এখন করোনার সময়ে যেটার প্রতি সবাই মনোযোগ দিচ্ছি তা হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। সবাই সেই চেষ্টাই এখন বেশি করে করছে। কিন্তু বাড়ির শিশুটির কি হবে? সে তো এসব রোগ প্রতিরোধ বোঝে না। বোঝে না করোনাও। কিন্তু তারও তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতেই হবে। কারণ শোনা যাচ্ছে আসছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। যাতে নাকি শিশুদেরও আক্রান্ত হবার সম্ভবনা রয়েছে।
ভিটামিন ওষুধ যতই খাওয়ান উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার তো খাওয়াতেই হবে। নিয়মিত খাবারে রাখতে হবে কিছু উপকারী উপাদান। যাতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে ওঠে এবং পুষ্টিও পায়। কিন্তু তারা তো খেতেই চায় না, তাহলে উপায়? উপায় আছে কি খাওয়াবেন কীভাবে খাওয়াবেন রইল হদিশ।
লেটুস পাতা
লেটুস পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি-কমপ্লেক্স, কে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ আরও অনেক উপকারী উপাদান। আপনার বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থাকলে এটা উপকারী।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। ঘুম ভালো হয়। এছাড়া লেটুসে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত রাখে। আপনার শিশু জল কম খেলে লেটুস পাতা খাওয়ান। এটি জলের চাহদাও মেটাবে। কিন্তু এমনিতে তো শাক পাতা বাচ্চারা খাবে না। তাহলে উপায়? উপায় হল মজাদার স্যান্ডউইচ, চিকেন স্যালাড বানিয়ে তার সাথে লেটুস দিয়ে দিন।
অলিভ
অলিভও একটা ভীষণ উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা শরীর সবদিক থেকে ভালো রাখবে। রোগ প্রতিরোধও বাড়বে। রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে। সাথে আপনার ছোট্ট সোনার ছোট্ট হার্টও ভালো রাখবে অলিভ।
এছাড়াও বাড়িতে থাকতে থাকতে শিশু যদি ডিপ্রেশনে ভোগে সেক্ষেত্রে এটা খুব উপকারী। এছাড়াও এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুদের ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে খুব ভালো। পেটের রোগ থেকেও দূরে রাখে অলিভ। কিন্তু খাওয়াবেন কীভাবে বাড়িতে হোমমেড পিৎসা বানিয়ে ওপরে টপিং হিসাবে দিতে পারেন।
আমণ্ড বা কাঠবাদাম
ভীষণ উপকারী এই বাদাম। এতে থাকা উপকারী ফ্যাট হার্ট ভালো রাখে। এতে থাকা রাইবফ্লাভিন ও এল কারনাইটিস মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। পটাশিয়াম স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে। এছাড়াও শিশুর ওজন বেড়ে গেলে আমণ্ড বাদাম খাওয়ান। এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও উপকারী। সাথে রোগ প্রতিরোধ তো বাড়ায় বটেই। পায়েসে আমণ্ড টুকরো দিতে পারেন বাচ্চারা খাবে। এছাড়াও মাঝে মধ্যে বাচ্চার হাতে দু তিনটি রোস্টেড কাঠবাদাম দিন। রোস্টেড কাঠবাদাম খেতে ভালো লাগে। রোজ ৩ – ৪ টি খেলেই উপকার পাবে।
ডিম
ডিম খেতেও ভালো আবার উপকারীও। ডিমে থাকা ভিটামিন ডি, ই, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও প্রোটিনের জোগান দেয় ডিম। শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ডিমের অনেক রকম পদই রান্না করে খাওয়ানো যায়।
দই
রোগ প্রতিরোধে দই খুবই উপকারী। এতে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা শরীরের এই ক্ষমতা গড়ে তোলে। এছাড়াও বাচ্চার হজমের সমস্যা থাকলে সেটাও দূর হবে। হাড় মুজবুত হবে। তাই প্রতিদিন একটু করে টকদই খাওয়াতে পারলে খুবই ভালো। দইয়ের সরবত করে খাওয়ানোর চেষ্টা করুণ।
বেরি জাতীয় ফল
বাজারে বিভিন্ন ধরনের বেরি জাতীয় ফল পাওয়া যায়। যেমন স্ট্রবেরি, ব্ল্যাক বেরি, ব্লু বেরি, ক্রানবেরি ইত্যাদি। এই বেরি জাতীয় ফলগুলি খুব উপকারী। এগুলোতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। রক্ত পরিশোধন করতে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এগুলো খুব উপকারী। শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানের জোগান দেয়।
প্রতিদিন ফল
এই বেরি জাতীয় ফলগুলি ছাড়াও অন্যান্য ফল খেতে হবে। ফলের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে। তাই রোজ একটা করে যেকোনো ফল খেতেই হবে। বিশেষ করে মরশুমি ফলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে শরীর ভালো রাখতে। তাই এক একদিন এক রকম ফল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিন। এতে বাচ্চার একঘেয়ে লাগবে না। আবার নানা রঙের ফলের স্যালাড করেও দিতে পারেন। একটু মজাদার করে সাজিয়ে। এতে ওরা আনন্দ করে খাবে।
টিপসঃ
- রোজের মেনুতে ভিটামিন সি রাখার চেষ্টা করুণ। সেক্ষেত্রে পাতিলেবু, আমলকী খাওয়ান।
- পাতিলেবুর সরবত করে দিতে পারেন বাচ্চাদের। এছাড়াও ডালের মধ্যে দিয়ে খাওয়ানো যায়।
- নিয়মিত একটু আমলকী বা আমলকীর রস খাওয়াতে পারলে খুব ভালো। বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকলে এটা করুণ। ভীষণ ভালো কাজ করে আমলকী।
- কাঠবাদামের সাথে অন্যান্য বাদাম, যেমন কাজু, কিশমিশ, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি খাওয়ান। এই ড্রাই ফ্রুট নিয়মিত খেলে আলাদা করে কোন ওষুধ খেতে লাগে না শরীর ভালো রাখতে।
- এছাড়াও সাথে শাক সবজী তো একটু খাওয়াতেই হবে। বিভিন্ন রকম ভাবে রান্না করে খাওয়ানোর চেষ্টা করুণ।
- প্রাণীজ প্রোটিনের দিকেও মন দিতে হবে। মাছ বিশেষ করে জ্যান্ত মাছ, ছোট মাছ খুব উপকারী।
- প্রতিদিন পরিমিত জল খাওয়া খুব জরুরী। অনেক বাচ্চাই জল খেতে চায়না। সেক্ষেত্রে সরবত, লস্যি বেশি করে খাওয়ান। শরীর জলের পরিমাণ যেন কমে না যায়।
- তবে বাচ্চার বয়স ১ বা ২ বছর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাওয়ান।
মন্তব্য করুন