বডি ম্যাসাজ। যেটা জাস্ট একমুহূর্তে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয়! শুধু কি শারীরিক ক্লান্তি? স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে। রাত্রে ভালো ভাবে ঘুমোতে পারছেন না? সমাধান বডি ম্যাসাজ। কিংবা পায়ে অসহ্য ব্যথা? তারও সমাধান বডি ম্যাসাজ। একটা সঠিক বডি ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। ফলে এইসব সমস্যার জাস্ট এক ঝটকায় সমাধান করে। কিন্তু এর জন্য দরকার সঠিক নিয়ম। সঠিক ভাবে বডি ম্যাসাজ না করলে কিন্তু আবার শরীরে ব্যথা কমার জায়গায় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। তাই জেনে নিন বডি ম্যাসাজের সঠিক নিয়ম।
১. সঠিক পরিবেশ
সুন্দরভাবে বডি ম্যাসাজের জন্য আগে দরকার সুন্দর পরিবেশ। যে ঘরে ম্যাসাজ হবে সেই ঘর যদি নোংরা, অগোছালো হয় তাহলে ম্যাসাজের তেমন ফল পাওয়া যাবে না। ম্যাসাজের আগে দেখে নিতে হবে, যে যেখানে ম্যাসাজ করা হবে, সেই খাট বা জায়গাটা পরিষ্কার আর আরামদায়ক কিনা। সেই জায়গাটায় একটা পরিষ্কার নরম তোয়ালে বিছিয়ে রাখুন, যাতে ম্যাসাজের সময় কোনোরকম অস্বস্তি না হয়। এছাড়াও ঘরে একটা সুন্দর গান বাজিয়ে দিন। এতে মন আরও ভালোভাবে রিল্যাক্স করতে পারে। এছাড়াও ঘরটা যেন একটু গরম থাকে। ঘরের ভেতরটা গরম থাকলে সেটা আরামদায়ক হয়। তাই বডি ম্যাসাজের আগে ঘরের পরিবেশকে ঠিক করে নেওয়া দরকার।
২. ভালো ম্যাসাজ অয়েল
অবশ্যই ম্যাসাজ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। সে আপনার রান্না ঘরে রাখা সানফ্লাওয়ার তেলও হতে পারে বা বাদাম তেল। শীতের জন্য যে অলিভ বডি অয়েলটা কিনে রেখেছেন সেটাও ভালো। এর সাথে চাইলে একটু এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এছাড়াও তেলটা একটু গরম করে নিন। গরম তেল ম্যাসাজ করলেই ম্যাসাজের গুণগুলো পাওয়া সম্ভব। যেটা ঠাণ্ডা তেলে ম্যাসাজে পাওয়া যায় না।
৩. শুরু পায়ের পাতা থেকে
ম্যাসাজ কিন্তু নীচ থেকে ওপরে উঠবে, ওপর থেকে নীচে না। মানে শুরু হবে পায়ের পাতা থেকে। পায়ের পাতা ভালো করে তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। পায়ের পাতা একটু সামনে পিছনে করে, পায়ের পাতা হাত দিয়ে প্রেস করে করে ম্যাসাজ করুন।
৪. পা
পায়ের পাতা কমপ্লিট হবার পর এবার পা ম্যাসাজ করার পালা। প্রথমে হাতের আঙুল দিয়ে পায়ে প্রেস করে করে ম্যাসাজ করুন। প্রেস করে করে একবার পায়ের নীচ থেকে ওপরে যান। আবার ওপর থেকে নীচে ম্যাসাজ করুন। এভাবে কয়েকবার হাত দিয়ে প্রেস করে করে ম্যাসাজ করুন। তারপর পায়ের ওপর থেকে নীচের দিকে হাত টানুন। মানে ওপর থেকে নীচের দিকে টেনে ম্যাসাজ করুন। প্রেস করে নয়। এবং
