গরম ভাতে ভর্তা খাওয়ার মজাই আলাদা। আর সেটা যদি হয় রসুনের ভর্তা, তাহলে তো কথাই নেই। রসুনে আছে প্রচুর ভিটামিনসহ সেলেনিয়াম ও এলিসিন, যেটা ক্যান্সারের মত শক্তিশালী রোগের ঝুঁকি কমায়।
তাছাড়াও রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হৃদপিন্ড সতেজ ও কর্মক্ষম করে তোলে। পুরুষের প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস, হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি, সেল ড্যামেজ রোধ ইত্যাদি কাজে রসুনের জুড়ি মেলা ভার।
আজকের আয়োজনে থাকছে বাংলাদেশি রসুন ভর্তার ৭ রকমের রেসিপি। দারুণ স্বাদের এই ৭টি রসুন ভর্তার রেসিপি ভর্তা প্রেমীদের জন্য এনে দিবে আরো চমক।
১. রসুনের ভর্তাঃ
যা যা লাগবেঃ
- রসুন (আস্ত) – মাঝারি সাইজের ২টি
- পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
- ধনেপাতা কুচি – ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ
- কাঁচামরিচ (কুচি) – ৪-৫টি
- শুকনামরিচ – ২-৩টি
- সরিষার তেল – ১ চা চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- সয়াবিন তেল (ভাজার জন্য) – পরিমাণমতো
যেভাবে বানাবেনঃ
রসুনের কোয়াগুলো আলাদা করে মাঝারি আঁচে ভালো করে টেলে নিন। একটু ঠান্ডা করে নিন, হালকা গরম গরম থাকতে থাকতে খোসাগুলো ছাড়িয়ে হাত দিয়ে চটকে রসুন ভর্তা করে নিন। কড়াইতে সয়াবিন তেল গরম করে প্রথমে শুকনামরিচ সামান্য ভেজে নিন, এরপরে এতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা বাদামি করে ভাজুন।
পেঁয়াজ বাদামি হলে টালা রসুন, কাঁচামরিচ ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে ৩-৪ মিনিট ভেজে নিন। তারপর ধনেপাতা কুচি দিয়ে আরো ২ মিনিট ভেজে নিন। সবশেষে চুলা বন্ধ করে দিন, মিশ্রণের উপরে সরিষার তেল দিয়ে একটু নেড়ে নামিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু ঝাল ঝাল স্বাদের রসুন ভর্তা।
২. রসুন পাতার ভর্তা
যা যা লাগবেঃ
- রসুন পাতা (তাজা) – ১ মুঠো
- শুকনামরিচ – ৮-১০টি (চাইলে কাঁচামরিচ দিতে পারেন)
- পেঁয়াজ – ৪-৫টি
- রসুন – ৭-৮টি কোয়া
- লবণ – পরিমাণমতো
যেভাবে বানাবেনঃ
প্রথমে রসুন পাতা ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এরপর পাতা টেলে নিন। পাতা টালার পরে একে একে পেঁয়াজ, রসুন, শুকনামরিচ টেলে নিন। সবশেষে সবগুলো একসাথে পাটায় বেটে নিন ও লবণ মাখিয়ে তৈরি করুন মজাদার রসুন পাতার ভর্তা।
৩. রসুনের পোড়া ভর্তা
যা যা লাগবেঃ
- রসুন – ২০-২৫ কোয়া
- পেঁয়াজ কুচি – ২ টেবিল চামচ
- শুকনামরিচ – ৪-৫টি
- ধনেপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- সরিষার তেল – প্রয়োজনমতো
যেভাবে বানাবেনঃ
প্রথমে ফ্রাইপ্যানে রসুন তেল ছাড়া পোড়া পোড়া করে ভেজে নিন। এরপর পেঁয়াজ কুচি তেলে বাদামি করে ভেজে নিন, তবে বেরেস্তার মত করে ভাজা যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন।
সবশেষে পাটায় পোড়া রসুন, ভাজা পেঁয়াজ, লবণ, শুকনামরিচ একসাথে বেটে তারপরে সরিষার তেল ও ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে মাখিয়ে নিন। আপনার রসুনের পোড়া ভর্তা খাওয়ার জন্য তৈরি।
৪. মাছ-রসুনের ভর্তাঃ
যা যা লাগবেঃ
- যেকোন মাছের ফিলে – মাঝারি সাইজের দুই টুকরা (কাঁটা ছাড়া)
