একদম ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের কার্টুন দেখার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বাচ্চারা ৬ মাস বছর বয়স থেকে কার্টুন দেখা শুরু করে এবং ২-৩ বছরের মত বয়সের মধ্যে বাচ্চারা কার্টুনের নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই টিভিতে কার্টুন দেখার নেশা কিন্তু একদমই ভালো না। অনেক মায়েরাই বাচ্চাদের মন ভোলানোর জন্য কার্টুনের সাহায্য নিয়ে থাকেন। এই অভ্যাস কিন্তু বাচ্চাদের মানসিক বিকাশেরও ক্ষতি করতে পারে। কিভাবে? চলুন আজ আমরা জেনে নি যে কিভাবে কার্টুন বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে ঘাটতি তৈরি করে।
১.চোখের জন্য খারাপ
কার্টুন দেখার জন্য দীর্ঘক্ষণ টিভি বা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে বাচ্চাদের চোখে প্রচন্ড ভাবে চাপ পরে। একটানা টিভি দেখার অভ্যাস করলে সেইটা আস্তে আস্তে বাচ্চাদের দৃষ্টি কমিয়ে দেয়। বাচ্চারা চশমা পড়তে একদমই পছন্দ করে না তাই তাদের চশমা থেকে দূরে রাখতে হলে আমাদের উচিত তাদের কার্টুন দেখার অভ্যাসের থেকে দূরে রাখা।
২. বাচ্চাদের শারীরিক ব্যায়ামে ঘাটতি ঘটে
বাড়ন্ত শিশুদের শারীরিক ব্যায়াম এবং চলাফেরা খুবই প্রয়োজন। কার্টুনের নেশা হয়ে গেলে বাচ্চারা আর বাড়ির বাইরে বেরোতে চায় না। অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে বাইরে বেরোলে বাচ্চারা প্রকৃতির সৌন্দর্যতা অনুভব করতে পারে এবং এই অনুভূতি বাচ্চাদের প্রকৃতির আরো কাছে নিয়ে যায়। শারীরিক বিকাশে ঘাটতি কিন্তু মানষিক বিকাশেও অবনতিও ডেকে আনে। বাচ্চারা ঘরেই বসে টিভি বা মোবাইলে কার্টুন দেখলে তাদের শারীরিক পরিশ্রম না হওয়ার ফলে তাদের বেড়ে উঠতেও বাধা পড়ে।
৩. বাচ্চারা কার্টুন দেখতে না পেলে খেতে চায় না
অনেক মায়েরা বাচ্চাদের কার্টুন দেখিয়ে মন ভুলিয়ে খাওয়ান। বাচ্চাদের এই অভ্যাস করানো কিন্তু একদমই উচিত না কারণ অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর দেখা যায় যে তারা কার্টুন না দেখতে পেলে তারা খেতেই রাজি হচ্ছে না। এর ফলে বাচ্চাদের খাওয়ার অভ্যাসও চলে যায়।
৪. বাচ্চাদের সামাজিক জীবনেও প্রভাব পরে
সারাদিন বাচ্চারা কার্টুন দেখলে বাচ্চারা একা থেকে কার্টুন দেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।এর ফলে তারা নতুন বন্ধু পাতানো বা অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতেও চায় না।অন্য কোনো বাচ্চাদের সাথে দেখা বা বন্ধুত্ব না করলে বাচ্চারা অন্যদের সাথে খেলার আনন্দই বুঝতে পারেনা।আগেও যেমন লিখেছি যে বাচ্চারা অন্যদের দেখে শেখে। অন্য বাচ্চাদের সাথে যদি দেখাই না হয় তাহলে অন্য বাচ্চাদের থেকে নতুন কিছু শিখতে পারে না শিশুরা। এর ফলে শিশুদের মানসিক বিকাশেও ঘাটতি ঘটে।
৫. বাচ্চাদের ভাষারও অবনতি ঘটে
অতিরিক্ত কার্টুন দেখলে বাচ্চারা তাদের প্রিয় কার্টুনের চরিত্রদের মতোই কথা বলতে শেখে।কোনো কথার উত্তর দিতে হলে তারা তাদের কার্টুনের চরিত্রদের মতো করে উত্তর দেয়। অনেক সময় তারা বিভিন্ন শব্দ করেও উত্তর দেয় যা তারা কার্টুন দেখে রপ্ত করে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার থেকে এই অভ্যাসটি বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের অবনতি ঘটায়।
তাহলে এইবার কিছুটা ধারণা করা গেছে যে কার্টুন শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষতি ঘটায়।কার্টুন দেখার আরেকটি ক্ষতিকারক দিক হল কার্টুনের অনেক দৃশ্যতে হিংসা এবং মারপিট দেখানো হয়।
বাচ্চারা কার্টুন দেখে মারপিট করা শেখে। তারা অভিনয় এবং আসল মারপিটের পার্থক্য বোঝে না। অনেক সময় কার্টুনে দেখায় যে একটি চরিত্র আরেকটি চরিত্রকে মারার পরও পরের সিনেই সব চরিত্র আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এর ফলে বাচ্চারাও ভাবে যে মারপিট করলেও তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।
কার্টুনের এই প্রভাবটি মারাত্বক।তাই অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের কার্টুন দেখার অভ্যাস আস্তে আস্তে করে কমিয়ে দেওয়া। বাচ্চাদের কার্টুন দেখার অভ্যাস একদমই উপকারী না। বরং এই অভ্যাস অজান্তে বাচ্চাদের অনেক ক্ষতিই করে দেয়। তাই আমাদের উচিত বাচ্চাদেরকে বাড়ির বাইরে নিয়েও গিয়ে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলানো এবং ছোটদের ভালো গল্পের বই পড়ানোর অভ্যাস করানো যাতে তাদের মানসিক বিকাসে উন্নতি হয়।
মন্তব্য করুন