আজকের দিনে একটা মিক্সার গ্রাইন্ডার রান্নাঘরে রাখা কিন্তু লাক্সারি করা বা আপনি কত বিত্তবান সেটা দেখানো বোঝায় না। আজকের দিনে চলতে গেলে আমাদের সকলেরই বাড়িতে মিক্সার গ্রাইন্ডারের খুবই প্রয়োজন। আমরা সবাই এখন খুবই ব্যস্ত। তাই আমাদের কারোরই অনেক সময় নিয়ে বসে শিলনোড়ায় মশলা বাটা সম্ভব নয়। তার জন্য দরকার স্মার্ট কিছুর, যা হল এই মিক্সার গ্রাইন্ডার। কিন্তু বাজারে এতো কোম্পানি থাকতে কোন মিক্সার গ্রাইন্ডার ভালো হবে, নিশ্চয়ই ভাবছেন সেই প্রশ্ন। চিন্তা করবেন না। আমরা আজ বলে দেব মিক্সার গ্রাইন্ডার কেনার আগে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরী।
যা যা মনে রাখা দরকার কেনার আগে
দোকানে দাম দিয়ে যখন জিনিস কিনছেন তখন ভালোটাই আমরা কিনব। আর তাই আজ আমরা আপনাদের বলে দেব ঠিক কী কী আপনারা দেখে নেবেন একটা মিক্সার গ্রাইন্ডার কেনার সময়ে।
১. মিক্সার গ্রাইন্ডারের ওয়েটেজ কত | MINIMUM WATTAGE
মিক্সার গ্রাইন্ডারের কেন্দ্রীয় শক্তি হল মোটর যা মিক্সারকে চালু করে। আর গুরুত্বপূর্ণ হল ওই মোটরের মধ্যে থাকা মোটর। যদি আপনি মিক্সিতে ফলের রস বানাতে চান, তাহলে অতিরিক্ত ওয়েটের মোটর নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে এমন মিক্সি নিতে হবে যার ওয়েটেজ ৭৫০ ভোল্ট মোটর। সাধারণত আপনি বাজারে ২০০, ২৫০, ৫০০, ৫৫০, ৭০০ আর ৭৫০ ওয়াটের মোটর থাকে এমন মিক্সি পেয়ে যাবেন।
২. কতগুলি জার আছে | NUMBER OF JARS
মিক্সি কেনার আগে দেখে নিন আপনি মিক্সার গ্রাইন্ডারে কটা জার পাচ্ছেন। মোটামুটি তিন থেকে চারটে জার আপনি পেতে পারেন এক সঙ্গে। যদি আপনি ফলের রস বানাতে চান, তাহলে আপনাকে আরেকটি জার নিতে হবে।
৩. মিক্সারের স্পিড কত | MIXER SPEED
মিক্সারের স্পিড কত সেটাই ঠিক করে কোন মিক্সার সবচেয়ে ভালো। স্পিড মানে কিন্তু শুধু বেশি স্পিড নয়। দেখুন ফলের রস তখনই ভালো হবে যখন স্পিড থাকবে অল্প। আবার মশলা গুঁড়ো করার সময়ে স্পিড থাকবে মাঝারি। আর চাটনি বা ওই জাতীয় কিছু করার সময়ে স্পিড থাকবে দ্রুত। অর্থাৎ একটি ভালো মিক্সিতে তিন ধরণের স্পিডই থাকতে হবে।
৪. কী ধরণের জিনিস দিয়ে তৈরি আর ডিজাইন | JAR MATERIAL & DESIGN
মিক্সি কেনার সময়ে দেখে নিন ঠিক কোন মেটালের তৈরি সেই মিক্সিটি। সাধারণত ৩০৪ ফুড গ্রেড স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি জারকেই ভালো হিসেবে ধরা হয়। এটি ব্যবহার করলে দেখবেন এতে সহজে জং পড়ে না।
মেটাল বেছে নেওয়ার পর আপনাকে দেখতে হবে কী ডিজাইনের মিক্সি আপনি কিনবেন। যে কোনও একটা কিছু তো কিনে নিলেই হল না। দেখতে হবে আপনার রান্নাঘরের রঙের সঙ্গে তা মিলছে কিনা। মিক্সির নব হতে হবে ছোট এবং স্টাইলিশ। আপনি সেভাবেই বেছে নিন।
৫. কতখানি নিরাপদ সেই মিক্সি | SAFETY OF THE MIXER GRINDER
মিক্সি কেনার আগে আপনাকে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিজের কাছে তৈরি রাখতে হবে-
ক. মিক্সির উপরে থাকার সময়ে জারের সুরক্ষার জন্য কোন কোন পদক্ষেপ করা হয়েছে?
