মেথির ব্যবহার কিন্তু কেবলমাত্র রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ নয়। শরীর সুস্থ রাখতে, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে, ওজন কমাতে এমনকী আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুত করতেও মেথির গুণ অনস্বীকার্য।
মেথি এমনই একটি ভেষজ উপাদান যাতে রয়েচে অসংখ্য সব প্রয়োজনীয় মিনারেল, যেমন, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি।
মেথির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কী কী গুণাগুণ
দৈনন্দিন জীবনে রান্নায় মেথি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রান্নায় একটা আলাদা ফ্লেভার যোগ করার ক্ষেত্রে মেথির জুরি মেলা ভার। তাছাড়াও এই মেথির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে নানা গুণাগুণ, যা আপনাকে একাধিক সমস্যা থেকে দিতে পারে মুক্তির খোঁজ।
১) ওজন কমাতে মেথি
আগেই বলেছি অসংখ্য খনিজ পদার্থের উৎস হল মেথি। পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি-৬, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ফ্লেমেটরি উপাদান, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। মেথি অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছে প্রশমিত করে এবং এর মধ্যে থাকা ফাইবার দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও মেথি শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে হজম ক্ষমতা বাড়ায়, যারফলে শরীর থেকে বাড়তি ওজন কমতে সুবিধা হয়।
২) কলেস্টরল কমাতে
রক্ত থেকে খারাপ কলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে মেথি। শুধু তাই নয় শরীরে খারাপ কলেস্টরলের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করে মেথি। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার অপরিহার্য উপকরণ হল মেথি। সকালে খালি পেটে একগ্লাস মেথি ভেজানো জল রোজ খান দারুন কাজ দেবে।
৩) হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখকে
শরীর থেকে অ্যাসিডের খারাপ প্রভাবকে দূরে রেখে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে মেথি। তাই মেথির দানা সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে উঠে খালি পেটে সেই জল পান করুন। এতে করে আপনার হৃদযন্ত্র থাকবে সুস্থ ও সতেজ।
৪) হজম শক্তি বৃদ্ধিতে
মেথির মধ্যে থাকা ফাইবার-সহ অন্যান্য উপাদান হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই একইভাবে সারারাত ভিজিয়ে রাখা মেথির জল যদি পান করা যায়, তাহলে হজমের সমস্যা দূরে রাখা যায়।
৫) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
মেথিতে থাকা পটাশিয়াম এবং ফাইবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে কীভাবে খাবেন মেথি। প্রথমে ২-চামচ মেথির দানা জলে ফুটিয়ে নিন। এবার জল থেকে নিয়ে মেথি দানা মিহি করে বেটে নিন। এবার সেটি সকালে খালি পেটে খান। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই পথ্য খুবই কার্যকরী।
এ তো গেল শরীর-স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়। তবে জানেন কি, সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও মেথি খুবই অনবদ্য একটি উপকরণ। জেল্লাদার ত্বক হোক বা সুন্দর চুল-সবতেই মেথির ভুমিকা রয়েছে।
১) চুলের অকালপক্কতা দূর করতে
চুল অকালে পেকে যাওয়া দেখে অনেকেই চুলে রঙ করাই শ্রেয় বলে মনে করেন। কিন্তু চুলকে যদি ফের আগের রূপে ফেরানো যায়? আর এই কাজটি করতে মেথি বিশেষভাবে কার্যকর। চুলের হারিয়ে যাওয়া মেলানিন ফিরিয়ে এনে চুলকে কালো করতে সাহায্য করে।
উপকরণ
- মেথি পাউডার এক চামচ।
- আমলা পাউডার।
- পরিমাণ মতো জল।
প্রণালী
- মেথি এবং আমলকীর গুঁড়া ভাল করে মিশিয়ে নিন।
- তার মধ্যে পরিমাণমতো জল মিশিয়া নিয়ে কটা ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন।
- এবার এই পেস্ট ভাল করে সারা চুলে লাগিয়ে নিন।
- আধ ঘণ্টা মতো রেখে ভাল করে ধুয়ে নিন।
- সপ্তাহে একবার করে এই পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
২) খুশকি দূর করতে
শীতকালে খুশকির সমস্যা দূর করতে মেথি খুবই উপকারি।
উপকরণ
- মেথি পাউডার আধ কাপ।
- লেবুর রস।
- পরিমাণমোত জল।
প্রণালী
- মেথি পাউডার, লেবুর রস এবং জল খুব ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন।
- এবার সেই পেস্ট সারা চুলের গোড়ায় খুব ভাল করে লাগিয়ে নিন।
- ১০-১৫ মিনিট মতো লাগিয়ে রেখে জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
- এই পদ্ধতি সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করুন।
মন্তব্য করুন