অন্ধকারটা বেশ ঘন, মেঘের আড়াল থেকে ছেঁড়া ছেঁড়া চাঁদটা দেখা যাচ্ছে। কুকুরটা কাঁদা বন্ধ করে দিয়েছিল, আবার শুরু করল। ছোট থেকে শোনা, কুকুরের কান্না নাকি অশুভ। প্রায় চল্লিশ-পয়তাল্লিশ মিনিট পর সম্পূর্ণা এল। চোখে মুখে ভয় নয়, কিন্তু একটা অদ্ভুত আশ্চর্য কিছু দেখলে যেমন হয় সেইরকম ভাব। যেন অনেকদিন পর এমন কিছুর সন্ধান পেয়েছে যা চাইছিল। খানিকটা হাঁপাতে হাঁপাতেই আসছিল। ওকে এভাবে আসতে দেখে ধ্রব জিজ্ঞাসা করলো, ‘কী রে কী হয়েছে? এইরকম হাপাচ্ছিস কেন? আর অনি কই!’
সম্পূর্ণাঃ ‘একটু ওদিকে চ, একটা জিনিস দেখাব’।
ধ্রবঃ ‘সে যাচ্ছি, কিন্তু, অনি কই? কী হয়েছে কিছু তো বল’।
সম্পূর্ণাঃ ‘অনিকেত ওখানেই আছে, তোরা চ। তিতাস হাঁটতে পারবি তো?’
তিতাসঃ ‘হুম, চ। কিন্তু, কী হয়েছে কিছুই বলছিস না। বুঝতে পারছি না কিছু, টেনশন হচ্ছে’।
সম্পূর্ণা যেখানে ওদের নিয়ে গেল সেটা একটা কুয়োর ধার। বিশাল বড় কুয়ো, এখন চারিদিকে আগাছায় ভরে গেছে। কপিকল-টল সব ভেঙ্গে গেছে। শুধু একটা বালতি রাখা আছে সামনে। দেখে মনে হয় রোজ ব্যবহার করা হয় এটা। কিন্তু আশ্চর্যের যেটা সেটা হল কুয়োটা না, কুয়োটার পাশে থাকা ছোট্ট একটা মন্দির, শিবমন্দির। এত বড় বাড়িতে এত জায়গা থাকতে পিছনদিকে এই মন্দিরটা কেন! দীর্ঘদিন কেউ এই শিবমন্দিরে পুজো করেনি। শুকনো পাতায় শিবলিঙ্গটা প্রায় ঢেকেই গিয়েছিল। গোটা বাড়ির মতো মন্দিরটারও একই জীর্ণ দশা। খানিক দূর থেকে অনিকেতকে আসতে দেখে ধ্রুব বলল, ‘কী রে এখানে তোরা কী করছিলি বলত এতক্ষন ধরে? তারপর সম্পূর্ণা গেল হাঁপাতে হাঁপাতে, আমাদের চিন্তা হচ্ছিল। আর ওটা কি তোর হাতে, শাবল? কী হবে?’
অনিকেতঃ ‘এখন এত কথা বলিস না ভাই। যা বলছি কর। এই জায়গাটা খোঁড়’।
তিতাসঃ ‘কী যে ভুলভাল বকিস! খামকা খুঁড়তে যাবে কেন? কী ব্যাপার বলত? এর মধ্যেই মাল টেনে বসে আছিস নাকি! দিস ইস নট ফেয়ার ভাই’।
অনিকেতঃ ‘এখন এসব মজা করিস না। শুধু জায়গাটা খুঁড়তে হবে এক্ষুনি। খুঁড়ে ফেল না ভাই’।
খোঁড়া শুরু হল। ধ্রবই খুঁড়ছিল। রাগে, বিরক্তিতে, ক্লান্তিতে ধ্রব কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। তিতাস গজগজ করছে আর বলছে, ‘কী যে করছিস কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। এভাবে একদম মজা আসছে না। কোনো প্ল্যান থাকলে একসঙ্গে করতে হত। হঠাৎ করে খুঁড়তে বললি, কেন বললি তাও বলছিস না। এসবের জন্য কী আমরা এসেছি!’
