আধুনিক জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়েছে প্রযুক্তির ধারা ও কার্যকারিতা। বিজ্ঞানের কল্যানে একের পর এক আবিষ্কারে আমাদের জীবন হয়েছে সহজ ও সুন্দর। এদিক দিয়ে নিজের গৃহস্থালির সাজসজ্জা ও ব্যতিক্রম নয়। ব্যস্তজীবনে সময়ের বড়ই অভাব। সেই ঘাটতি মেটাতেই চটজলদি সমাধান ওয়াশিং মেশিন যা আমাদের যন্ত্রসভ্যতার এক অভিনব সংযোজন।
জনসাধারণের মধ্যে থাকা অহেতুক ভ্রান্ত ধারণা:
- ওয়াশিং মেশিন আমাদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এলেও একে ঘিরে কয়েকটি মিথ, ভুল ধারণা মানুষের মধ্যে বর্তমান।
- ওয়াশিং মেশিনে কাপড় এর সুতো আলগা হয়ে যায় এবং লিনেন বা পলিয়েস্টার বা রেশম ইত্যাদি কাপড়ের মেটিরিয়াল এ ক্ষতি হয়।
- একসাথে অনেকবেশি জামাকাপড় কাচা যায়না।
- যেহেতু বৈদ্যুতিন যন্ত্র তাই ইলেক্ট্রিক বিল আসবে মাত্রাছাড়া।
- সাবান এর পরিবর্তে পাউডার ডিটারজেন্ট এর ব্যবহার হয় বলে তাতে ময়লা ছাড়তে সমস্যা হয়।
- উপরের প্রত্যেকটি ধারণা ভুল। বিশেষ করে কাপড় খারাপ হওয়ার ভাবনা একেবারেই মিথ। তবে হ্যাঁ সঠিক ভাবে মেশিন না চালালে সেক্ষেত্রে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কাপড়। তো সেটা ব্যবহারকারীর দোষ মেশিনের না।
ব্র্যান্ড না বাজেট কোনদিকে ঝুঁকবেন?
- শ্রমের সাশ্রয় ও সাধ্যের মধ্যে দাম এই দুই-ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওয়াশিং মেশিন কেনার ক্ষেত্রে।আপনার চাহিদা অনুযায়ী সঠিক ওয়াশিং মেশিনটি নির্বাচন করলে তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হেসেখেলে চলে যাবে।
- নানারকমের ব্র্যান্ড বাজারে রয়েছে। এইসব ব্র্যান্ডের গোলকধাঁধায় যে প্রশ্নটা আপনার মাথায় চক্কর কাটবে তা হলো বাজেট এবং পারফর্মেন্স।
- প্রয়োজনীয়তা ও বাজেট এর মধ্যে ফিট করবে এরকম কয়েকটি উপযুক্ত ব্র্যান্ড হলো – স্যামসাং, ওয়ার্লপুল, হাইয়ার, এলজি, হিতাচি, ভোল্টাস, প্যানাসনিক ইত্যাদি।
- এখন কথা হলো যা হোক মেশিন কিনলেই তো হলো না।যেটা কিনা ভবিষ্যতে বিদ্যুৎবিল, সার্ভিসিং, সময়ের অপচয় এগুলো করে আপনার জীবন সরল করার পরিবর্তে আপনার কালঘাম ছুটিয়ে ছাড়বে।
- বাজারচলতি ব্র্যান্ডগুলোর সহজলভ্যতার সাথে সাথে বাইরের দেখনদারীর ব্যাপারটি থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। কোন ব্র্যান্ডে আছে টাম্বল কেয়ার টেকনোলজি তো কোন ব্র্যান্ডে এনএফসি আবার কোনটায় রয়েছে থ্রি ডি সেন্সর।
ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় যা যা খেয়াল রাখবেন:
