গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন না এরম মানুষ খুঁজে পাওয়া আজকাল বেশ দুষ্কর। সবারই কমবেশি এই সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে মুঠো মুঠো ওষুধ খান। কিন্তু এইসব গ্যাসের ওষুধ সাময়িক স্বস্তি দিলেও সমস্যার আসল সমাধান কিন্তু হয় না। কিন্তু ভেতর থেকে এই সমস্যা নির্মুল করাও জরুরী। নাহলে পরে কোন বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেকেই অনেক ওষুধপত্র খান চিকিৎসা করান এই সমস্যা সারিয়ে তুলতে। কিন্তু শুধু ওষুধ খেলেই হবে না। আপনার রোজের জীবনযাত্রা একটা বড় ভূমিকা পালন করে এক্ষেত্রে। রোজের বিভিন্ন অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস এইসব ব্যাপারগুলো আদৌ ঠিক নিয়ম মেনে হচ্ছে তো? অনেক সময় আমাদের না জানার ফলে কিছু ভুল অভ্যাসের জন্য এই সমস্যা আমাদের পিছু ছাড়ে না। তাই বলছি সেরকমই কিছু অভ্যাসের কথা যেগুলো বাদ দেওয়া দরকার। দেখুন তো এই ভুল অভ্যাসগুলো আপনার নেই তো?
যখন তখন খাওয়া
খাবারের একটা সঠিক সময় আছে এটা আমরা অনেকেই ভাবি না। এদিকে গ্যাস বদহজমের সমস্যা লেগেই আছে। সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে রাতের ডিনার সবেরই একটা সঠিক সময় আছে। যেমন সকালে ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে নেওয়া উচিৎ। সেখানে যদি সকালের খাবার খেতে ১১টা বেজে যায় সেটা একদমই ঠিক নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শরীরকে উপযুক্ত খাবার দেওয়া উচিৎ। কারণ ওইসময় শরীরে খাবারের প্রয়োজন থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই বেশীক্ষণ পেট খালি রাখলে গ্যাস হতে পারে।
দুপুর ও রাতের খাবারের আসল সময়
দুপুরের খাবারও ১২টা থেকে ১টার মধ্যে সেরে ফেলা উচিৎ। এবং রাতেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। অন্তত চেষ্টা করুণ ৯টার মধ্যে ডিনার সেরে ফেলার। আয়ুর্বেদ মতে সন্ধ্যা ৬টায় ডিনার সেরে ফেলতে বলা হয়। কিন্তু অতো তাড়াতাড়ি সম্ভব না হলেও যতটা হয় চেষ্টা করুণ। ৯টার মধ্যে খাবার খেয়ে নিলে সেটা শোবার মধ্যে হজম হয়ে যাবে। কিন্তু এর বেশি দেরী হলে হজম প্রক্রিয়া অনেক রাত অবধি চলতে থাকে। হজম ঠিকমত হবার আগেই আপনি শুয়ে পরেন ফলে ঠিকমত হজম হয়না। কারণ রাতে শরীরের হজম ক্ষমতা একেবারে কমে যায়। তাই খাওয়া আর শোয়ার মাঝে ঘণ্টা দুয়েকের বিরতি দিন।
সঠিক খাবার
এটা তো আমরা সবাই জানি তেল ঝাল মশলা থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে বাঁচতে আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। অনেকেই খাবারের নির্বাচন সঠিকভাবে করতে পারেন না। একসাথে অনেককিছু খেয়ে ফেলেন। ভাবেন শরীর পুষ্টি পাবে। আসলে এতে হজমে সমস্যা হয় এবং গ্যাসের সমস্যা হয়। অনেকেই দুপুরে খাবার পর সঙ্গে সঙ্গে ফল খান। এটা একেবারেই ঠিক নয়। আপনার মূল খাবার ও ফলের মধ্যে অন্তত একঘণ্টা বিরতি দেওয়া উচিৎ।