ধ্রব হাঁপাতে হাঁপাতে শাবলটা নামিয়ে বলল, ‘অসম্ভব, আমি আর পারছি না। আর একা আমিই বা করবো কেন!। কী ভাই অনি, এখানে কী গুপ্তধন আছে? আমাকে দিয়ে খাঁটিয়ে নিয়ে ওটা বের করার মতলবে আছ নাকি! তাহলে সে গুড়ে বালি, আমি আর খুঁড়ছি না। ভাগ’।
সম্পূর্ণাঃ ‘না রে ভাই, সে সব নয় রে। আরে তুই খোঁড় না, দেখ। অনিকেতের হাতে ব্যথা করছে খুব’।
ধ্রবঃ ‘সারাদিন তো ব্যথা ছিল না। খানিক আগে অব্দিও ছিল না। এখনি হতে হল! ইয়ার্কি হচ্ছে! ওইসব অজুহাত অন্য জায়গায় দিও। আমি নেই’।
হঠাৎ পিছন থেকে শুকনো পাতার খসখস শব্দ পেয়ে ধ্রব ও তিতাস পিছনে তাকালো। দূর থেকে একটা হাল্কা টর্চের আলো চোখে লাগলো। আলোটা আসতে আসতে যত কাছে আসছে ততই ছায়ামূর্তিগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। খানিক পর তিতাস আর ধ্রব যা দেখল তাতে তাদের চক্ষু ছানাবড়া হবার জোগাড়। দেখল দূর থেকে আসছে অনিকেত, সম্পূর্ণা আর সঙ্গে আরেকটা লোক। তিতাসরা সঙ্গে সঙ্গে সামনে তাকিয়ে দেখল দু’জন নেই। কিছু ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই অনিকেতরা সামনে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘কীরে তোরা এখানে কী করছিস? আর তিতাস তোর পা কেমন আছে! এই দেখ কাকে খুঁজে পেয়েছি- সেই যে বলেছিলাম না একজন থাকেন এখানে, ইনি তিনি, কালীপদ বাবু। কিন্তু তোরা খুঁড়ছিস কেন?’
ধ্রবর থেকে সবটা শোনার পর সম্পূর্ণার তো অজ্ঞান হবার জোগাড়। কালীপদ বাবু বললেন, ‘জায়গাটা খোঁড়া উচিৎ। আমি যা ভাবছি যদি তাই হয় তাহলে এক্ষুনি খোঁড়া উচিৎ। তোমরা দেরী কর না বাবারা’।
অনিকেত আর ধ্রব দ্বিগুন উৎসাহে খুঁড়তে শুরু করলো। উৎসাহ বললে ভুল বলা হয়, বলতে হয় উৎকণ্ঠা, আশঙ্কা আর ভয়ও। এতক্ষণ ওদের যা যা মনে হচ্ছিল না এখন তাই তাই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন কেউ তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে তাদের এই কাজ দেখছে। বারবার মনে হচ্ছে কানের পাশ দিয়ে ঠান্ডা নিঃশ্বাসের স্রোত বয়ে গেল। একটু আগে যা হল তাতে এখন আর কিছুই অবিশ্বাস করার নেই। খোঁড়া শেষ হয়ে এল, খানিক উঁচু মত লাগলো কি একটা ওদের।
ধ্রবঃ ‘শক্ত কী একটা যেন!’
