আলিয়া ভট্টের অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি নজর কাড়ে তাঁর সুন্দর মাখনের মতো মোলায়েম ও জেল্লাদার ত্বক। অনেকেই জানতে চান তাঁর সুন্দর ত্বকের গোপন রহস্যের কথা।
আলিয়ার স্কিন কেয়ার কিট
শত ব্যস্ততার মধ্যেও আলিয়া তাঁর ত্বকের যত্ন নিতে ভোলেন না। প্রতিদিন নিয়ম করে তিনি ত্বকের জন্যে বেশ কিছুটা সময় বের করেন। আজকে তাঁর স্কিন কেয়ার রুটিনের হাল-হকিকত তুলে ধরার চেষ্টা করলাম আপনাদের সামনে।
আলিয়ার স্কিন কেয়ারের যাবতীয় প্রোডাক্ট থাকে তাঁর স্কিন কেয়ার কিটের মধ্যে। যেহেতু তাঁকে প্রতিদিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে হয়, ফলে কাজের মাঝে অল্প সময় পেলেই সেটিকে নিজের ত্বকের যত্নে লাগান তিনি।
এপ্রসঙ্গে আলিয়া জানালেন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় না থাকায় কখনও তিনি স্কিন কেয়ার গাড়িতেই করেন, আবার কখনও শুটিংয়ের ফাঁকেই সেরে নেন। এর জন্যেই সারাক্ষণ ‘ট্র্যাভেল ফ্রেন্ডলি’ স্কিন কেয়ার কিটটি নিজের কাছে রাখেন তিনি।
১. স্কিন ম্যাসাজার
আলিয়া প্রতিদিন প্রায় সকাল সাতটার সময় ঘুম থেকে উঠে পড়েন। আপনারা সবাই জানেন, মুখের মধ্যে রক্তচলাচল না হলে ত্বক রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। আলিয়া তাই মুখের রক্তচলাচল যথাযথ ও স্বাভাবিক রাখার জন্যে সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্কিন ম্যাসাজার ব্যবহার করেন।
এই ম্যাসাজারে থাকে একটি রোলার, যেটি ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। মুখের বলিরেখা দূর করতেও এর জুড়ি নেই। তবে এর আগে তিনি মুখে স্প্রে করে মুখমণ্ডলের ত্বককে নরম করে নেন। মজার ব্যাপার, এই স্কিন ম্যাসাজার ব্যবহারের অনুভূতিটিও কিন্তু দুর্দান্ত। বেশিরভাগ সময়েই ঘুম থেকে ওঠার পর ঘুম ভাব থেকে যায়।
আগের রাতের ক্লান্তি সকালে পুরোপুরি দূর হয় না। সেক্ষেত্রে এই স্কিন ম্যাসাজার আলিয়াকে দারুণভাবে সাহায্য করে। ত্বকের যাবতীয় ক্লান্তি কাটিয়ে স্কিন ম্যাসাজার ত্বককে ও সেই সঙ্গে শরীরকেও চনমনে করে তোলে। আলিয়ার কথায়, মোটে এক-দু’মিনিট প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এই স্কিন ম্যাসাজার ব্যবহার করলেই অনেক উপকার পাওয়া যায়। এবং দিনের শুরুটাও সুন্দর হয়।
২. ডার্ক সার্কেল দূরে রাখতে
রাত জাগা, শুটিংয়ের ক্লান্তি, স্ট্রেস, এর জন্যে কখনও-কখনও চোখের তলাতেও কালি বা ডার্ক সার্কেল হতে পারে অভিনেত্রীদের। ডার্ক সার্কেল একবার দেখা গেলে সেটি দূর করা খুব কঠিন হয়ে যায়। ফলে এবিষয়ে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। স্কিন ম্যাসাজার ব্যবহার করার পরই আলিয়া তাই চোখের তলায় লাগিয়ে নেন তাঁর প্রিয় ‘আই ক্রিম’। এটি শুধু ডার্ক সার্কেলকে দূর করে তাই নয়, সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের তলার ত্বকে যে শুষ্কভাব আসে, সেটিকেও দূরে রাখতে সাহায্য করে।
৩. ওয়ান স্টপ সলিউশন ‘নাইসিনামাইড’
এরপরের ধাপে আলিয়া তাঁর মুখে ওয়াটারমেলন গ্লো নাইসিনামাইড লাগান। নাইসিনামাইডের কার্যকারিতা একাধিক। এটি আদতে ভিটামিন, যা মুখের ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। যারা নিয়ম করে রাস্তাঘাটে বেরন, তাঁদের ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে দুর্দান্তভাবে সাহায্য করে নাইসিনামাইড।