- পেঁয়াজ কুচি – আধা কাপ
- রসুন কুচি – আধা কাপ
- কাঁচামরিচ কুচি – ৫-৬টি (চাইলে বাড়াতে কমাতে পারেন। কাঁচামরিচের বদলে ভাজা শুকনামরিচের গুঁড়াও দিতে পারেন)
- হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – আধা চা চামচ
- ধনেপাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ (চাইলে বাদ দিতে পারেন)
- সরিষার তেল – ৩ টেবিল চামচ
- লবণ – ১ চা চামচ বা স্বাদমতো
যেভাবে বানাবেনঃ
প্রথমে মাছের টুকরাগুলোতে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া আর আধা চা চামচ লবণ মাখিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। ১০ মিনিট পরে ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে মাখানো মাছ দুই পাশ বাদামি করে ভেজে নিন এবং তুলে রাখুন। এবার ঐ ফ্রাইপ্যানেই বাকি তেলে পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, কাঁচামরিচ কুচি এবং আধা চা চামচ লবণ দিয়ে ভাজতে থাকুন।
পেঁয়াজ ও রসুন যখন নরম হয়ে আসবে তখন ওর মধ্যে ভাজা মাছ দিয়ে নাড়তে থাকুন। নাড়ার সময় মাছগুলোকে ভালো করে ভেঙে দিবেন। ৩-৪ মিনিট ভাজার পরে পুরো মিশ্রণটা নামিয়ে ফেলুন। এবারে হাত দিয়ে পুরোটা মাখিয়ে নিন, মাখানোর সময় ধনেপাতা কুচি দিন। ছোট ছোট বলের শেপে ভর্তা বানিয়ে পরিবেশন করুন মাছ-রসুনের ভর্তা।
৫. টমেটো-রসুনের ভর্তাঃ
যা যা লাগবেঃ
- টমেটো – ২টি
- পেঁয়াজ (কুচি) – ১টি
- রসুন (টুকরা করা) – ৮-৯ টি
- শুকনামরিচ – ২টি
- সরিষার তেল – ১ টেবিল চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
যেভাবে বানাবেনঃ
প্রথমে টমেটো পুড়িয়ে ঠান্ডা করে হালকা চটকে নিন। এরপর কড়াইতে তেল গরম করে শুকনামরিচ ভেজে গুঁড়া করে নিন। তারপর ঐ তেলে পেঁয়াজ ও রসুন ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে টমেটোর সাথে লবণ ও পেঁয়াজ, রসুন এবং মরিচ ভালো করে মাখিয়ে নিলেই হয়ে যাবে টমেটো-রসুনের ভর্তা।
৬. রসুন-কালিজিরা ভর্তা
যা যা লাগবেঃ
- রসুন – আধা কাপ/গোটা ৩টি
- কালিজিরা – ১ চা চামচ
- কাঁচামরিচ – ৩-৪টি (চাইলে শুকনামরিচ দিতে পারেন)
- সরিষার তেল – দেড় টেবিল চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
যেভাবে বানাবেনঃ
প্রথমে কড়াইতে রসুন ও মরিচ ভালো করে টেলে নিন। এই দুটো কিছুক্ষণ টালার পরে কালিজিরা দিয়ে একসাথে টেলে নিন। কালিজিরা যেন পুড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
যখনই কালিজিরা থেকে সুন্দর গন্ধ আসতে শুরু করবে তখনই কড়াই নামিয়ে ফেলবেন। এবারে পাটায় টালা রসুন-মরিচ-কালিজিরা, লবণ, তেল দিয়ে একসাথে বেটে নিন। ব্যস, আপনার রসুন-কালিজিরার ভর্তা রেডি।
৭. রসুন-লালমরিচের ভর্তাঃ
যা যা লাগবেঃ
- রসুন – ১৫-২০টি
- লালমরিচ – ৮-১০টি
- ধনেপাতা (কুচি) – ১ টেবিল চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- সরিষার তেল – প্রয়োজনমতো
যেভাবে বানাবেনঃ
মাত্র ৫ মিনিটেই বানাতে পারবেন অমৃত এই রসুন-লালমরিচের ভর্তা। চাইলে লালমরিচ শুকনো তাওয়ায় টেলে রাখতে পারেন। ভর্তা বানানোর আগে রসুন আর লালমরিচ পাটায় মিহি করে বেটে নিন।
তারপর লবণ, ধনেপাতা আর তেল দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু ঝাঁজালো স্বাদের ভর্তা। পরিবেশন করুন গরম ভাতের সাথে।
মন্তব্য করুন