অনিকেতঃ ‘আস্তে আস্তে ধুলো সরিয়ে তুলতে হবে, দাঁড়া’।
কালীপদঃ ‘বাবারা তাড়াতাড়ি তোল। আমি যা ভাবছি যদি তাই হয় তাহলে আজ অনেক দিন পর কবরে যাওয়া ইতিহাস আমাদের সামনে আসবে। দেরী কর না বাবারা; দেরী কর না’।
খুঁড়তে খুঁড়তে যা পাওয়া গেল তা হল দু’টো কঙ্কাল। পাশাপাশি শোয়ানো দু’টো কঙ্কাল। অনেককালের জমানো কথা যেন সাদা রক্তহীন চোখগুলোয় চিকচিক করছে, ঘৃণায়, হয়ত বা পরম মমতায়।
কালীপদবাবু বলতে শুরু করলেন। ঘটনাটা ওনার ঠাকুর্দার বাবার সময়কার, ওনার বয়স এখন তিয়াত্তর বছর। তখন এখানকার জমিদার ছিলেন রুদ্রকান্ত রায়চৌধুরী। ওনার কোন পূর্বপুরুষ ইংরেজদের থেকে নাকি এই জমিদারি পান। শুরুতে যা হয় আর কী! যিনি কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করেন তিনি তো প্রতিষ্ঠার কষ্টটা বোঝেন। তারপর আস্তে আস্তে পরবর্তী প্রজন্ম বিলাসব্যসন দেখতে দেখতে ভাবে হয়ত এটাই সব। এর মূলে যে পরিশ্রম সেটা ভুলে যায়। ভাবে যেন বিলাসিতাতেই তাদের উত্তরাধিকার, পরিশ্রমে নয়। রুদ্রকান্ত এই পরিবারের সেই ভাঙ্গনের কালের উত্তরসূরী। প্রবল দম্ভ, গগনচুম্বী আত্মম্ভরিতা। আর তারই সঙ্গে বংশকৌলীন্যের দাপট। এই বংশকৌলীন্যই তো……’
সম্পূর্ণাঃ ‘কেন, কী হয়েছিল এর জন্য?’।
কালীপদঃ ‘মা, সবই তো হল এরই জন্য। শেষ হয়ে গেল সব। রুদ্রকান্তের দুই ছেলে-মেয়ে ছিল। ছেলেই ছিল বড়, তুহিনকান্ত রায়চৌধুরী। আর মেয়ে সিমন্তিনী। বড় ভালো মেয়ে ছিল। জমিদারের মেয়ে বলে কোনো অহংকার ছিল না। সবার সঙ্গে সমানভাবে মিশত। ছেলে অবশ্য বাপের ধারাই পেয়েছিল। তাই দাদা-বোনে খুব একটা সদ্ভাব ছিল না। সিমন্তিনীর খুব ফুলগাছের শখ ছিল। বংশের একমাত্র মেয়ে, তাই জমিদারবাবু তার সব শখই পূরণ করতেন। হাজার হাজার টাকা খরচ করে দেশী-বিদেশী চারা এনে বাগান বানালেন। আর সেই ফুলের বাগানই কাঁটা হয়ে দেখা দিল এ বংশে।
অনিকেতঃ ‘কেন কী হয়েছিল?’
কালীপদঃ ‘বলছি মা। এত বড় বাগান দেখাশোনা করার জন্য তো মালী দরকার। আগেই মালী ছিল। কিন্তু এবার আরও চার জন মালীকে কাজে বহাল করা হল। মালী রামরতনের সঙ্গে এল তার ছেলে গৌর। বাইশ বছরের ফুটফুটে যুবক, যেমন কর্মঠ তেমনি সৎ চরিত্র’।
তিতাসঃ ‘নিশ্চই এর সঙ্গে সিমন্তিনীর কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল যা জমিদার মানেননি, তাই তো?’
কালীপদঃ ‘ঠিক ধরেছ, কিন্তু, সবটা এতটা সহজ নয় । আরও কথা আছে, সে বড় নোংরা মা’। ধ্রব: ‘কেন, কেন! কী হয়েছিল তার পর?’
