকা
এবার ‘নিক্স’ প্রফেশনাল মেকআপ লং লাস্টিং মেকআপ সেটিং স্প্রে ডিউয়ি ফিনিশ-এর সাহায্যে স্প্রে করে মেকআপ সেট করে নিন। এর ফলে সারাদিন ঘুরেও দেখবেন আপনার মেকআপ গলে যাবে না।
ব্যস, এবার আপনার মেকআপ রেডি! এই মেকআপের একটা মজার ব্যাপার হল, যে-কোনও ইন্ডিয়ান আউটফিটের সঙ্গেই এই সিম্পল আর গ্ল্যামারাস মেকআপ খাপ খেয়ে যাবে। তাহলে আর দেরি না করে আমাদের স্টেপ বাই স্টেপ গাইডেন্সের সাহায্যে খুব জলদি করে ফেলুন এই পারফেক্ট ডে-টাইম মেকআপ আর এবার পুজোয় চমকে দিন আপনার পার্টনারকে।
মন্তব্য করুন