রবীন্দ্রনাথ শুধু কথার সূত্রে বা উপাধির জন্য যে বিশ্বকবি তা নয়, তিনি আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বকবি, বিশ্বমানব। এমন খুব কম দেশই আছে যেখানে তিনি যাননি। এমন খুব কম বিশিষ্ট মানুষ ছিলেন যাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়নি, মতের আদানপ্রদান হয়নি। বেশিরভাগ দেশেই রবীন্দ্রনাথের নাম অন্তত বিদগ্ধ মহল জানেন। তাই আমাদের পাশের দেশ বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথকে ভালবাসবে না, শ্রদ্ধা করবে না এটা হতেই পারে না।
রবীন্দ্রনাথ তাদের কাছে শুধু কবি নন, সহযোদ্ধা
ইতিহাসের দিকে নজর ফেরালে দেখব যে একটা সময় পাকিস্তানের উপনিবেশ পূর্ব- পাকিস্তানের সংস্কৃতি থেকে রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে সরিয়ে দেবার চক্রান্ত হচ্ছিল। বাংলা ভাষাকে ভুলিয়ে দিয়ে উর্দু এবং একমাত্র উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তের প্রেক্ষিতে যখন বাংলা শব্দ পরিবর্তন করা শুরু হল তখন যেমন প্রদীপকে চেরাগ, বিদ্যাকে এলেম ইত্যাদি করার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথকে ভুলিয়ে তার বিকল্প হিসাবে নজরুলকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যাবস্থা হয়েছিল। কিন্তু, বাঙ্গালী যে রবীন্দ্রনাথকে ভোলেনি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ সে দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ হবার পর ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটাকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও রবীন্দ্রনাথের গান ছিল তাদের কন্ঠে। রবীন্দ্রনাথ তাদের সঙ্গে ছিলেন ১৯৫২ সালেও। রবীন্দ্রনাথ তাদের কাছে শুধু কবি নন, সহযোদ্ধাও বটে, বাঙালী জাতিসত্তার প্রতীক।
রবীন্দ্রসঙ্গীত
রবীন্দ্রসঙ্গীতকে লড়াই করতে হয়েছিল পাকিস্তানি উপনিবেশবাদীদের সঙ্গে। ১৯৬৫ থেকে রেডিওতে রবীন্দ্রসঙ্গীত কমে গেল, ১৯৬৭ সালে জুন মাসে ঢাকার নবাববাড়ির শাহাবুদ্দীন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী হিসাবে ফতোয়া দিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত হিন্দু সঙ্গীত, ইসলামের পবিত্রভূমিতে এই হিন্দু সঙ্গীত হবে না। সেই বছরেই সামনে ছিল বাইশে শ্রাবণ। কবি জসীমউদ্দীনের বাড়িতে সভা করে গঠিত হল ‘সাংস্কৃতিক স্বাধিকার কমিটি’। এই কমিটির পক্ষ থেকে নাচ, গান, নাটক করে এই দিনটিকে পালন করা হয়েছিল। এ তো গেল সেদিনকার কথা। আজ বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে রেজয়ানা চৌধুরী বন্যা,
সাগর সেন( ১৯৩২-১৯৮৩), কলিম সারাফি(১৯২৪-২০১০) প্রমুখদের নাম করতে হয়। এনাদের গায়কী আমাদের মুগ্ধ করেছে।
মিউজিয়াম
রবীন্দ্রনাথ বর্তমান বাংলাদেশের পতিসর, শিলাইদহ, সাজাদপুরে তাঁর জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো কাটান। সেখানেই তাঁর সাহিত্য, বিশেষতঃ ছোটগল্প সমৃদ্ধ হয়। পাশাপাশি তাঁর গানও। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর যোগ অনেক পুরনো। ,
বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের ওপর দুটো মিউজিয়াম আছে বাংলাদেশে- Tagore Memorial Museum, Rabindra Memorial Museum। প্রথমটি শিলাইদহতে ও পরেরটি সাজাদপুরে অবস্থিত।
সাজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
৮ মার্চ, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সাজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার শান্তিনিকেতনে পাঠরত ছাত্রদের জন্য।
এর থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বাংলাদেশের ভালোবাসা আজও কমেনি।
মন্তব্য করুন