কালীপদঃ ‘আসলে সিমন্তিনীর বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল বর্ধমান রাজবাড়ি থেকে। রুদ্রকান্ত তো হাতে যেন চাঁদ পেলেন। আগেই বলেছিলাম যে তাঁর মতো বংশকৌলীন্যর দাপট এই বংশে আর কারোর ছিল না। রাজবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হবে এই লোভ তিনি ছাড়তে পারলেন না। কিন্তু সিমন্তিনী যে ভালোবেসে ফেলেছিল গৌরকে। সে কী কোন অন্যায় করেছিল বল তোমরাই’। সম্পূর্ণাঃ ‘তারপর?’
কালীপদঃ ‘তারপর এল সেই ভয়ঙ্কর দিনটা। সেদিন সিমন্তিনীকে রাজবাড়ি থেকে আশীর্বাদ করতে আসার কথা। গোটা গ্রাম সেজে উঠেছে আলোয়। বাড়ির সব ফুল উজার করে সাজানো হয়েছিল এই প্রাসাদ। সেদিন সন্ধ্যেবেলা আশীর্বাদের সময় থেকেই সিমন্তিনীকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না, গৌরকেও। শেষে তাদের পাওয়া গিয়েছিল আমাদের এই চন্ডী মন্দিরে’।
ধ্রব: ‘আজ যেখানে মেলা হচ্ছে?’
কালীপদঃ ‘হ্যাঁ। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল দুজনে। কিন্তু রুদ্রকান্ত লোক পাঠিয়ে তাদের নিয়ে এসেছিলেন বাড়িতে। কিচ্ছু বলেননি তাদের। একইসঙ্গে একঘরে থাকতে দিয়েছিলেন। শুধু সেদিনের রাতের পর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি’।
তিতাসঃ ‘কিন্তু মন্দিরে গেছে জানা গেল কী করে?’
কালীপদঃ ‘খুব একটা কষ্ট করতে হয় নি, জানাই ছিল ওখানে গেছে। মণিমালাই বলে দিয়েছিল জমিদারবাবুকে যে সিমন্তিনীরা কোথায় গেছে’।
কোথাও এতটুকু আলো নেই। টর্চের আলোগুলো বড় চোখে লাগছিল বলে একটা ছাড়া সবগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। আসলে জম্পেস করে ভূতের গল্প তো কেউ শুনতে বসেনি এরা। এক নির্মম ইতিহাস আজ এদের কাছে নিজেকে খুলছে। হাল্কা হাল্কা হাওয়া দিচ্ছে। কুকুরটা বিনিয়ে বিনিয়ে মাঝে মাঝে এখনও কেঁদে উঠছে।
অনিকেতঃ ‘এই মণিমালা আবার কে?’
কালীপদঃ ‘কালনাগিনী। এই একজনের জন্যই সব শেষ হয়ে গেল। মণিমালা রুদ্রকান্তের বোনের মেয়ে, মানে সিমন্তিনীর পিসতুতো বোন। সীমন্তিনীরই বয়সী, কিন্তু সিমন্তিনীর থেকে একদম আলাদা। উদ্ধত, কাউকে সম্মান করত না, আর……’
তিতাসঃ ‘আর?’
কালীপদঃ ‘আর নষ্ট চরিত্র। কী করেছিল জানো! বড় লজ্জার কথা সে মা। সে নাকি বারবার গৌরকে তার সাথে রাত কাটাবার প্রস্তাব দিয়েছিল। রাজি হয়নি গৌর। রাক্ষুসীর এতই শরীরের ক্ষিদে ছিল যে অনেকসময় নিজেই নাকি তার ঘরে চলে যেত, জোর করত গৌরকে। কিছু বলতেও পারেনি গৌর কাউকে, জমিদারের বোনের মেয়ে বলে কথা। সিমন্তিনী এইসব কিছুই জানতো না। তাই যাবার আগে মণিমালাকেই বলে যায় সব, আর তাতেই……’
ধ্রবঃ ‘তারপর কী হল?’
