ইসস! ভাবলেই কেমন একটা লাগছে তো? ফোঁড়া, তাও আবার বগলে? আর বগলে ফোঁড়া মানেই বুঝতেই পারছেন, আপনার গোটা দিনের প্রায় বারোটা বেজে যাওয়া! বগলের মতো ওরকম একটা অড জায়গা, না পারবেন ফেলে দিতে, না পারবেন ধরে রাখতে। ফলে যা হবার তাই হবে, ব্যথা নিয়ে বগল চেপে আপনাকে বসে থাকতে হবে কষ্ট করে। আর আপনারও মুডের পুরো দফারফা। বগলে ব্যথার এই ঘোরতর সমস্যা অবশ্য কমন সমস্যা। কমবেশি সবারই যেকোনো সময়ে হতে পারে। আর যদি হয়? তাহলে চাপ নেই। সমাধানের জন্য আমরা তো রইলামই, টিপস নিয়ে।
বগলে ফোঁড়া কেন হয়?
ফোঁড়া হবার জন্য দায়ী যে মহান ব্যাকটেরিয়াটি, তার নাম স্ট্যাফাইলোকক্কাল ব্যাকটেরিয়া। নানা কারণে নানা ভাবে এই ব্যাকটেরিয়া আপনাকে আক্রমণ করতে পারে। বগলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশের থেকে বেশী ঘাম হয়। আর ঘাম জমা মানেই বুঝতে পারছেন ব্যাকটেরিয়াদের রীতিমতো রাজত্ব! বগলের হেয়ার ফলিকল ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অনেকসময়ই আক্রান্ত হয়। বগলে অতিরিক্ত ঘাম হলে বগলের হেয়ার ফলিকল যে নালী বা ডাক্ট দ্বারা ঘর্মগ্রন্থির সাথে যুক্ত থাকে, তা বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে ফোঁড়া হয়। ফোঁড়া সারানোর জন্য সহজ কিছু ঘরোয়া টিপস জেনে নিন।
পেঁয়াজ
আপনার যদি ঘন ঘন ফোঁড়া হয়, তাহলে পেঁয়াজ কিন্তু আপনার উপকারে লাগতে পারে। পেঁয়াজ ব্যথা ও ফোঁড়া কমাতে সাহায্য করে। কারণ পেঁয়াজে পটাশিয়াম, এসেনশিয়াল অয়েল, নুন, ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো প্রায় ২৫ টি সক্রিয় যৌগ থাকে, যার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-সেপ্টিক গুণ থাকে, যা ফোঁড়া কমাতে সাহায্য করে। লাল পেঁয়াজ ফোঁড়ার ব্যথা, প্রদাহ কমিয়ে ডি-টক্সিফাই করে। তাছাড়া পেঁয়াজ রক্ত সঞ্চালনেও সাহায্য করে, ফলে ফোঁড়ার ভেতরে থাকা বিষাক্ত পুঁজ সহজে বেরিয়ে যায়।
উপকরণ
কাঁচা পেঁয়াজের টুকরো।
পদ্ধতি
পেঁয়াজের টুকরো কেটে আপনার বগলে বেঁধে রাখুন। ৩-৪ ঘণ্টা পরে আবার পেঁয়াজের টুকরো বদলান। ফোঁড়া যতদিন না কমে ততদিন দিনে তিন-চার বার করে এটা করে যান। তাছাড়া জলে পেঁয়াজ ফুটিয়ে সেই জল আর পেঁয়াজের মিশ্রণটিকেও আপনি ঘরের তাপমাত্রায় এনে আপনার বগলে লাগাতে পারেন। উপকার পাবেন।
নুন জল বা ডেটল জল
ফোঁড়ার ঘরোয়া চিকিৎসায় নুন জল আর ডেটল জল—এই দুটো তো কবে থেকেই ব্যবহার করা হয়ে এসেছে। নুন আর ডেটল—দু’টোই অ্যান্টি-সেপ্টিক আর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে।
উপকরণ
২ কাপ জল, অল্প নুন বা ডেটল।
পদ্ধতি