আবার রাতে অনেকেই দুধ খান সাথে তরকারী বা ভাজাভুজি দিয়ে রুটি। দুধের সাথে কোন নোনতা, ভাজা খাবার একদমই চলে না। রাতে দুধ খেতেই হলে, খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর খান। আবার রাতে ফল খান অনেকে, গরমে আম খান। এটা একদম উচিৎ নয়। এই অভ্যাস বাদ দিতে হবে। ফল সবসময় সূর্যের আলো থাকতে থাকতে খাওয়া উচিৎ। সবচেয়ে ভালো ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চের মাঝের সময়ে।
কখন কি খাবেন
সকালে ব্রেকফাস্টে অনেকেই ভাজাভুজি খান। সকালে যতটা সম্ভব হেলদি খাবার খান। যাতে শরীর তার প্রয়োজনীয় উপকরণ গুলি পায়। খাবারের নিয়ম হল সকালে সবচেয়ে ভারী খাবার, দুপুরে একটু হালকা আর রাতে একদম হালকা খাবার। কিন্তু আমরা করি উল্টো। সকালে কাজের তাড়ায় তেমন কিছু খাইই না। দুপুরে আসর জমিয়ে বসি। রাতেও তাই। এই অভ্যাস অবিলম্বে বাদ দিন। কারণ আপনি নিজেও জানেন না শরীরের ভেতর কতটা সমস্যা হচ্ছে। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।
জল খাবার নিয়ম
জল খাবারও কিন্তু একটা সঠিক নিয়ম আছে সেটা ভেবে দেখেছেন? আপনি কি খাবার পর সঙ্গে সঙ্গে জল খান? এটা কিন্তু অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস। অনেকে আবার খাবার খাওয়ার সাথে সাথে জলও খেতে থাকে। এটাও খুব খারাপ। কারণ খাবার যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পাকস্থলীতে হজমরসের নিঃসরণ হয় সেটাকে হজম করাতে। কিন্তু সঙ্গে জল খেলে জলের সাথে এই রস মিশে যায়। ফলে তা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। যার ফল হজমের সমস্যা গ্যাস। তাই খাবার খাওয়ার কিচ্ছুক্ষণ আগে আধঘণ্টা আগে জল খেয়ে বসুন। নাহলে খাবার ১ ঘণ্টা পর জল খান।
ভালো করে চিবিয়ে না খাওয়া
অনেকেই বেশ তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলেন। খাবার চেবানোর দিকে মন দেন না। অল্প চিবিয়েই গিলে ফেলেন। এটা ঠিক নয়। খাবার হজমের সাথে চিবিয়ে খাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। খাবার ঠিকমত চিবিয়ে না খেলে পাকস্থলীর ওপর চাপ পরে। ঠিকমত হজম হয় না। অন্যদিকে ভালো করে চিবিয়ে খেলে খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। তাই খাবার খাওয়ার সময় মন দিয়ে খান। তাড়াতাড়ি করে বা অন্য কাজ করতে করতে খাবেন না।
ধূমপান অভ্যাস
ধূমপান বা অ্যালকোহল এমনিতেই বদ অভ্যাস। অতিরিক্ত ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন শরীরের হজম প্রক্রিয়ায় বাঁধার সৃষ্টি করে। তবে শুধু এগুলোই নয় বাদ দিতে হবে অতিরিক্ত তেলও। যতটা সম্ভব কম তেলে রান্না করুণ। সেদ্ধ খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এছাড়াও সন্ধ্যাবেলা চপ সিঙ্গারা থেকে একটু বিরত থাকতে হবে। কারণ আগেই বললাম বিকেলের পর শরীরের হজম ক্ষমতা একেবারে কমে যায়। তাই সন্ধ্যাবেলা চপ সিঙ্গারা ঠিকমত হজম তো হয়ই না, তার ওপর রাতের খাবার, বুঝে দেখুন কতটা চাপ দিচ্ছেন। গ্যাস্ট্রিক তো অবধারিত।
যারা গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন এর মধ্যে কোন একটি অভ্যাসও থাকলে সেটি বর্জন করুণ। বিশেষ করে বিকেলের পর শরীরে কোনোরকম চাপ দেবেন না। বিকেলের চপ সিঙ্গারা থেকে একটু দূরে থাকতে হবে যদি শরীর ভালো রাখতে চান। আর অন্যান্য বিষয়গুলিও মাথায় রাখুন দেখবেন অনেকটা উপকার পাবেন।
মন্তব্য করুন