খ. হাত থেকে ব্যবহার করতে গিয়ে পড়ে গেলে জারের সুরক্ষার কী ব্যবস্থা আছে?
গ. হঠাত করে বিদ্যুৎ চলে গেলে আবার চলে এলে সেই সময়ের কী এফেক্ট পড়তে পারে মিক্সির উপর?
ঘ. মিক্সিতে থাকা ইন্ডিকেটর টার্ন অন বা অফ করা যায়?
ঙ. জার বন্ধ করার সময়ে কী ব্যবস্থা আছে?
যদি আপনি যে মিক্সিটা কিনছেন তার মধ্যে এই সব প্রশ্নের উত্তর থাকে ও তা যদি আপনাকে সন্তুষ্ট করে, তাহলে আপনি মিক্সি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন।
এছাড়া, একটি মিক্সি কেনার সময়ে আপনাকে আরও কিছু জিনিস দেখতে হবে:
১. সবার আগে আপনার বাজেট দেখে নিন। বাজেট ঠিক করা শুধু তো ব্যবসায়ী মানুষদের জন্যই নয়, সাধারণ গৃহস্থের জন্যও খুব দরকার। তাই সেই মিক্সিই কিনুন যার দাম আপনার পকেটের সঙ্গে মিলবে।
২. কেনার আগে দেখুন এই মিক্সির স্পেয়ার পার্টস বাজারে পাওয়া যায় কিনা! না পেলে কিন্তু পরে মিক্সিতে সমস্যা দেখা দিলে পাল্টাতে সমস্যা হবে।
৩. আপনার পছন্দের মিক্সি নিয়ে একটু গুগুল ঘেঁটে দেখুন সেই মডেল সম্বন্ধে অন্যান্য ক্রেতাদের কী মতামত।
৪. মিক্সিতে খুব বেশি শব্দ হয় কিনা তাও কিন্তু বিচার্য। সাধারণত, ৮০-৯০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা গ্রাহ্য করা হয়। তার বেশি শব্দ করলে কোনও মতেই তা বাঞ্ছিত নয়।
৫. মিক্সার গ্রাইন্ডারে থার্মাল-কাট সুইচ আছে কিনা সেটা দেখে নিন। কারণ এই সুইচই অতিরিক্ত তাপ বেড়ে গেলে মিক্সিকে সুরক্ষিত রাখবে।
৬. দেখুন আপনার মিক্সিতে জারগুলো মজবুত হয়ে বসছে কি না। না হলে কিন্তু সেই মিক্সি মোটেই কেনা ঠিক নয়। এতে বিপদ হতে পারে।
৭. আর কেনার আগে সব সময়ে নেট সার্চ করুন। একটা ছোট্ট গবেষণা কিন্তু অনেক টাকা আর সময় বাঁচিয়ে দিতে পারে। ভালো করে রিভিউ পড়ুন।
ভারতীয় বাজারে কত ধরণের মিক্সার গ্রাইন্ডার পাওয়া যায়
চাটনি না খেলে কী আর খাওয়ার মজা আসে! আর এই চাটনি বানানোর জন্য কিন্তু হরেক রকমের মিক্সি আছে বাজারে। এক সঙ্গে দশ রকমের মিক্সি আপনি পেতে পারেন।
কিন্তু আপনার ধন্দ্ব মেটাতে আমরা এখানে তিনটি প্রথম সারির মিক্সার গ্রাইন্ডারের তুল্যমূল্য আলোচনা করলাম।
১. BOSCH TRUE MIXX PRO MIXER GRINDER 1000 WATT- MGM8842MIN BLACK
দ্য বোস ট্রু মিক্স প্রো মিক্সার গ্রাইন্ডার আপনার রান্নাঘরের শোভা বাড়ানোর জন্য এক্কেবারে প্রস্তুত। একে ভালো লাগার অনেক কারণ আছে-
ক. আপনার কাজের সাহায্য করার জন্য এতে আছে ১০০০ ওয়াটের মোটর যা দ্রুত কাজ করবে।
খ. ব্লেড তৈরি হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে। আর ব্লেড যথেষ্ট ধারালো। তাই সহজে মশলা পিষে যায়।
