Bengali Translation: Arpita Mukherjee
আজকাল অনিদ্রা হলো বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ ঘুম সংক্রান্ত রোগ। জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাতে ভালো করে ঘুমোয় না। ফলে তারা পরের দিন স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারে না। একটি সুস্থ্য মন ও শরীরের বজায় রাখার জন্য, প্রতি রাতে গড় ছয় থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের।
অনিদ্রা মানুষের স্বাস্থ্যের উপর একটি বিশাল নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে এই রোগে নিপীড়িত মানুষের হৃদয় অসুখ, বিষণ্নতা ও অন্যান্য রোগে ভোগার সম্ভাবনা বেশি। এদের ক্ষেত্রে বাড়ীতে বা রাস্তায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেশী থাকে। কাজের দিকেও এই মানুষেরা কম উৎপাদনশীল এবং কম দক্ষ হয়।
যদিও অনিদ্রাকে একরকম ঘুম ব্যাধি হিসেবে এখনো পুরোপুরি বলা হয়ে না,বিশেষজ্ঞদের কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকার পরীক্ষা করেছে অনিদ্রার সাথে লড়াই করার জন্য। এখানে কিছু সহজ উপায় দেখা যাক যা নিয়মিত অনুসরণ করলে রাতে আরামের ঘুম নিশ্চিত।
সঠিক বিছানা
ঘুমনো কঠিন হতে পারে যদি আপনার বিছানায় খুব নরম বা খুব শক্ত হয় বা যদি আপনার বালিশ সঠিক না হয়। নিশ্চিত করে নিন যে আপনার বিছানা আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট আরামদায়ক। বিছানার জন্য সঠিক গদি বেছে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল প্রশস্ত পরিসরে বিছানার গদি পাওয়া যায় উভয় অনলাইন এবং অফলাইন তাই সঠিক পছন্দ করাটা বেশ মুশকিল। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে খুঁজে বের করুন কি ধরনের গদি আপনার জন্য ভাল কাজ করবে, কঠোরতা ও কাপড়ের দিক থেকে। শুধু সতর্ক বিবেচনার পর একটি গদি বা একটি বালিশ ক্রয় করা উচিত।
শান্ত জায়গা
মাঝে মাঝে, অনিদ্রা ঘুমের পরিবেশের কারণে হয় যা বিশ্রামের সহায়ক নয়। যদি বারবার আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায় উচ্চ সোরগোলের কারনে, তাহলে আপনার ঘুমের প্যাটার্ন বেজায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিশ্চিত করে নিন যে ঘরে আপনি ঘুমোবেন সেই জায়গাটা শান্ত। কানে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করতে পারেন বাইরের আওয়াজ বন্ধ করার জন্য। এছাড়াও বেডরুমে কাজ করা, খাওয়া বা টেলিভিশন দেখা এড়ানো উচিত। এতে ঘরের শান্তি বিঘ্নিত হয়। বেডরুম শুধুমাত্র সেক্স এবং ঘুমের জন্য ব্যবহার করা উচিত।
নির্দিষ্ট ঘুমের সময়