কালীপদঃ ‘আশীর্বাদের দিন মানে যেদিন থেকে আর সিমন্তিনীদের খুঁজে পাওয়া গেল না তার কয়েকদিন পর এই বাড়িতে এই শিবমন্দির তৈরি হল, তোমরা যার সামনে খোঁড়াখুঁড়ি করলে। জমিদারবাবু নাকি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন শিবঠাকুরের থেকে ওখানে মন্দির বানানোর জন্য। ধুমধাম করে মন্দির প্রতিষ্ঠা হল। কিন্তু জমিদারবাবু ওখানে কাউকেই যেতে দিতেন না, নিজে গিয়ে পুজো দিতেন’।
সম্পূর্ণাঃ ‘তার মানে খুন করে এখানে মাটি চাপা দিয়ে ওপরে মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। তাই জন্যই এত জায়গা থাকতে বাড়ির পিছন দিকে এখানেই মন্দির তৈরি করতে হল ওনাকে’।
কালীপদঃ ‘ আসলে কী জান মা! এই প্রাসাদে কেউ কাউকে ভালোবাসেনি কখনও। বাসবে কী করে? শুধু টাকা, প্রতিপত্তি আর সম্মানের লোভ, ভালোবাসার মনটা কবেই মরে গেছিল। বড় বড় ঘরে মানুষগুলো থাকলেও আলো তো ঢুকত না সেই সব ঘরে। কান্না আর বিষ নিঃশ্বাসে ভ্যাপসা হয়ে গিয়েছিল সব, মরচে পড়েছিল মানুষগুলোর মধ্যে। ওরা দুজনেই হয়তো তাই দুজন ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করছিল যারা ওদের মুক্তি দেবে। তাই হয়ত……’
দুদিন পর ওদের ফেরার কথা। ট্রেনে উঠে যে যার জায়গায় চুপচাপ বসেছিল সবাই, কেউ কিছুই বলছিল না। অনিকেতই প্রথম কথা শুরু করল, ‘কী রে কী বুঝলি সব!’
তিতাসঃ ‘অনর কিলিং। আর কী! তাও আমাদের আসার আগে কঙ্কালগুলো পুলিশ নিয়ে গেল এই যা রক্ষে’।
সম্পূর্ণাঃ ‘অনিকেত কিন্তু আসার আগে সলিড ঝারটা খেলি তোর মাসির কাছে। কী রে, আর করবি এক্সপিডিশন! বাড়িতে গিয়েও সলিড ঝার খাবি কাকু-কাকীমার কাছে’।
অনিকেতঃ ‘তুই ছাড় তো ঝারের কথা। আমি ভাবছি খালি কী হল! সত্যিই কী তাহলে ভূত আছে? যারা আমাদের রূপ ধরে গিয়েছিল তারাই কী…! কী করে সম্ভব আজকের দিনে এসব? আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে ভাই, কীরে ধ্রব’।
ট্রেন থেকে নেমে যে যার গন্তব্যে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিল। অনিকেত আর সম্পূর্ণা যাদবপুর যাবার জন্য বাসে উঠে গেল। তিতাস আর ধ্রবই ফেরার বাকি। ধ্রব বলল, ‘বেহালাতে যাবি তো?’
তিতাসঃ ‘হুম। বাবা-মা তো এখনও ওখানেই। কেন? আর তুই গোটা ট্রেনে ওইরকম চুপ করে বসেছিলি কেন?’
ধ্রবঃ ‘একটা কথা বলব?’
তিতাসঃ ‘কী?’
ধ্রবঃ ‘কিছুক্ষণ একটু গঙ্গার ধারে গিয়ে বসবি?’
সিমন্তিনী আর গৌর দুজনে দুজনের হাত ধরতে পেরেছিল কিনা আমরা জানি না। যদি ধরেও থাকে সেটা সারাজীবনের জন্য তো নয়। আজ গঙ্গার ধারে যারা প্রথমবার হাত ধরল, সারাজীবন না হোক, অন্তত জীবনের কয়েকটা দিন তারা একসঙ্গে চলবে এই চাওয়াটুকু দুজনের মধ্যেই আছে।
—————— (সমাপ্ত)
মন্তব্য করুন