গ. এতে আছে শক্তিশালী ঢাকনা যার জন্য আপনি মিক্সি চালিয়ে অন্য কাজও করতে পারেন।
ঘ. স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি জার সহজে জং ধরে না।
ঙ. এতে কিছুই ওভারলোড হয়ে পড়ে যাবে না কারণ এতে আছে ওভারলোড প্রোটেক্টর।
চ. এর মোটর রেটিং হল ৩০ মিনিট। ( ৫ মিনিট অন আর ২ মিনিট অফ, মোট সার্কেল ৬ বার)
ছ. চার জনের পরিবারে এটি বেস্ট মিক্সি।
পছন্দ না করার কারণ?
ক. এর ছোট জারে আদার মতো মশলা পেষা যায় না।
খ. ভারী মোটরের জন্য এতে শব্দ হয় বেশি।
গ. এর বর্তমান মূল্য খানিক বেশি।
দামঃ Rs. ৭,৯৯৯/-
ছাড় দিয়েঃ ৭,৭৬৫ টাকা ( পরিবর্তন সাপেক্ষ )
২. SUJATA DYNAMIX DX 900- WATT MIXER GRINDER WITH 3 JARS WHITE
অনেক বছর ধরে রান্নাঘরে গর্বের সঙ্গে রয়েছে সুজাতা মিক্সার। অনলাইনে আপনি এটা পেতে পারেন ৫১৭৫ টাকায়। যারা এটা কিনেছেন তাঁরা এর সম্বন্ধে বলেছেন,
ক. আপনার কাজে গতি আনবে এর ডবল বল বিয়ারিং ৯০০ ওয়াটের মোটর।
খ. এর বড় জারে আপনি সহজেই থকথকে মশলা পিষে নিতে পারবেন আর গুঁড়ো করতে বা চাটনি করতে ছোট জার তো আছেই।
গ. ৯০ মিনিট একটানা চলতে পারে।
ঘ. এর ব্লেড তৈরি হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে, তাই তাড়াতাড়ি মশলা পিষে যায়।
ঙ. কাজ করার সময়ে খুব বেশি যে শব্দ হয় তাও নয়।
চ. নিরাপত্তামূলক সব ব্যবস্থাই এর মধ্যে করা আছে। তাই নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন।
অনেকে এটি অপছন্দ করেছেন এর থেকে বেশি শব্দ হয় বলে। কিন্তু কোম্পানি গ্যারান্টি দিয়েছে যে শব্দ নাকি খুব কমই হয়। তাও অনেকে তা বিশ্বাস করে না।
আমাদের মতামতঃ যদি কেউ সারা জীবনের জন্য এরকম মেশিন চান, তাহলে তিনি এটি কিনতে পারেন।
দামঃ Rs. ৫১১৯/-
৩. PREETHI ZODIAC MG 218 750-WATT MIXER GRINDER WITH 5 JARS
এটি খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। ৬৭৮১ টাকায় এটি পাওয়া যায়।
ক. কোনও আলাদা ইন্সটলেশনের দরকার হয় না। যদি কিছু সমস্যা হয় তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে- ৯৯৪০০০০০০৫।
খ. মোটর কাজ করার সময়ে ৮০-৯০ ডেসিবেল শব্দ হয় মাত্র। এটি কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড শব্দ মাত্রা।
গ. ৭৫০ ওয়াট মোটরের ভেগা ডব্লিউ ৫ মিক্সার একে আরও কার্যকরী বানিয়েছে।
ঘ. এতে থাকা তিনটে জারের মধ্যে আপনি আলাদা করে মশলা আর ফলের রস করে নিতে পারবেন।
ঙ. সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, এর সেফটি ইন্ডিকেটর ওভারলোডেড হয়ে গেলে প্রথমে কমলা তারপর লাল হয়ে যায়।
চ. কোম্পানির পক্ষ থেকে মিক্সারে ২ বছরের আর মোটরে ৫ বছরের গ্যারান্টি থাকে।
অপছন্দ করার কারণ?
