বয়স বাড়লে তার ছাপ যাতে ত্বকে না পড়ে, তার চেষ্টা তো আমরা চালিয়েই যাই। এমনকি, কাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্য পাওয়ার জন্য বাজার থেকে দামী প্রোডাক্ট কিনে এনে লাগিয়ে এক্সপেরিমেন্টও করতে ছাড়েন না নিশ্চয়ই। কিন্তু এত কিছু না ভেবে খুব সহজ কয়েকটা ব্যায়াম যদি দেখে নেওয়া যায়, তাহলেই কিন্তু মুখের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। আসলে বাইরে থেকে যাই ব্যবহার করুন না কেন, সৌন্দর্যটা কিন্তু ভেতরের ব্যাপার। তাই আসুন জেনে নিই এমনই কিছু ব্যায়ামের বিষয়ে যা আপনার ত্বকের ঔজ্জ্বল্যকে বজায় রেখে আপনাকে ভেতর থেকে সুন্দর করে তোলে।
এক্সারসাইজ-১
শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময়ে মন দিয়ে সেই শ্বাস-প্রশ্বাসকে সচেতনভাবে লক্ষ্য করুন। এতে আপনার মন শান্ত হবে। আসলে জানেনই তো– মুখ হল মনের আয়না। আর তাই আপনার মনে চলতে থাকা টেনশন, স্ট্রেস– এসবের একটা ছাপ তো মুখে পড়বেই। তাই মন শান্ত করে শিরদাঁড়া সোজা করে বসে শ্বাস-প্রশ্বাসে মন দিয়ে দেখুন, এতে শরীরের আরও উপকার তো আছেই, পাশাপাশি সপ্তাহখানেক ধরে প্রতিদিন প্রায় ১৫ মিনিট চালিয়ে গেলে এর প্রভাব আপনি মুখেও দেখতে পাবেন।
এক্সারসাইজ-২
শীর্ষাসন সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, ঠিকই ভেবেছেন। আসন হিসেবে এটি বেশ কঠিন। মাথায় ভর দিয়ে পুরো শরীরটিকে উলটো করে, মাথা নীচে ও পা উপরে করে স্থির থাকা কিছুক্ষণ। জানি ঘাবড়ে গেছেন, কিন্তু বিশ্বাস করুন এটিতে খুব তাড়াতড়ি কাজ হয়। এতে শরীরের রক্তের চাপ যেহেতু মাথা ও মুখের দিকে বেশী পড়ে, তাই মুখের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। তবে একটিই কথা বলার এ ক্ষেত্রে, এই আসনটি কিন্তু সব্বার জন্য নয়। বিশেষ করে যাদের রক্তচাপ বেশী তাদের জন্য তো নয়ই। আর প্রাথমিকভাবে যারা শুরু করছেন, তাঁদের বলার- আপনারা প্রাথমিকভাবে কোনও ট্রেনারের সাহায্যে শুরু করুন। তবে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখার ব্যায়াম হিসেবে এটি কিন্তু সত্যিই কার্যকরী।
এক্সারসাইজ-৩
ম্যাসাজের বিকল্প আর কি হতে পারে বলুন তো? আর এতে বেশ আরামও লাগে। দুটি আঙুল দিয়ে বৃত্তাকারভাবে চোখের ও ভুরুর চারিপাশে চালিয়ে যাওয়ার যে আরাম, তা স্বর্গীয়। আর এর ফলে আপনার মুখে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাওয়ায় মুখের ঔজ্জল্যও আলাদা মাত্রা পায় । দুই হাতের চারটি আঙুলকে দুটি কানের পাশে চেপে ধরুন, আর দুই হাতের একটি করে দুটি আঙুল দিয়ে কপাল, চোখ, ভুরুর চারপাশ দিয়ে বৃত্তাকারে চালিয়ে যান। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ করতে থাকুন। সম্ভব হলে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার করলে ভালো হয়। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ একটি এক্সারসাইজ। তাই আপনার হাতে যথেষ্ট সময়ও থাকা দরকার।
এক্সারসাইজ-৪
হলাসন করুন প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে। ভাবছেন হয়তো যে ত্বকের জন্য এই ধরনের যোগাসন বলার দরকারটা কী? আসলে আপনি এই এক একটি যোগাসন থেকে একাধিক সমস্যার সমাধান তো পাবেনই, পাশাপাশি ত্বকও কিন্তু এর উপকারিতার ভাগ থেকে বাদ পড়ে না। হলাসনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আপনাকে সমতল কোনও জায়াগায় শুয়ে পড়তে হবে লম্বা হয়ে। চিত হয়ে শুয়ে হাতদুটিকে শরীরের দুই দিকে থাকা অবস্থাতেই সামনের পা দুটিকে একসাথে আস্তে আস্তে ওপরের দিকে তুলতে হবে এবং ধীরে ধীরে শরীরের ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে মাথার পেছনের মাটি স্পর্শ করার চেষ্টা করতে হবে, এতে আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন তো বাড়বেই, পেশির ওপরেও চাপ পড়বে। আর এর ফলে আপনার শরীরে ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও বাড়বে।
এক্সারসাইজ-৫
শবাসনও অভ্যাস করতে পারেন। এতে আপনাকে বিশেষ কিছুই শারীরিক কসরত করতে হবে না। আপনি শুধু চিত হয়ে হাত দুটিকে শরীরের দু পাশে রেখে শুয়ে থাকুন। আর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেই শ্বাসের দিকেই বেশ কিছুক্ষন সচেতন মনযোগ দিন। সাধারণত সকালে বা সন্ধ্যায়, আপনার যোগাসন করার সময়ে সব আসনের শেষে বা প্রতিটি আসন করার মাঝে শবাসন করতে বলা হয়।
এই যোগাসনগুলির কথা অন্য শারীরিক সুস্থতা সূত্রেও শুনে থাকবেন। আসলে ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে এগুলোর আলাদা গুরুত্ব থাকলেও আপনার শরীর সুস্থ থাকলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, আর ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়লেই ত্বক আরও উজ্জ্বল হবে। তাই বাইরে থেকে নয়, এক্ষেত্রে সৌন্দর্য আপনার ভেতর থেকেই আসবে। আপনাকে শুধু অভ্যাস করে যেতে হবে।
মন্তব্য করুন