জল ভালো করে ফুটিয়ে তাতে অল্প নুন বা ডেটল যেকোনো একটা দিন। এরপর হালকা ঠাণ্ডা হলে তা তুলোতে করে আস্তে আস্তে ফোঁড়ার জায়গাতে দিন। গরম জলের এই সেঁক আপনার ফোঁড়া থেকে বিষাক্ত পুঁজ, রস বের করে ফোঁড়াকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
নিমপাতা
নিমপাতার অ্যান্টি-বায়োটিক আর অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণের জন্য নিমপাতাকে বহু প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়ে এসেছে। তাছাড়া ফোঁড়া, চুলকুনি, অ্যালার্জি বা র্যাশের ক্ষেত্রে নিমপাতা আপনার ব্যথা, জ্বালা কমিয়ে আপনার নিমেষে মুশকিল আসান করতে পারে।
উপকরণ
নিমপাতা।
পদ্ধতি
নিমপাতা জলে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর পেস্টটা ভালো করে আপনার বগলের ফোঁড়ায় লাগিয়ে নিন। তাছাড়া নিমতেলও লাগাতে পারেন। দেখবেন খুব তাড়াতাড়িই ফোঁড়ার জ্বালা কমে যাচ্ছে।
হলুদ
যে যাই বলুন না কেন, সবরকম ফোঁড়ার যম কিন্তু হলুদ। ত্বকের নানারকম কাটা-ছেঁড়া, ব্যথা জ্বালা সারাতে হলুদকে তো আপনি ব্যবহার করেই থাকেন। কিন্তু জানেন কি বগলে ফোঁড়ার চিকিৎসাতেও হলুদের কদর মারাত্মক? কেন? তার কারণ হলুদের অ্যান্টি-বায়োটিক গুণ। হলুদে থাকা ভোলাটাইল অয়েলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ আছে যা ফোঁড়ার প্রদাহকে সহজে কমায় ও বগলের ফোঁড়াকে সারিয়ে তোলে।
উপকরণ
কাঁচা হলুদবাটা।
পদ্ধতি
বাটা কাঁচা হলুদকে নিয়ে বগলের ফোঁড়ায় ভালো করে লাগান। এরপর ৩০ মিনিট মতো লাগিয়ে রেখে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যতদিন না কমে দিনে ২-৩ বার করে এটা লাগিয়ে যান। দেখবেন ফোঁড়ার চটজলদি উপকার পাচ্ছেন।
কালোজিরে
কি অবাক হচ্ছেন? কালোজিরেকে তো এতদিন রান্নার কাজেই ব্যবহার করে এসেছেন। কিন্তু আপনার বগলের ওই মারাত্মক ফোঁড়াটিকে সারাতেও কিন্তু ওর জুড়ি নেই। কালোজিরেতে প্রচুর পরিমাণে এসেনশিয়াল অয়েল থাকে, যা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যুক্ত। তাছাড়া অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হওয়ায় তা ফোঁড়ার ব্যথাকেও কমায়। এছাড়া কালোজিরেতে থাইমোকুইনোন নামে একধরণের সক্রিয় যৌগ থাকে যা ফোঁড়া দ্রুত কমাতে পারে।
উপকরণ
কালোজিরের তেল
পদ্ধতি
বিভিন্ন পানীয়তে কালোজিরের তেল মিশিয়ে খেলে ফোঁড়ার হাত থেকে জলদি উপকার পাবেন।
তাহলে আর চাপ কীসের? এবার গরমকালেও ফোঁড়াতে নো টেনশন। বগলে ফোঁড়া হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ঝামেলাকে ভুলুন আর এবার থেকে ঘরোয়া টোটকা ট্রাই করুন। দেখবেন ভয়ে আপনার বগলের ফোঁড়া আর আপনার কাছেও ঘেঁষছে না, আর আপনিও দিব্যি বগল বাজিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন নিশ্চিন্তে।
মন্তব্য করুন