আলিয়া জানালেন, নাইসিনামাইড তাঁর মুখ থেকে যাবতীয় বলিরেখা, ফাইন লাইন দূর করে ত্বককে তরতাজা রাখে এবং বয়সের ছাপকে দূরে রাখে। পলিউশনের প্রভাবেও আমাদের মুখের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ও মুখে বয়সের ছাপ পড়ে। নাইসিনামাইড পলিউশনের হাত থেকে আলিয়ার ত্বককে রক্ষা করে ও ত্বকের কোষের রিজেনারেশনে সাহায্য করে।
মুখের পাশাপাশি গলা ও হাতও যেহেতু খোলা থাকে, তাই এইসমস্ত অংশের ত্বকও অনেকসময় দূষণের কারণে কুঁচকে যায়। অনেকসময় ফাইন লাইন দেখা যায়। তাই আলিয়ার পরামর্শ, যা মুখে লাগানো হয়, সেই একই প্রোডাক্ট গলায় বা হাতে লাগালেও লাগালেও কিন্তু সেটি সমানভাবে উপকারে আসে। গলা ও হাতের চামড়া টানটান থাকে।
৪. আন্ডার আই পাফিনেস?
এরপর তিনি ব্যবহার করেন ‘ক্যাফেইন সলিউশন ড্রপস’। তবে এটি সবার ব্যবহার না করলেও চলে। আলিয়া জানালেন, সকালবেলায় উঠে তাঁর চোখের তলা খানিক ফোলা-ফোলা থাকে, তাই চোখের তলায় জমে থাকা জল দূর করতে তিনি এটি ব্যবহার করেন। তবে যাদের এই সমস্যা নেই, তাঁদের এটি না ব্যবহার করলেও চলে।
৫. ময়েশ্চারাইজার মাস্ট
আলিয়ার স্কিনকেয়ার রুটিনে ময়েশ্চারাইজার মাস্ট। এজন্য তিনি ওয়াটারমেলন জুস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। যারা নিয়ম করে বাইরে বেরন, তাঁদের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা আবশ্যক। এটি ত্বককে ভিতর থেকে আর্দ্র করে তোলে।
আলিয়া দিনভর শুটিং করেন, ফলে কড়া আলোয় দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে তাঁর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই ময়েশ্চারাইজার তিনি নিয়ম করে ব্যবহার করেন। এছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গেও ত্বক যাতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সেজন্যেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার, সাফ জানালেন তিনি। ঠিক যেমন করে আমরা জল খাই, সেভাবেই ত্বককেও ময়েশ্চারাইজারের মাধ্যমে জল খাওয়াতে হবে, এটাই বক্তব্য আলিয়ার।
৬. সানস্ক্রিন লোশন
আলিয়ার স্কিনকেয়ার রুটিনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সানস্ক্রিন লোশন। রোদে না বেরলেও সানস্ক্রিন লাগিয়ে রাখা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সানস্ক্রিন সূর্যের ক্ষতিকত অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। এছাড়াও ত্বকের বয়স কমাতে এবং সানবার্নের সম্ভাবনা হ্রাস করতে সানস্ক্রিনের জুড়ি নেই। সাধারণত মেকআপের আগেই সানস্ক্রিন মুখে লাগিয়ে নেন তিনি।
তবে এইসমস্ত কিছু করার আগেই আলিয়া মুখকে ভাল করে পরিষ্কার করে নেন। এই ‘ক্লিনজিং’-এর জন্য তিনি ফোম, জেল ইত্যাদি ফেসওয়াশ ব্যবহার করে থাকেন। মনে রাখবেন, মুখকে পরিষ্কার না রাখলে কিন্তু কোনও স্কিনকেয়ারেই কাজ দেবে না।
যারা নিয়ম করে ফলো করার জন্য একটি স্কিনকেয়ার রুটিন চাইছেন, তাঁরা রোজ আলিয়া ভট্টের এই সিম্পল রুটিন ফলো করুন, তাহলেই পেয়ে যাবেন আলিয়ার মতো উজ্জ্বল ত্বক।
মন্তব্য করুন