সামনেই তো বড়দিন আসছে। সারাদিন কীভাবে ঘুরবেন, কি কি করবেন সেই সব নিশ্চয়ই প্ল্যান করে ফেলেছেন। আর যদি না করে থাকেন তাহলে আমরা তো রইলামই আপনার সারাদিনের প্ল্যান করে দেওয়ার জন্য। সকালে কোথায় যাবেন, বিকেলে কি করবেন, রাতেই বা কোথায় ঘুরবেন, সব বলে দেব আমরা। বন্ধুরা মিলে হোক বা নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষের সাথেই হোক, এমন প্ল্যান, খোদ কলকাতায় বসে আর কেউ করে দিতে পারবেন না।
চিড়িয়াখানা
যাত্রা শুরু করুন চিড়িয়াখানা থেকে। সকলে একসঙ্গে দেখা করে নিন পিটিএসএ বা ন্যাশনাল লাইব্রেরির সামনে। সেখান থেকে খুব সামনেই চিড়িয়াখানা। সকাল ৯টা নাগাদ খুলে যায় চিড়িয়াখানা। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই আলিপুর চিড়িয়াখানার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট দেখে নেবেন। সেখানে টাইম আর কত টাকা দিয়ে ঢুকতে হয় সব লেখা আছে। আপনি আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে যেমন অনেক জন্তু, পাখি এসব দেখতে পাবেন, তেমনই খুব ভাল ভাল জায়গাও পেয়ে যাবেন বসে গল্প করার জন্য। খবরের কাগজ বা চাদর নিয়ে যান, পেতে বসে আড্ডা দিন পরিবারের সকলের সঙ্গে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
চিড়িয়াখানা থেকে বেরিয়ে প্রায় দু’পা হেঁটেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দুই ভাবে আপনাকে আনন্দ দিতে পারে। এক হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভিতরে যে মিউজিয়াম আছে সেই মিউজিয়ামে ঢুকে নানান ঐতিহাসিক জিনিস দেখার মাধ্যমে। আর তার বাইরে যে সুন্দর সবুজ বাগান, সুন্দর জলাশয় এসব রয়েছে, সেই সবের মধ্যে আপনি অপার আনন্দ পাবেন। এখানে সকলে মিলে বসে সহজেই সময় কাটাতে পারেন। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে দেখে নেবেন বড়দিনের দিন ওই মিউজিয়ামে আপনাদের ঢুকতে দেওয়া হবে কিনা!
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ
বড়দিনের দিন চার্চে যাবেন না, তা কি হয়! আর কলকাতায় চার্চ বলতেই আগে মনে পড়ে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ। সুন্দর করে সাজানো এই চার্চ এই শীতের সময়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ভিক্টোরিয়ার ঠিক পিছনেই বলা যায় এই চার্চ। এই চার্চের ভিতরে গিয়ে বেঞ্চিতে খানিক চুপ করে বসতে পারেন। আমরা এই সময়ে সবাই তো খুব চিন্তিত ভিতরে ভিতরে, বেশ খানিক অশান্ত আমাদের মন। এই জায়গা আপনাদের মনে শান্তি এনে দেবে। আর চার্চের চারপাশটা, মানে যাকে ইংরাজিতে আমরা বলি প্রেমাইসেস, সেখানেও খানিক ঘুরতে পারেন। খুব সুন্দর লাগে এই সময়টা ওখানে।
সেন্ট জনস চার্চ
কলকাতায় পুরনো চার্চগুলির মধ্যে অন্যতম। ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে গেলে হয়তো সবচেয়ে পুরনো। বিবাদি বাগে এই চার্চ। এই চার্চ শুধুমাত্র যে একটি চার্চ তা কিন্তু নয়। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এই চার্চের মধ্যেই আছে জোব চার্নকের সমাধি। এই চার্চের মধ্যেই আছে সেই সময়ের অন্যতম বিখ্যাত মানুষ বেগম জনসনের সমাধি। এর মধ্যেই আছে লেডি ক্যানিং-এর সমাধি। আর চার্চের একদম ভিতরেই আছে লাস্ট সাপারের একটি ছবি। বলা হয় এই ছবিতে নাকি এক একটি চরিত্রে সেই সময়ের সব বিখ্যাত মানুষদের মুখ ফুটিয়ে তোলা হয়। ছুটির দিনে এইসব ভাল জিনিস কিন্তু না দেখলেই নয়! সকাল আটটা নাগাদ খুলে যায় আর কোনও এন্ট্রি ফি নেই। তবে যেহেতু বড়দিন, প্রার্থনার ব্যাপার থাকে, তাই ফোন করে যাবেন। ওয়েবসাইটে ফোন নম্বর পেয়ে যাবেন।
আর বি আই মিউজিয়াম
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মিউজিয়াম এটি। আমাদের আজ অবধি কীভাবে অর্থনৈতিক নানা পরিবর্তন এসেছে, মুদ্রার কি পরিবর্তন হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কি গুরুত্ব পালন করেছে, সব নিয়ে এই মিউজিয়াম। খুব একটা কেউ কিন্তু আজও এখানে যান না। তবে গেলে কিন্তু আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ইতিহাস আপনার সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। কোনও এন্ট্রি ফি কিন্তু এখানেও নেই। আর বিবাদি বাগের কাছেই এটি। সুতরাং একবার ঘুরে আসতেই হবে।
পার্ক স্ট্রিট
অনেক হাঁটা হয়েছে, এবার তো খেতে হবে। আর বড়দিনে খাওয়া মানে পার্ক স্ট্রিট। মোকাম্বো, মার্কোপোলো, টুংফং, পিটার ক্যাট, বারবি কিউ ন্যাশন কত নাম বলব! জ্যোমাটো দেখুন, ম্যানু ঠিক করুন আর ঢুকে যান। ভাল করে খেয়ে আপনি যখন বাইরে আসবেন তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। আর বিকেল মানেই পার্ক স্ট্রিটে অনেক অনেক আলো। সেই আলোয় ভাসতে ভাসতে চলে যান অ্যালেন পার্ক। গান শুনুন, নাচুন, আনন্দ করুন। এই সময়ে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথ জুড়ে খুব ভাল ভাল খাবার নিয়ে বসা হয়। সেগুলিও চেখে দেখতে পারেন। রাত যত বাড়বে, পার্ক স্ট্রিটের আনন্দ তত বাড়বে। এবার কত রাত পর্যন্ত আপনি থাকবেন তা আপনার ওপর।
বড়দিনে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল ধরে আপনাকে বললাম কীভাবে আপনি ঘুরতে পারেন। সময় পেলে একটু নিউ মার্কেট, একটু বো ব্যারাক ঘুরে আসতেই পারেন। এরকম ভাবে ঘুরলে কিন্তু দিনটা আপনার সারা জীবন মনে থাকবে।
মন্তব্য করুন