বড় ঠাকুর বা শনিদেবের কথা তো আপনারা সব্বাই জানেন। খুবই রাগী দেবতা। এমনি রাগী যে ভক্তরা ওনার নাম পর্যন্ত নেন না! আপনার বাড়ির কাছে যদি শনিদেবের মন্দির থাকে, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, শনিবার, যে বার শনিদেবেরই বিশেষ বার, ভক্তরা তাঁকে তেল মাখিয়ে থাকেন। আপনিও নিশ্চয়ই মাখিয়েছেন বার কয়েক, তাই তো? কিন্তু জানেন না নিশ্চয়ই এর পেছনের কাহিনী? আসুন আজ জেনে নিন।
রামায়নের গল্প
রামায়ন তো আপনারা সবাই কমবেশি পড়েছেন। আর ওখানেই পাওয়া যায় শনিদেবের সাথে তেলের সম্পর্কের এই গল্পটির উৎস। রাম লঙ্কায় যাবেন, রাবণকে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য। তারই জন্য রামেশ্বরমে সেতুবন্ধন হচ্ছে। ভক্ত বীর হনুমান আছেন তারই তত্ত্বাবধানে, কঠোর প্রহরায়। প্রিয় রামের কাজে কোনো বাধা আসতেই দেবেন না তিনি।
তো হনুমান একদিন রামের পুজোয় বসেছেন। এমন সময় শনিদেব এলেন তাঁর কাছে। নিজ পরিচয় সদম্ভে ঘোষণা করে কে বেশী শক্তিশালী তা দেখার জন্য হনুমানকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন।
শান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন হনুমান। বললেন, ‘আমি এখন রামের ধ্যানে বসেছি। দয়া করে আমাকে একা ছেড়ে দিন। পুজোর সময় আমাকে বিরক্ত করবেন না’।
শনি তো নাছোড়বান্দা! যুদ্ধে শক্তি পরীক্ষা না করে কিছুতেই যাবেন না তিনি। অগত্যা হনুমান আর কি করেন! নিজের লেজটাকেই বড় করে শনিদেবকে পেঁচিয়ে ফেললেন লেজে। আর তারপর? শক্ত করতে লাগলেন লেজের বাঁধুনি। যতই বাঁধন শক্ত করেন, শনিদেব তো ততই হাঁসফাঁস করতে থাকেন ব্যথায়! শেষে হনুমান যখন লেজ ওপর-নীচ করতে লাগলেন, শনিদেবের তখন রীতিমতো ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ হাল! সারা গায়ে যখন তাঁর রক্তে ভেসে যাচ্ছে, তখন শনির মিনতিতে দয়া হল হনুমানের। ছেড়ে দিলেন তিনি।
কথিত আছে, এরপর শনিদেব নাকি বীর হনুমানকে অনুরোধ করেছিলেন যে, তাঁর ক্ষত আর রক্তে তেল লাগিয়ে দিতে, কারণ তেল যে ব্যথা দূর করে তা তো আপনারা জানেনই। হনুমান তেল লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আর শেষে শনিও নাকি তাঁকে জানান, যে তিনি আর রামের ভক্তদের বিরক্ত করবেন না।
ব্যাস সেই শুরু। এরপর থেকেই নাকি ভক্তদের মধ্যে শনিদেবকে তেল লাগানোর সূচনা। শনিদেব তো খুবই রাগী দেবতা। সব্বাই তাঁকে ভয় পায়। আর তিনি যদি ব্যথা পেয়ে রেগে থাকেন, তাহলে সেটা মোটেও ভালো ব্যাপার হবে না। তাই তাঁকে তুষ্ট করার জন্যই তেলের বন্দোবস্ত। আর তাঁকে যারা তেল মাখান, তাঁরা নাকি তাঁর কৃপাও পান। আর ভেবে দেখুন, অমন একজন রাগী দেবতার কৃপা পেতে কে না চায়!
কোন তেল?
তবে শনিবারে শনিদেবকে যে কোন তেল লাগানো হবে, এই নিয়ে মতভেদ আছে। সাধারণত তিল আর সর্ষে—এই দুই তেলই তাঁকে বেশী লাগানো হয়। এই দুই তেল দিয়ে তাঁর মন্দিরে প্রদীপও জ্বালানো হয়। কারণ হনুমানও নাকি এই দুই তেল দিয়েই তাঁর ব্যথা কমান। তাছাড়া তিল আর সর্ষের তেলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি আর অ্যান্টি-সেপ্টিক গুণও বর্তমান।
তাই যাই করুন, এবার কিন্তু প্রতি শনিবারে মন্দিরে গিয়ে শনিদেবকে তেল মাখাতে ভুলবেন না। তাঁর কৃপা পেতে আর শনির দশা থেকে মুক্তি পেতে এবার এটাই হোক আপনার ভরসা। তবে হ্যাঁ, এবার তেল লাগান গল্প জেনে!
dilip
শনি দেবের অনেক কৃপায় আমার জীবনে অনেক ভালো হয়েছে।
নন্দিনী মুখার্জ্জী
শুনে ভালো লাগলো। আপনার ও আপনার পরিবারের কুশল মঙ্গল কামনা করি।