তারপর হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ হয়ে যাবার পর কিন্তু পা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দেবেন। খোলা রাখবেন না।
৫. পিঠ
পিঠের ম্যাসাজ কিন্তু হবে নীচ থেকে ওপর দিকে। মানে কোমর থেকে শুরু হবে। প্রথমে কোমর ম্যাসাজ তারপর পিঠে ম্যাসাজ। এখানে শুধু হাতের আঙ্গুল দিয়ে নয়, পুরো হাতের চেটোকেই কাজে লাগাতে হবে। হাতের পুরো চেটোটা কোমরের ওপর রাখুন। তারপর হাতের চেটো দিয়ে কোমরের সব দিকটা ম্যাসাজ করুন। পুরো কোমরটা হয়ে গেলে, তারপর ম্যাসাজ করতে করতে ওপর দিকে উঠুন।
এভাবেই হাতের চেটো দিয়ে ঘষে ঘষে পিঠে ম্যাসাজ করুন। এই ম্যাসাজে কিন্তু আপনি জাস্ট হাতের চেটো দিয়ে কোমর থেকে পিঠ ঘষবেন। এটা কিছুক্ষণ করার পর, এবার প্রেস অ্যান্ড রিলিজ। মানে আবার সেই প্রেস করে করে ম্যাসাজ করা। এক্ষেত্রেও পুরো হাতের চেটো দিয়ে, পুরো কোমরটা প্রেস করে করে ম্যাসাজ করবেন। কোমর কমপ্লিট হবার পর, আস্তে আস্তে হাত ওপরে তুলুন। হাতের চেটো প্রেস করে করে পিঠে ম্যাসাজ করুন। এভাবে কয়েকবার নীচ থেকে ওপরে উঠুন। আবার ওপর থেকে নীচে নামুন।
৬. ঘাড় এবং কাঁধ
পিঠ হবার পর কাঁধ হালকা ম্যাসাজ করুন। হালকা ভাবে প্রেস অ্যান্ড রিলিজ টেকনিকে ম্যাসাজ করুন। তারপর এমনি ভাবে ম্যাসাজ করুন। কাঁধের পর ঘাড়ে একদম হালকা হাতে ম্যাসাজ করবেন। ঘাড়ে কোনো চাপ দেবেন না। এরপর চলে যান মাথায়।
৭. হেড ম্যাসাজ
হেড ম্যাসাজে একটু সময় দিতে হবে। প্রথমে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করতে হবে ভালো করে। মাথার স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করার সময় কোন হেয়ার অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করলে আরও ভালো। স্ক্যাল্পে ভালো হাতের আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। হালকা ভাবে ম্যাসাজ হবে। একদমই চেপে চেপে ম্যাসাজ করবেন না। স্ক্যাল্পে আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করার পর, নখ দিয়ে একদম আলতো ভাবে স্ক্র্যাচ করুন।এতে আরাম লাগবে। স্ক্যাল্প ম্যাসাজ হয়ে যাবার পর, কপাল। ভালো করে কপাল ম্যাসাজ করুন।
৮. হাত
সবশেষে হাত। পায়ের মত মোটামুটি একই ভাবে হাত ম্যাসাজ হবে। প্রথমে হাতের তালু দিয়ে ঘষে ঘষে ম্যাসাজ। তারপর প্রেশ অ্যান্ড রিলিজ ম্যাসাজ। আর সবশেষে আপনার হাতের তালু দিয়ে, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো হাত ম্যাসাজ করুন।
তাহলে এবার এই ভাবেই পরপর স্টেপ অনুযায়ী বডি ম্যাসাজ নিজেই করে নিন বাড়িতে। ব্যাস দেখবেন হাজারো শারীরিক সমস্যার কেমন সুন্দর সমাধান হয়ে গেল।
স্বাস্থ্য টিপস—বাতের ব্যথা থেকে আরাম পেতে ৩টি ঘরোয়া তেল মালিশ
মন্তব্য করুন