গমের রসের উপকারিতার কথা আমরা অনেকেই জানি না। এর উপকারিতা ঠিক কি, তা এক কোথায় আপনাকে বোঝানো মুশকিল। কারণ এটি সেইরকম একটি বিরল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যার একাধিক গুন আপনার শরীরের প্রায় সমস্তরকম উপকারে লাগতে পারে। হ্যাঁ, অনেক ভেষজ উপাদানের ব্যবহারই তো করেছেন এতদিন বিভিন্ন কারণে। কিন্তু এবারে আপনাকে শুধুমাত্র গমের রসেরই এতগুলি উপকারিতার কথা বলব, যাতে আপনি চমকে যেতে পারেন। তার আগে আসুন জেনে নিই এমন কী থাকে এই গমের রসে যাতে এতকিছু সমাধান একসাথে থাকে!
গমের রসে কী কী উপাদান আপনি পাবেন ?
এটি এমনই একটি বিস্ময় যাতে মাটিতে থাকা ১০২টি উপাদানের ৯৮টিই আপনি পাবেন। পরিচিত সমস্ত রকমের মিনারেল আপনি এতে পেয়ে যাবেন। গাজরে আপনি যে পরিমাণে ভিটামিন এ পান, এতে তার দ্বিগুন পাবেন। ভিটামিন সি-ও পাবেন প্রভুত পরিমাণে। এছাড়াও পাবেন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, সবরকমের প্রোটিন ও ১৭ টি অ্যামিনো অ্যাসিড, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ৭০ শতাংশ ক্লোরোফিল। এই পরিমাণে ক্লোরোফিল থাকার কারণে এটি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একটি উল্লেখযোগ্য ও দুর্লভ উপাদান হিসেবে স্বীকৃত। এটিকে তাই বলা হয় ১০০ শতাংশ ন্যাচেরাল ফুড সাপ্লিমেন্ট। এছাড়াও “সুপার ফুড” বা “মিরাকেল ফুড” নামেও এটি পরিচিত। এতে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টি অক্সাইড ও এনজাইম থাকে।
ফলে এমন একটি বিস্ময়কর উপাদান মজুত আছে প্রকৃতিরই কোলে, যাতে করে আপনার শরীরের প্রায় সমস্ত পুষ্টিগুন পূরণ হতে পারে। এর উপকারিতা তাই গুনে শেষ করা যাবে না। আপাতত আমরা আপনাকে জানাবো ১৫ টি উপকারিতার কথা। আসুন, জেনে নেওয়া যাক।
গমের রসের উপকারিতা
১. লিভারের পক্ষে উপকারী
আপনার পেটের এই অংশটি যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে হজম না হওয়া থেকে শুরু করে আরও বিপজ্জনক নানান অসুখই হতে পারে আপনার। এ ক্ষেত্রে গমের রস সার্বিকভাবে আপনার লিভারকে পুরোপুরি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
২. শরীরকে দুষন থেকে রক্ষা করে
এতে থাকে শক্তিশালী এনজাইম ও বায়ো কেমিক্যাল যা দূষিত টক্সিন, ভারী ধাতু, এমনকি রেডিয়েশন থেকেও আপনার শরীরকে রক্ষা করে।
৩. ক্লোরফিলের প্রভুত জোগান
এতে ক্লোরফিলের ৭০ শতাংশ উপস্থিতি আপনাকে একসাথে একাধিক দুরূহ রোগের হাত থেকে বাঁচায়। এমনকি, ক্লোরফিলের এত ভালো জোগান আপনি আর কোনও ভেষজে পাবেন না। এই পরিমাণ ক্লোরোফিল রক্ত শোধিত করতে, হার্টের একাধিক সমস্যার ক্ষেত্রে ও অন্যান্য সমস্ত শারীরিক সমস্যায় খুবই গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা নিয়ে থাকে।
৪. আপনার বয়সকে ধরে রাখে
এতে থাকা এনজাইমের একাধিক উপকারিতার মধ্যে এটি একটি। আপনার বয়সের ছাপও আপনার শরীরে ও মনে পরবে না। বয়সের গতিও অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে এর নিয়মিত ব্যবহার।
৫. অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল
এটি একটি অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল উপাদান। আপনার শরীরে বাসা বেঁধে থাকা সমস্ত ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়াগুলিকে নির্মুল করার জন্য এটি একটি অদ্বিতীয় উপাদান।
৬. ত্বকের যত্নে ব্যবহার করুন
একজিমা, রোদে পুড়ে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এটিকে অয়েন্টমেন্টের মতো ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাবেন। ব্রন বা মুখের দাগের ক্ষেত্রেও এটির উপকারিতা পাবেন,
৭. ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী এটি
আপনার যদি থাকে ডায়াবেটিস, তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে দিয়ে এটি সেক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে।
৮. হার্টের ক্ষেত্রে উপকারী
এতে থাকা ক্লোরফিল আপনার কার্ডিওভাসকুলার মেকানিজমকে স্বক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
৯. আপনার যৌন ক্ষমতার বিকাশ ঘটায়
ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরফিল ও এনজাইমের ফলে আপনার শরীরে সেক্স হরমোনের ক্ষরনের কোনও খামতি হয় না। এতে আপনার লিবিডো ও সেক্সুয়াল ক্ষমতা বাড়ে। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে আপনার সঙ্গিকে খুশি করার আত্মবিশ্বাসেরও কোনও অভাব হবে না।
১০. দাঁতের ক্ষয় রদ করে
দাঁতকে দীর্ঘায়ূ করার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা গুরুত্বপুর্ন। দাঁতের মাড়িকেও এটি সুস্থ রাখে।
১১. খুশকিও দূর করে
আপনি যদি গমের রসকে মাথায় লাগিয়ে রাখেন ও তারপর ১৫ মিনিট পরে মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলেন, তাহলে তাহলে আপনার খুশকি নিয়ে দুশ্চিন্তাও মিতে যাবে।
১২. কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রনে রাখে
এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রনে রাখে।
১৩. গাঁটের ব্যাথাকে কমায়
যে বয়সই হোক না কেন এটি গাঁটের ব্যাথাকে কমানোর ক্ষেত্রেও একে কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন।
১৪. স্ট্রেস কমায়
গমের রসে থাকা ভিটামিন বি মানসিক স্ট্রেসকে অনেকটাই নিরসন করে। ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রেও কাজে দেয়।
১৫ আপনার নখের সৌন্দর্য্য বাড়ায়
এতে থাকা আয়রন আপনার নখের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেকটা প্রভাব ফেলে।
ফলে গমের রসে এতগুলি সমাধান যখন একসাথে পাচ্ছেন, তখন বাকি সমস্ত কিছুর থেকে একে আলাদা করে দেখতেই হবে। বিশেষজ্ঞদের কাছে তাই এটি “মিরাকেল ফুড” – এর তকমা পেয়েই গেছে। আপনি যদি চান আপনার সাথেও ঘটুক এমনই মিরাকেল, তাহলে আজই একবার ট্রাই করেই দেখুন গমের রস।
মন্তব্য করুন