বেশীর ভাগ লোকদের প্রিয় খাবারের মধ্যে দই অবশ্যই থাকে। সাধারণত আমরা দুপুরে খাবার পর দই খেয়ে থাকি। দই খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন স্বাস্থ্যের পক্ষেও অত্যন্ত উপকারী।
আমরা জানি দই দুধ থেকে তৈরি হয়। অন্তত ৪৫০০ বছর আগে থেকে মানুষ দই বানানো ও খাওয়া শুরু করেছে। দই তৈরি হয় দুধের ব্যাক্টেরিয়া গাজন হতে। পুষ্টিকর খাওয়ার মধ্যে দইয়ের জুড়ি মেলা ভার।
পৃথিবীর সব জায়গাতেই দই খাওয়ার চল আছে। দুই রকমের দই আমরা সাধারণত বানিয়ে থাকি। টক দই এবং মিষ্টি দই। যদিও দুই ধরনের দই মানুষ পছন্দ করে থাকে তাও বলা যায় যে টক দই কিন্তু বেশী উপকারী মিষ্টি দইয়ের থেকে।
সাধারণ মানুষরা দুপুরের খাবারের পর দই খেয়ে থাকে আর এই অভ্যাসটি খুবই উপকারী তাই আজ জানা যাক সেই উপকার গুলো যা দই আমাদের শরীরে করে থাকে।
১. দই আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী বানায়
২০২১ সালে দাঁড়িয়ে প্রযুক্তি যেমন উন্নতি করেছে ঠিক সেইভাবেই এই উন্নতি এই সমাজকে দুষনময় করে তুলেছে। যা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে খুবই দুর্বল করে তুলেছে। দই আমাদের শরীরের সেই ইমিউনিটি সিস্টেমকে আবার শক্তিশালী করে তোলে এবং বিভিন্ন রোগের থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
২. দই আমাদর হজম শক্তিকে বাড়ায়
সারাদিন আমরা নানা রকমের খাবার খেয়ে থাকি। অনেক সময়ই আমাদের শরীর তা হজম করতে অক্ষম হয়। তার ফলে পেটের নানা অসুবিধা দেখা দেয়। দই কিন্তু আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে যার ফলে আমাদের শরীরের পরিপাক শক্তি বারে এবং পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়। খাবার খাওয়ার পর দই খেলে তা খাবার পরিপাক হতে সাহায্য করে।
৩. দই ওজন কমায়
আমাদের শরীরের চর্বি আমাদের মোটা করার সাথে সাথে অনেক অসুখ ও বহন করে নিয়ে আসে। চর্বিতে একটি হরমোন সেক্রিট করে যার নাম কর্টিসল। এই হরমোনটি স্থূলতা বাড়ায় আমাদের শরীরে যা ডেকে আনে বহু রোগ। দই কিন্তু এর থেকে আমাদের রক্ষা করে। দইয়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে যা কর্টিসলের ভারসাম্যকে বজায় রাখে। আর তাই আমাদের স্থুলতার সম্ভাবনা কে কমায়।
৪. আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
দই আমাদের হার্টের মধ্যে ধমনীর মধ্যে কোলেস্টেরলকে হওয়া থেকে আটকায়। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর দই খেলে অবশ্যই আমাদের হার্ট সুরক্ষিত থাকে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সংক্রান্ত অসুখও দূরে থাকে।
৫. দই দাঁতকে মজবুত করে তোলে
ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় এবং দাঁতের প্রধান উপাদান। বেশী করে মহিলাদের শরীরে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরী। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে অনেক মহিলাদের ক্ষেত্রে হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। আগেই যেমন লিখেছি যে দইয়ে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের হাড়ের জন্য উপকারী। তাই সুস্বাদু খাবারের সাথে সাথে যদি আমাদের দাঁত আর হাড় সুরক্ষিত থাকে তাহলে ক্ষতি কি?
৬. ছোট বাচ্চাদের জন্য দই খাওয়া খুবই উপকারী
বাচ্চাদের পাচনতন্ত্র দুর্বল থাকে। সহজেই তারা সব খাবার খেয়ে হজম করতে পারে না।দই কিন্তু এমনই একটি খাদ্য যা সহজে বাচ্চারাও হজম করতে পারে। দই এর মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে যা বাচ্চাদের নরম হাড়কে শক্ত বানায় আর বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। দইয়ে যে প্রোটিন থাকে তা সহজেই বাচ্চারা হজম করতে পারে। তাই দই বাচ্চাদের জন্যও খুবই প্রয়োজনী।
৭. দই আমাদের বিষন্নতাকে দূর করে ও চাপ মুক্ত করে
আজকের দিনের মতো প্রতিযোগিতামূলক সমাজে বিষন্ন এবং চাপমুক্ত থাকা খুবই কঠিন। কিছু ব্যাক্টেরিয়া যা আমাদের অন্ত্রে থাকে সেই সকল ব্যাক্টেরিয়া থেকে আমাদের মস্তিকের চাপ কে নিয়ন্ত্রণ করে। দই আমাদের মস্তিষ্কের চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ।
৮. আলসারের সম্ভাবনা কমায়
দই আমাদের পেটে আলসার হওয়ার সম্ভবনাকে অনেকটাই আটকায়। আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রকেও সুরক্ষিত রাখে দই। আমাদের পেটের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকেও দুর সরিয়ে রাখে। তাই দুপুরের খাওয়ার পর দই খাওয়া একটি খুবই ভালো অভ্যাস।
৯. যোনি সংক্রমণ থেকে রক্ষা দেয়
মেয়েদের জন্যই দই আরো বেশি উপকারী। দইয়ে লাক্টিলবাসিলাস আসিডফিলাস থাকে। এই ব্যাক্টেরিয়া আমাদের খাদ্যে খাজা চিনির সাথে প্রতিক্রিয়া করে আর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তৈরি করে যা যোনির ছত্রাক সংক্রমণকে দূর করে।
১০. কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
দইয়ের মধ্যে রক্তের কোলেস্টরলকে কমানোর ক্ষমতা আছে। কোলেস্টেরল থেকে আমাদের নানা হৃদয় সংক্রান্ত অসুখ আর স্ট্রোক থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। তাই এইটা নিয়মিত দুপুরের খাবার পর খাওয়া খুবই উপকারী।
যে বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন
- দুপুরের খাবার খাওয়ার পর দই খাওয়া আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই ভালো। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে দরকারের থেকে বেশি যেন দই না খেয়ে ফেলি আমরা।
- দিনে ৩০০-৫০০গ্রাম দই খাওয়া ভালো কিন্তু তার থেকে বেশি না খাওয়াই গ্রহণযোগ্য।
- বেশি দই খেলে আমাদের শরীরে অত্যাধিক ক্যালসিয়াম সৃষ্টি হতে পারে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জটিলতা বাড়াতে পারে।
- মিষ্টি দইয়ের থেকে টক দই খাওয়া বেশি উপকারী।
- টক দইয়ের সাথে কিছু ছোট করে কাটা পুদিনার পাতা, ছোট করে কাটা ফল এবং সবজি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে খেতে পারেন। এইটা দুপুরের খাবার পর খেলে আপনাদের শরীর ভালো থাকবে আর তার সাথে একটা সুস্বাদু খাবার খাওয়ারও সুযোগ পেয়ে যাবেন।
মন্তব্য করুন