একটা নির্দিষ্ট ঘুমের সময় মেনে চলা খুব জরুরী, এমনকি ছুটির দিনেও। এতে শরীরের সার্কাডিয়ান ক্লক অনুক্রম থাকে যা শারীরিক এবং মানসিক মঙ্গলের জন্য অপরিহার্য। প্রতিদিন একই সময় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস রাখুন, আগের দিন রাতে যতই কম ঘুম হয়ে থাকুক না কেন। আপনার শরীর যদি সারা সপ্তাহ এক নির্দিষ্ট সময় ঘুমোতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে রাতে সহজেই ঘুম আসে। দিনের বেলায় না ঘুমনোই ভালো কারণ তাতে রাতে ঘুম আসতে অসুবিধা হতে পারে।
ঘুমের সময়ের নির্দিষ্ট ক্রিয়া
ঘুমের সময়ের নির্দিষ্ট ক্রিয়ার অভ্যাস করা আপনার অনিদ্রার রোগ সারিয়ে দিতে পারে। বিছানায় যাবার আগে বই পড়া বা এক গ্লাস উষ্ণ দুধ খাওয়া এই সমস্ত ক্রিয়া শরীরের জন্য সংকেত হিসেবে কাজ করে এটা জানে যে ঘুমনোর সময় হয়ে গেছে। শোবার আগে উষ্ণ জলে চান করলে শরীর শিথিল হয়ে এবং শান্তিশৃঙ্খলার একটি অনুভূতি আনে যা সহজে ঘুমিয়ে পরতে সাহায্য করে। তবে ঘুমানোর জন্য খুব কঠিন চেষ্টা করবেন না। বিছানায় শুয়ে ছটফট করাতে শুধু উদ্বেগ বৃদ্ধি হয় এবং অনিদ্রা আরো বেড়ে যায়। যদি ঘুম একেবারেই না আসে তাহলে উঠে পড়ে আরামদায়ক কিছু করুন যেমন বই পড়া বা ধীরে গান শোনা। যখন ঝিম এসে যাবে, বিছানায় শুয়ে পরবেন।
গ্যাজেটের থেকে দূরে থাকুন
যদি শান্তিতে গভীর নিদ্রা চান তাহলে আপনার ল্যাপটপ, ফোন, আইপ্যাড প্রভৃতি সড়িয়ে রাখুন। ঘুমনোর আগে অত্যাধিক গ্যাজেট ব্যবহার আপনার ঘুম চক্র ব্যাহত করে কারণ এই সব গ্যাজেট নীল লাইট এমিট করে শরীরের মেলাটনিন হর্মন উৎপাদন দমন করে। মেলাটনিন হর্মন ঘুমনোর জন্য কাজে লাগে। এছাড়াও লাইট-এমিটিন্গ গ্যাজেট আমাদের মস্তিষ্ক চাঙ্গা করে তলে যাতে ঘুম আসা কঠিন হয়ে যায়।
নিদ্রা প্রবর্তনের গন্ধ
বিছানায় শোয়ার আগে আপনার কপালে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল লাগিয়ে নিন। এই আরামদায়ক সুগন্ধ আপনাকে ঘুমতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আপনি ঘুমনোর সময়ে আপনার কবজিতে কয়েক ফোঁটা জুঁই তেল লাগিয়ে দেখতে পারেন। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে যারা জুঁই সুবাসিত ঘরে রাতে ঘুমাতে যায় তাদের রাতের ঘুম বেশী ভালো হয় এবং জেগে ওঠার পরে অন্যদের তুলনায় আরো উজ্জীবিত বোধ করে। শয়নকালের আগে একটি সুগন্ধি স্নান একটি মহান উপায় শরীর এবং মন শিথিল করার জন্য। উষ্ণ চানের জলে কয়েক ফোঁটা ইলান্গ ইলান্গ এবং ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে একটা চমৎকার স্নান ভোগ করুন।
হালকা ডিনার
ঘুমতে যাওয়ার আগে সমৃদ্ধ, ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন। চর্বিযুক্ত খাবার অর্থাৎ আপনার পেটের জন্য অনেক কাজ এবং বদহজম ও অম্বল হতে পারে। এই সকল ভাল ঘুমের থেকে আপনাকে প্রতিরোধ করতে পারে।
এলকোহল এবং ক্যাফিন কম পান করুন
