যুগের পর যুগ ধরে বাঁ হাতে কাজ করাকে অশুভ বলা হয়। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টানের মতো বেশির ভাগ ধর্মই বলে যে বাঁ হাতে কাজ করা মানে শয়তানের কাজ করা। কিন্তু কেন এমন বলা হয়? সত্যি কি বাঁ হাতের কাজ মানেই অশুভ কাজ? আজ আমরা ঠিক এই ব্যাপারেই আলোকপাত করব।
শয়তান আসলে বাঁহাতি
বহু যুগ ধরে আমরা শয়তানের বা ডেভিলের যেই সব ছবি বা চিত্র দেখে আসছি তার প্রায় সব কটাতেই আমরা দেখতে পাই যে শয়তান আসলে বাঁহাতি। বহু মুনি, ঋষিরা বলে গেছেন যে বাঁহাতে কাজ করলে সেইটা অশুভ শক্তিকে ডেকে আনে। আবার তাঁদের মতে ডান হাতের কাজ করা সব সময় শুভ।এই তথ্যের মধ্যে কি আদৌ কোনো সত্যতা লুকিয়ে আছে?
বাঁহাতি সফল মানুষ
বলা হয় যে বাঁ হাতে কাজ করলে আমরা কোনো দিন সফলতা পেতে পারব না। এইটা সত্যি হলে আমরা ব্যারাক ওবামা, নরেন্দ্র মোদি, লক্ষী মিত্তাল, সৌরভ গাঙ্গুলি, যুবরাজ সিংহ, হু জ্যাকম্যান মানের মতো প্রতিভাশালী এবং নামকরা বাঁহাতি লোকের খোঁজ পেতাম না।
খ্রিষ্টান ধর্মের কি বক্তব্য
বহু ধর্মের মতে বাঁ হাতে কাজ করা শুভ না। জানা যাক যে বাঁ হাতে কাজ করা নিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মের কি বক্তব্য। খ্রিষ্টান ধর্ম কিন্তু বাঁ হাতের কাজকে শয়তানের কাজ বলেই মনে করেন। বাইবেলে মোটামুটি ১০০ জায়গাতে ডান হাতে কাজ করা যে শুভ এবং অন্তত ২৫ বার বলা হয়েছে যে বাঁ হাতের কাজ করা অশুভ। এমনও বলা হয় যে শয়তান তার ভক্তদের বাঁ হাত দিয়ে দীক্ষা দেন তাই বাঁ হাতে কাজ করাকে অশুভ বলা হয়। আবার যীশু তার শিষ্যদের ডানহাতে আশীর্বাদ করতেন তাই ডান হাতের কাজ করাকে শুভ মানা হয়।
হিন্দু ধর্মে
এইবার হিন্দু ধর্মে আসা যাক। হিন্দু ধর্মতেও সব দেব দেবীর ছবিতে দেখা যায় যে তাঁরা ডান হাত দিয়ে আশীর্বাদ করছেন। কোথাও বাঁ হাতে আশীর্বাদ করতে দেখা যায় না।ডান হাত দিয়ে প্রসাদ নিতে বলা হয় এবং সব রকমের পুজো ডান হাত দিয়ে করা হয়। খাবার খাওয়ার সময় ডান হাত ব্যাবহার করতে বলা হয়। বিয়ের সাতপাকে ঘোরার সময়ও প্রথমে ডান পা ফেলতে বলা হয় এবং তারপর বাঁ পা।
এই সব নিয়ম থেকে মানুষের মধ্যে প্রচারিত হয়ে গিয়েছে যে বাঁ হাতে কাজ করা একদম উচিত না।
ব্রেনের সাবলিলতার উপর নির্ভর করে
ভারতের অনেক জায়গাতে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের শেখানো হয় ডান হাতে কাজ করার জন্য। ডান হাত বা বাঁ হাতে কাজ করা সম্পূর্ন আমাদের ব্রেনের সাবলিলতার উপর নির্ভর করে। আমাদের ব্রেন যদি ডানহাতে কাজ করতে সাবলীল অনুভব করে তাহলে আমরা ডানহাতি হয়ে উঠি এবং ঠিক সেইভাবেই বাঁ হাতে কাজ করতে সাবলীল অনুভব করে তাহলে আমরা বাঁহাতি হয়ে উঠি। কোনো হাতে আমরা কাজ করছি সেইটা আমাদের ব্রেন নির্ণয় করে। এর সাথে শয়তানের কাজের কোনো যোগ নেই।
অনেক বাচ্চারা বাঁ হাতে লিখতে চাইলেও তাদের মেরে ডান হাতে লেখার অভ্যেস করানো হয়।
বাঁহাতি হওয়ার পরও ডান হাতে কাজ করলে তাদের কাজ করার গতিও কমে যায়। একটি বাঁহাতি যদি ডান হাতে কাজ করে তার ব্রেন তার হাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য হারায়। তাই কোনোদিন বাচ্চাদের জোর করে ডানহাতি করা উচিত না। এই পদক্ষেপ কিন্তু বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে অবনতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
তাহলে আমরা এইবার খানিকটা ধারণা করতে পেরেছি যে ডান হাত বা বাঁ হাত, যেকোনো হাত দিয়েই যেকোনো কাজ করা যায়। এর সাথে শয়তান বা অশুভর কোনো সম্পর্ক নেই। যে যেমন হাত দিয়ে কাজ করতে চাই তাকে সেই হাত দিয়ে কাজ করতে দেওয়া উচিত। দুঃখের বিষয় এই যে মোটামুটি সব জিনিসই ডানহাতি লোকদের জন্য ভেবেই বানানো হয় যেমন কাঁচি হোক বা গিটার সব কিছুই ডানহাতি লোকের সুবিধার্থে বানানো হয়।
আমাদের উচিত যে বাঁ হাতে কাজ করার প্রচলন বাড়ানো। বিদেশে বাঁহাতির লোকদের জন্য জিনিস আলাদা করে বানানো হয়। ভারতে এমন উদাহরণ খুবই কম। তাই এই কথা বলেই আজ আমি আমার লেখা শেষ করছি যে ডান হাত হোক কি বাঁ হাত,যেকোনো হাত দিয়েই কাজ করা শুভ।শুধু আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যে আমাদের কাজ যেন অন্যদের ক্ষতি না করে।
লিও (Leo) রাশির জন্য কি কি উপহার সেরা হবে জানাচ্ছেন বিখ্যাত জ্যোতিষী বেজান দারুওয়ালা
মন্তব্য করুন