আপনি যদি আরথ্রাইটিসে ভোগেন তাহলে আপনার চিন্তার দিন আজই শেষ। ওষুধ তো অনেক খেলেন, ডাক্তারও নিশ্চয়ই অনেক দেখিয়েছেন? কোনো ফল পাননি তো? টেনশন না করে আসুন পেনকিলার খাওয়া বন্ধ করে কয়েকটা ঘরোয়া উপায় ট্রাই করা যাক এবার। দেখুন তো আরথ্রাইটিস ভ্যানিশ হয় কিনা?
আরথ্রাইটিস কি?
আরথ্রাইটিস হল হাত বা পায়ের হাড়ের সংযোগস্থলের একরকম প্রদাহ যা হাত ও পায়ের হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা বাড়ায় ও হাত ও পাকে শক্ত, স্টিফ করে দেয়।
আরথ্রাইটিস থেকে মুক্তির জন্য আপনার ডায়েটে জাস্ট কয়েকটা জিনিস অ্যাড করুন। তবে আরথ্রাইটিস থেকে পার্মানেন্টলি মুক্তির জন্য আপনাকে নিয়ম করে সেই জিনিসগুলি খেয়েই যেতে হবে।
ডাক্তাররা যে সমস্ত ওষুধ দেন আরথ্রাইটিসের জন্য, সেগুলো অধিকাংশ সময়েই পেনকিলার হয়, যার নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই ওষুধ অ্যাভয়েড করুন ও ডায়েট বদলান।
দারচিনি
আরথ্রাইটিসের হাত থেকে সহজে মুক্তি পাবার জন্য দারচিনি কিন্তু আপনার বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। দারচিনির অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ আরথ্রাইটিসের ব্যথা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। তবে বেশী মাত্রায় দারচিনি খেলে তা কিন্তু শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
গোলমরিচ
অতি প্রাচীনকাল থেকেই কিন্তু গোলমরিচ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যথার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গোলমরিচে প্রচুর পরিমাণে ক্যাপসাইসিন থাকে যা আরথ্রাইটিসের মারাত্মক ব্যথা থেকে আপনাকে সহজে মুক্তি দিতে পারে। তাই আপনার ডায়েটে আপনি গোলমরিচ যোগ করে দেখতেই পারেন।
গ্রিন টি
গ্রিন টিতে থাকা পলিফেনল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া গ্রিন টি হাড়ের সংযোগস্থলকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে। গ্রিন টি হাড়ের প্রদাহকে দূর করে। তাই রোজ নিয়ম করে এক কাপ চা খান। দেখবেন ব্যথা খানিক নিয়ন্ত্রণে থাকছে।
হলুদ
আরথ্রাইটিস রোগীদের জন্য হলুদ কিন্তু খুবই উপকারী। হলুদে থাকা কারকিউমিন প্রদাহ দূর করে ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। রোজ সকালে উঠে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে যদি খেতে পারেন তাহলে আরথ্রাইটিসের ব্যথার সহজে উপকার পেতে পারেন।
এছাড়া আদা ও রসুনেরও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ থাকায় তা আরথ্রাইটিসের ব্যথা ও প্রদাহকে খানিক কমাতে সাহায্য করে। আর দেখবেন আপনার ডায়েটে যেন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি হাড়ের সংযোগস্থলের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় ফলে হাড়ের ক্ষয় কম হয় আর আরথ্রাইটিসের সম্ভাবনা কমে।
তবে যতই আপনার ডায়েটে বদল আনুন না কেন আরথ্রাইটিসের অব্যর্থ ওষুধ কিন্তু একমাত্র ব্যায়াম ও কিছু নিয়মে থাকা। তাই জলদি ওজন কমান। আপনার বাড়তি ওজন কিন্তু আপনার আরথ্রাইটিসের ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গন্ধ কি আরথ্রাইটিসের ব্যথায় আরাম দেয়?
আজ্ঞে হ্যাঁ। বিভিন্ন রিসার্চ থেকে জানা গেছে নানারকম ভেষজ উদ্ভিদের গন্ধ কিন্তু আপনাকে আরথ্রাইটিসের ব্যথা থেকে খানিক আরাম দিতে পারে। যেমন, ল্যাভেন্ডারের গন্ধ আপনার স্ট্রেসের জন্য দায়ী করটিসলের মাত্রা কমায় ও ব্যথার বোধের থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। তাছাড়া রোজমেরি ও পুদিনার রিফ্রেশিং গন্ধও আপনাকে ব্যথার বোধের থেকে আরাম দিতে পারে। রোজ ১/৪ কাপ ভেজিটেবল তেলের মধ্যে এইসমস্ত ভেষজ জিনিস দিয়ে দেখুন। খানিক উপকার পাবেন।
হাত-পায়ের ব্যায়াম
আরথ্রাইটিসের ব্যথা আপনার হাত-পা-কে স্টিফ করে দিতে পারে। তাই বসে না থেকে টুকটাক কাজ করুন। ব্যথা লাগলেও জোর করে করার চেষ্টা করুন। নিজের কাজ নিজেই করুন। আর রান্নাঘরের কাজকর্ম কাজের মাসির হাতে না ছেড়ে নিজে করার চেষ্টা করুন।
বাসন পরিষ্কার করা বা ধোয়ার মতো কাজ কিন্তু আপনার হাতের যথেষ্ট পরিশ্রম করায়। ফলে হাতের স্টিফনেস খানিক কমেও আর হালকা ব্যায়ামও হয়ে যায়। ডাক্তার দেখিয়ে তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী অল্প কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ নিয়ম করে করুন রোজ অন্তত আধ ঘণ্টা করে। এছাড়া নিয়ম করে হাঁটাহাঁটিও করুন।
হট অ্যান্ড কোল্ড ট্রিটমেন্ট
এটি করার জন্য আপনার দুটি পাত্র লাগবে। একটি পাত্রে জল দিয়ে তাতে বরফের কিউব দিন। ও আরেকটি পাত্রে গরম জল দিন। এবার অল্টারনেট করে আপনার ব্যথার জায়গায় এক মিনিট মতো করে দিয়ে যান। এই হট অ্যান্ড কোল্ড ট্রিটমেন্ট যদি নিয়ম করে রোজ করতে পারেন তাহলে উপকার পাবেনই।
তাহলে দেখলেন তো ওষুধের বদলে ঘরোয়া পদ্ধতিতেও কেমন আরথ্রাইটিস কমানো যায়? তাই আজ থেকে ওষুধকে টাটা বলুন আর নিজের লাইফস্টাইল বদলে ফেলুন। দেখবেন কেমন ফিট থাকছেন! আরথ্রাইটিসের ব্যথা আর আপনার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।
মন্তব্য করুন