দেখতে হুবহু ফুলকপির মতো, রঙটাই যা শুধু আলাদা। শীতকাল হলেই মিষ্টি সবুজ রঙের এই সবজিটির দেখা মেলে বাজারে, নাম ব্রকলি। শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এই সবজিটি খাওয়া কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষেও খুবই উপকারি।
শীতের দুপুরের পাস্তা হোক বা ডিনারের স্যুপ, ব্রকলি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ছড়িয়ে দিলেই আপনার খাবারের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এটা শুধু কথার কথা নয় কিন্তু। ব্রকলিতে থাকা পুষ্টিগুণের মাত্রা জানলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রকলিতে:
- প্রোটিন থাকে ৩.৩ গ্রাম
- ফ্যাট থাকে ০.১ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম থাকে ১৫০ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাক ৫.৫ গ্রাম
- আয়রন থাকে ১.৬ মিলিগ্রাম
পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। যার মধ্যে ভিটামিন সি, বি-১ এবং বি-৩ রয়েছে। শুধু তাই নয় এক বাটি ব্রকলিতে এক বাটি ভাতের সমান প্রোটিন থাকে। কিন্তু ক্যালোরি থাকে তার অর্ধেক। তাই ভাত খাওয়ার ফলে ভুঁড়ি হলেও ব্রকলি খেলে তা হবে না।
প্রতিদিন ব্রকলি খেলে যে যে উপকার পাবেন
প্রতিদিনের খাবারে যদি এখন থেকে অ্যাড করে নিতে পারেন ব্রকলি তাহলে সুস্থ্য থাকার গ্যারান্টি চোখ বন্ধ করে আপনার হাতে রয়েছে। ভাবছেন জাস্ট লেখা জন্য লিখছি। তাহলে বলবো একেবারেই ভুল ভাবছেন। আজকের প্রতিবেদিন বদলে দেবে আপনার এই ভাবনা। কালই বাজারে খুঁজতে চলে যাবেন ব্রকলি কেনার জন্য।
১) খারাপ কোলেস্টরল কমাতে এবং ভাল কোলেস্টরল বাড়াতে
- কোলেস্টরলের মতো সমস্যা কিন্তু হৃদরোগের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
- নিয়মিত ব্রকলি খেলে কিন্তু তা আপনার শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে।
- আর ভালো কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আপনার অজান্তেই।
২) হৃদযন্ত্রকে সতেজ রাখে
- ব্রকলি হার্টের জন্য কিন্তু খুবই ভাল। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যদি নিজের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ব্রকলি রাখেন তাহলে তা তার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- কারণ ব্রকলিতে রয়েছে আইসোথিওসায়ানেটস এবং সালফোরাফেন’এর মতো অ্যান্টিইনফ্লেমেটারি উপাদান, যা হৃদপিন্ডে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে থাকে।
৩) ক্যালসিয়ামের ভরপুর উৎস
- আগেই বলেছি যে, ব্রকলি হল ক্যালসিয়ামের ভরপুর উৎস।
- স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া বা বিশেষ করে মহিলাদের ব্রকলি খাওয়া খুবই দরকার।
- এর ফলে শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত হয়ে থাকে।
- যার ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্ট পেইনের মতো সমস্যাকে সহজেই দুরে রাখা যায়।
৪) শরীরে অ্যালার্জি এবং প্রদাহ রোধ করে
- ব্রকলিতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান।
- যা হার্টকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যালার্জি থেকে সংক্রমণের প্রবণতা রোধ করে।
- শুধু তাই নয়, শরীরে বিভিন্ন প্রদাহ থেকে ও বাঁচাতে সাহায্য করে।
৫) ডায়াবেটিক পেশেন্টরা অবশ্যই খান
- ব্রকলি ডায়াবেটিক পেশেন্টদের জন্য এক প্রাকৃতিক ওষুধ বলা চলে।
- ব্রকলি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- তাই অকালে মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হতে না চাইলে খাদ্যতালিকায় যোগ করুন ব্রকলি।
৬) কোষ্ঠকাঠিন্যকে চির বিদায়
- ব্রকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
- যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় কষ্ট পান, তাঁরা ওষুধ না খেয়ে নিয়মিত ব্রকলি খান।
- একমাসের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
৭) অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ব্রকলি
- ফুলকপি বা বাধাকপির তুলনায় ব্রকলিতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
- ভিটামিন সি ছাড়াও ক্যারোটেনয়েড (Carotenoids), লুটেইন (Lutein), বিটা-ক্যারোটিন (beta-Carotene), ফ্ল্যাভনয়েড (Flavonoid) রয়েছে ব্রকলিতে, যা কিনা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেই চিহ্নিত করেন চিকিৎসকরা।
- তাই ব্রকলি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
কীভাবে খেলে উপকার পাবেন?
- ব্রকলি অল্প জলে সেদ্ধ করে নিন, অতিরিক্ত জল ফেলে দেবেন না। এবার তাতে স্বাদের জন্য একটু নুন, গোলমরিচ, চিলি ফ্লেক্স (অপশনাল), ভিনিগার এবং একটু অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন।
- রোস্টেড ব্রকলি। মুচমুচে করে ব্রকলির স্বাদ পেতে ব্রকলি রোস্ট করে তাতে একটু চিজ ছড়িয়েও খেতে পারেন।
- পাস্তা খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি এতে ব্রকলি সেদ্ধ করে মিশিয়ে দিন। স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যও বজায় থাকবে।
ব্রকলি খাওয়ার কি কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে?
- যেকোনও জিনিসের ভালো ও খারাপ দিক দুই রয়েছে, তেমনই ব্রকলি খাওয়ারও কিছু ভালো খারাপ দিক আছে।
- যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ব্রকলি খাওয়া একেবারেই ঠিক না। কারণ ব্লকলি খেলে তা থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- স্বাস্থ্যসচেতন বহু মানুষই স্যালাড হিসাবে কাঁচা ব্রকলি খেয়ে থাকেন। ব্রকলি সবজি হিসাবে খুবই ভাল এর কোনও তুলনা নেই। কিন্তু ব্রকলিতে রয়েছে এমন কিছু সুগার যা, সহজে হজম হয় না। হজমে বাধা সৃষ্টি হলেই তা থেকে গ্যাস ফর্ম করে যায়। তাই কাঁচা না খেয়ে, রান্না করে খেলেই এই হজমের সমস্যা আর হয় না।
মন্তব্য করুন