আমরা কিছু বিষয় খুব সহজেই এড়িয়ে যাই এবং পরে সেই সংক্রান্ত গন্ডগোল বাঁধলে দোষারোপ করি মেশিন কেই। কিন্তু কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখুন দেখবেন আপনার অভিজ্ঞতা পাল্টে যাবে ওয়াশিং মেশিনকে কেন্দ্র করে।
১) টপ লোডার ওয়াশিং মেশিন
ভালো দিক:
- এটি দ্রুত কাপড় কাচার জন্য খুবই বহুল প্রচলিত।
- দাম কম হওয়ার কারণে জনপ্রিয়তা বেশি।
- হাল্কা হওয়ার পোর্টেবিলিটি এর সুবিধে বেশি পাওয়া যায়।
খারাপ দিক:
- যত্ন নিয়ে কাপড়চোপড় ধোয় না।ফলে কাপড়ে স্টেন বা প্যাচ লেগে যাবার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
- বেশি জল খরচ করে।
- গরম জলের ব্যবহার বেশি করে বলে বিদ্যুৎ এর ব্যবহার বেশি হয়।
২) ফ্রন্ট লোডার ওয়াশিং মেশিন
ভালো দিক:
- বর্তমানে ফ্রন্ট লোডার কেনার চলই বেশি কারণ এটি যথেষ্ট যত্ন নিয়ে কাপড় ধুয়ে ফেলে এবং তার গুণমান ধরে রাখে।
- কম জলের ব্যবহার হয়।
- অল্প ডিটারজেন্ট লাগে কিন্তু ময়লা ওঠে পুরো।
- কম জায়গার মধ্যে ফিট করে যাওয়ায় ঘরের অন্যান্য আসবাবের সাথে মানিয়ে নিতে পারে।
খারাপ দিক:
- সময় বেশি লাগে। কখনো তো তিন ঘণ্টার উপর লাগে।
- ওজনে ভারী হয় তাই যেখানে সেখানে সরাতে বেগ পোহাতে হয়।
৩) ওয়ারেন্টি
- আমরা এসি কেনার সময় যেমন কম্প্রেসার এর ওয়ারেন্টি চেক করেনি, ঠিক তেমনি ওয়াশিং মেশিন এর ক্ষেত্রেও ওয়ারেন্টি কিন্তু খুব ভাইটাল ভূমিকা পালন করে।
- ওয়ারেন্টির মেয়াদ সাধারণত ৫-১০ বছর অব্দি হতে পারে। এছাড়া দেখবেন সার্ভিসিং কেয়ার, স্পেয়ার পার্টস এর লংজিবিটি কেমন।
৪) ধারণক্ষমতা
- যেটা অবশ্যই দেখবেন তা হলো ওয়াশিং মেশিন এর ধারণক্ষমতা।
- সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড মেশিন এর ধারণক্ষমতা ৬-৯ কেজির ভেতরে হয়ে থাকে।
- কিছু মেশিন এর ধারণ এর শক্তি আবার কিউবিক ফিট এও দেয়া থাকে।
৫) স্পিনিং স্পিড
- ওয়াশিং মেশিন এর চাকার ঘূর্ণন ক্ষমতা যেন ৮০০-১২০০আরপিএম এর মধ্যে হয় দেখবেন।
- কারণ এটাই মাপকাঠি যে আপনার কাপড়ে কত দ্রুত লাগবে জল।
এছাড়াও ওভারফ্লো কন্ট্রোল, টেম্পারেচার কন্ট্রোল, ফোম কন্ট্রোল এগুলোর দিকে দৃষ্টি দেবেন আর অটোমেটিক রিস্টার্ট ফিচারটি রয়েছে কিনা অবশ্যই দেখে নেবেন।
কিভাবে ভালো রাখবেন ওয়াশিং মেশিন
- অসমতল জায়গার ওপর রাখবেন না ওয়াশিং মেশিন। সমতল জায়গায় প্লেস করুন।
- মেশিনে গন্ধ ছাড়লে পাউডার বা ভিনিগার দিয়ে ওয়াশ করুন।
- একসাথে বেশি কাপড় না দিয়ে অল্প অল্প করে দিয়ে কাচুন।
- জলের সাথে সংযোগের জায়গাটি নিয়মিত সাফ করুন।
- ভালোমানের ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ যথাসময়ে বন্ধ করুন।
মন্তব্য করুন