ক. এর দাম সামান্য বেশি।
খ. অনেকে অভিযোগ করেন এতে বেশি শব্দ হয়।
আমাদের মতামতঃ যদি আপনি বেশি টাকা দিয়ে ভালো জিনিস পান তাহলে এটি আপনি কিনে নিন। সামান্য বেশি কিছু টাকা দিয়ে পরবর্তী বছরে রান্নাঘরে ভালো থাকুন।
দামঃ Rs. ৬৭০০/-
লো প্রাইসড মিক্সার গ্রাইন্ডার
যদি আপনি আরও কম বাজেটের মধ্যে মিক্সার চান তাহলে এখানে রইল তার সন্ধান-
১. ACTIVA PLUTO PRO PLUS 650 WATT 4 JAR FULL ABS BODY MIXER GRINDER
অ্যামাজনে আপনি এটি মাত্র ১৬৫৯ টাকায় পেতে পারেন। এর মধ্যে আপনি যা যা পেতে পারেন-
ক. এতে আছে ৬৫০ ওয়াটের মোটর আর ওভারলোডেড মোটর প্রোটেক্টর।
খ. পলি কার্বোনাইট আনব্রেকেবেল মেটারিয়াল দিয়ে ব্লেড তৈরি। এটা কাজের ক্ষেত্রে সব রকম সুবিধে দেবে। চারটে জারে ১.২৫ লিটার মশলা ধরে যার মধ্যে ০.৮ লিটার থকথকে মশলা আর ০.৪ লিটার শুকনো মশলার জন্য।
গ. জারের দেওয়াল খুবই মোটা হয় যাতে সহজে না সমস্যা হয়।
ঘ. তিন মাত্রায় স্পিড তোলা যায়।
দামঃ Rs. ১৬৫৯/-
২. WESTINGHOUSE M50W3A- DJ MIXER GRINDER 500W WITH 3 JARS
কম দামে মিক্সার কিনতে হলে এটি কিন্তু আপনাকে সাহায্য করবে। অ্যামাজনে মাত্র ১৪৯৯ টাকায় আপনি পাবেন। কম দামের পাশাপাশি
এতে যা যা আপনি পাবেন-
ক. এতে আছে তিনটে জার যা শক্ত মেটাল দিয়ে তৈরি।
খ. জারের মুখ শক্ত করে ঢাকা থাকে। তাই মশলা পেষার সময়ে মশলা বেরিয়ে যায় না।
গ. ১.২ লিটারের জার আছে যাতে থকথকে মশলা তৈরি করা যায়। আর ০.৮ লিটারের জার গুঁড়ো মশলা করার জন্য আর ৪০০ এম.এল জার আছে চাটনি করার জন্য।
ঘ. স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি ব্লেড খুব ধারালো। তাই সহজে কাজ হয়ে যায়।
ঙ. এর ঢাকনা খুব শক্ত ভাবে বসে যায়। তাই আপনি সহজেই যে কোনও কাজ করতে পারেন।
চ. এর শক্তিশালী মোটর সব ধরণের মশলা পিষতে পারে।
দামঃ Rs. ১৪৯৯/-
এতো কিছু জানার পরে নিশ্চয়ই আপনি আজই যাবেন একটা মিক্সার গ্রাইন্ডার কিনতে। সব দিক বিচার করে একটা ভালো মিক্সার গ্রাইন্ডার কিনুন আর ভালো মশলা করে ভালো ভালো রান্না করুন।
Sukhobristi Phase 9: সুখবৃষ্টি প্রোজেক্ট এখন নিজের বাড়ি হাতের মুঠোয়
মন্তব্য করুন