যদিও মদ্যপান করলে ঘুম পায় কিন্তু তা মধ্যরাত্রে আপনাকে জাগিয়েও রাখতে পারে পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, ফুল ব্ল্যাডার, ডিহাইড্রেশন প্রভৃতির কারণে। এছাড়াও, যখন অ্যালকোহলের প্রশান্তিদায়ক প্রভাব বন্ধ হয়ে যায় তখন ঘুমে ফিরে যাওয়া কঠিন হতে পারে। ক্যাফিন মস্তিষ্ক উত্তেজিত করে এবং রাতে ঘুমনো মুশকিল করে দেয়। রাতে ভালো ঘুমের জন্য এই দুটো পানীয় এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়। যদি সারাদিনে চলার জন্য আপনার ক্যাফিন লাগে, নিশ্চিত করবেন যে বিকেল চারটের পর যেন ক্যাফিন পান না করা হয়।
ধূমপান ছাড়ুন
আপনি যদি ধূমপানে আশক্ত হন, অনিদ্রার অন্য কোন কারন খোঁজার দরকার নেই। ঘুমনোর আগে ধূমপান করা আরও ক্ষতিকর। নিকোটিন আমাদের নার্ভতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং রাতে ঘুমোতে দেয় না। ধূমপান ছাড়ুন এবং পার্থক্য দেখুন শুধু ঘুমের বেলায় না, আপনার সাধারণ জীবনযাপনেও।
ভালো ব্যায়াম শাসন
অনেক গবেষণা আছে যেখানে দেখা যায় যে ব্যায়াম ঘুম উন্নত করতে সাহায্য করে। অনিদ্রায় আক্রান্ত রোগীরা যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের রাতের ঘুম বেশী ভালো হয়, দিনের বেলা বেশী এনার্জী থাকে এবং ডিপ্রেশন কম অনুভূতি করে। কিন্তু ব্যায়াম সকালের দিকে করাটা বেশী কার্যকরি। এটার কারণ হরমোন এড্রেনালিন যেটি ব্যায়ামের সময় উৎপাদন হয় তা স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগে। যদি বিকেলে ব্যায়াম করেন তাহলে হঠাৎ এড্রেনালিনের বেশী উৎপাদন আপনার নিদ্রা ব্যাহত করতে পারে।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে আপনার দায়িত্ব পূরণের চাপ যদি আপনাকে রাতে জাগিয়ে রাখে তাহলে কিভাবে সেটা ভালো পরিচালনা করা যায় তা শিখুন। জীবনের প্রতি একটি শান্ত এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন এবং দেখবেন আপনি রাতে বেশী ভালো ঘুমাতে পারছেন। যোগ ব্যায়াম ও ধ্যান অভ্যাস করুন স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। প্রিয়জনের সাথে নিজের সমস্যা ভাগ করে নেওয়া হলো ভেতরের চাপা অনুভূতির বহির্প্রকাশের একটি দুর্দান্ত উপায়। এছাড়াও আপনাকে যা বিরক্ত করছে সেটা লিখে প্রকাশ করলে আপনি স্বস্তি অনুভব করতে পারেন।
যোগ ব্যায়াম ও ধ্যান অভ্যাস
সারাদিনের কাজের পর কয়েকটা লো-ইম্প্যার্ট যোগ ব্যায়াম আপনার পেশীর উত্তেজনা কম করার জন্য অলৌকিক ভাবে কাজ করতে পারে। নিয়মিত মেডিটেশন আপনার মন ও শরীরের জটিলতা ছাড়িয়ে ঘোর নিদ্রা হওয়ার চমৎকার উপায়। নিয়মিত অনুশীলন লাগে এই প্রাচীন কৌশল শিখেতে কিন্তু মেডিটেশনের শান্ত করার ক্ষমতা অপরিমেয়।
আপনার বয়স যতই হোক না কেন, অনিদ্রা সারিয়ে ফেলা যায়। এই পদ্ধতিগুলি মাথায় রাখুন রাতে ভালো ঘুমনোর জন্য। কিন্তু এই পদ্ধতি চেষ্টা করার পরও যদি রাতে ঘুমোতে অসুবিধা বোধ করেন তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব ডাক্তার নিশ্চই দেখাবেন।
স্লিম হতে চান? জেনে নিন যেসব ফল খেলে স্লিম হওয়া হবে অনেক সহজ!
মন্তব্য করুন