দীর্ঘদিনের লকডাউনে ঘরে আটকে থাকায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলে কমে গেছে কায়িক শ্রমের পরিমান। পর্যাপ্ত পরিমান শক্তি খরচ না হওয়ায় শরীরে জমছে মেদ। পরিশ্রম না করায় মেদ কমছেও না। ডায়েট করেও অনেকে মেদ কমাতে পারছেন না। অনেকে আবার মেদ কমানোর জন্য সাপ্লিমেন্টও ব্যবহার করছেন, কিন্তু এর আবার রয়েছে মারাত্নক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
এদিকে নিজেকে ফিট রাখতে না পেরে অনেকেই মনোবল ও আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অথচ ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্যাভাসে কিছু সামান্য পরিবর্তন এবং ঘরোয়া রেসিপিতেই পেতে পারেন একদম ফিট শরীর। তাই আজ আপনাদের জন্য রয়েছে মেদ কমানোর একদম ঘরোয়া কিছু টোটকা। এই কার্যকরী উপায়গুলোর মাধ্যমে নিজেকে আরো আকর্ষনীয় করুন এবং হারানো মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনে একদম ফিটফাট হয়ে উঠুন।
মেদ কমানোর ঘরোয়া টোটকাঃ
১. লেবু-পানি পান করুনঃ
মেদ কমাতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি লেবুর রস হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন। লেবুতে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা হজমে সাহায্য করে ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। নিয়মিত পান করলে কয়েকদিনেই কার্যকরী ফলাফল পাবেন। তবে ভুলেও এর সাথে চিনি মেশাবেন না।
২. জিরা পানি পান করুনঃ
সকালে লেবু-পানি পান করা কষ্টকর মনে হলে পানীয় হিসেবে জিরা পানি পান করুন। জিরা সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে নাস্তার আগে সেই পানি পান করুন। এটি হজমে সহায়তা করে, পেট ফোলাভাব কমায় ও পেটের মেদ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৩. প্রচুর পানি পান করুনঃ
পানিকে বলা হয়ে দেহের প্রাকৃতিক ক্লিনজার। মেদ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রচুর পানি পান করুন। পানি অস্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা কমায়, শরীরের বিপাক হার বাড়ায় এবং দূষিত পদার্থ শরীর থেকে দূর করে দেয়। খাবারের আগে পানি পান করলে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা হ্রাস পায়, ফলে পেটে চর্বি জমা হবার ঝুঁকিও কমে যায়।
৪. আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খানঃ
শস্য জাতীয় খাবার আঁশে পরিপূর্ণ। এটি শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, ক্ষুধাভাব ও উচ্চ ক্যালরিবহুল খাবারের চাহিদা কমায়। আঁশ সমৃদ্ধ শস্য জাতীয় খাবার ওজন কমায় এবং মেদ কমাতেও সাহায্য করে। বেশি বেশি শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করুন।
৫. আমিষ সমৃদ্ধ খাবার খানঃ
অনেকেই ভাবেন প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার শরীরে মেদ জমতে সাহায্য করে। এটি একেবারেই ভুল ধারনা। তবে অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ওজন কমাতে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার যেমন – মাছ, মাংস, ডিম, ডাল গ্রহণ করুন। এগুলো আপনার শরীরকে ফিট রাখার পাশাপাশি মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
৬. গরম মশলা দিয়ে রান্না করুনঃ
প্রতিদিনকার রান্নায় গরম মশলা ব্যবহার করুন। এটি শরীরের ইনসুলিন সরবরাহ বাড়ায় এবং রক্তের সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। এটি মেদ নিয়ন্ত্রনে খুবই উপকারী।
৭. রসুন চিবিয়ে খানঃ
সকালবেলা নাস্তার আগে কয়েক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খান। এটি ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে। সেই সাথে শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে। সকালে লেবু-পানি পানের আগে কাঁচা রসুন খান। খুব দ্রুতই ফলাফল পাবেন।
৮. মেদ কমাতে গ্রিন-টিঃ
গ্রিনটি অনেকেই অপছন্দ করেন, কিন্তু এর রয়েছে নানান উপকারীতা। এটি শরীরের মেটবলিজম প্রসেসকে ত্বরান্বিত করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখে, ক্যান্সার ও কার্ডিওভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধ করে, দাঁতের ইনফেকশন দূর করে এবং শরীরের ফ্যাট কমিয়ে দেয়। এতে থাকা বায়ো-অ্যাক্টিভ কম্পাউন্ড শরীরকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
৯. চিনিকে না বলুনঃ
চিনি থেকে যত দূরে থাকবেন, মেদও আপনার থেকে ততটা দূরে থাকবে। চিনি শরীরে ইনসুলিন নির্গত করে। ফলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় যা আপনাকে মোটা হতে সাহায্য করে। তাই আর্টিফিশিয়াল বা ন্যাচারাল মিষ্টি বা চিনি এবং এ জাতীয় খাবার, সফট ড্রিংকস, ডায়েট ড্রিংকসও পরিহার করুন।
১০. তেলে ভাজা খাবার বাদ দিনঃ
অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাদ্য, ঝাল, ভাজাপোড়া, ফ্যাটওয়ালা খাবার গ্রহণের অভ্যাস বাদ দিন। এই খাবারগুলো শরীরে মেদ জমতে সাহায্য করে এবং হার্টেরও ক্ষতি করে থাকে। এগুলো কেবল খেতেই মজা, আদতে শরীরের তেমন কোনো উপকারে আসে না।
১১. চা-কফি থেকে দূরে থাকুনঃ
মেদ কমাতে চাইলে ঘুম থেকে উঠেই চাঙা করা এক কাপ কড়া চা বা কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
১২. মানসিক চাপ কমানঃ
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ চর্বি বৃদ্ধিকারী হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কর্টিসোলের তীব্রতার কারনে ক্ষুধা বেড়ে যায়, ক্যালরি বহুল খাবারের চাহিদা বেড়ে যায় এবং এটি পেটে চর্বি জমাতে ভূমিকা রাখে। তাই মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন। ইয়োগা, যোগ ব্যায়াম ও ধ্যান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১৩. পর্যাপ্ত সময় ঘুমানঃ
অনেকেই ভেবে থাকেন বেশি ঘুমালে মানুষ মোটা হয়ে যায়। এটা পুরোপুরি ভুল একটা ধারণা। ওজন কমাতে ঘুমটা খুবই জরুরি। প্রতি রাতে সঠিক সময়ে ঘুমাতে যান এবং সকালেও সঠিক সময়ে ঘুম থেকে জেগে উঠুন। দেখবেন ওজন কমার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরও সুস্থ এবং সতেজ থাকবে।
১৪. ব্যায়াম করুনঃ
মেদ কমাতে নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। শরীর ভালো রাখতে হলে এবং মেদ কমাচে চাইলে ব্যায়াম করা অতীব জরুরি। পরিশ্রম না করলে মেদ কমবে কি করে? তাই বাইরে যেতে না পারলেও ঘরে বসেই ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। এতে করে মেদ অনেকটাই কমবে।
শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে ও নিজেকে সুন্দর করে তুলতে ঘরে বসেই মেনে চলতে পারেন এই টোটকাগুলো। এতে করে খুব অল্প সময়েই আপনি হয়ে উঠবেন মেদহীন স্লিম শরীর। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই স্বাস্থ্যও থাকবে ভালো।
মন্তব্য করুন