যা রোজগার করছেন তার সবটাই কি খরচ হয়ে যায়? আপনি একটা হিসাব ধরেছিলেন মাসের শুরুতে, কিন্তু আপনি দেখলেন যে মাসের শেষে সেই হিসেব কোথায় ভেসে চলে গেছে। আপনি বুঝতেও পারলেন না কীভাবে টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। আর মাসের শেষে এসে মাথায় হাত। ভেবে উঠতেই পারছেন না কিভাবে হল এত খরচ। তাই আজ আপনাদের জন্য রইল ২০টি সহজ আর বিশ্বাসযোগ্য উপায় যার দ্বারা আপনি সহজেই আপনার টাকা জমাতে পারবেন, তাও অতিরিক্ত কোনো কষ্ট না করেই।
১. নির্দিষ্ট প্ল্যান করুন মাসের শুরুতে
মোটামুটি আমাদের সবারই মাসের ৫ থেকে ৬ তারিখের মধ্যে মাইনে হয়ে যায়। তাই মাইনে হওয়ার সাথে সাথেই কীভাবে হিসাব করবেন তার একটা প্ল্যান ছকে নিন। দেখুন আপনি যন্ত্র নন, তাই ওইরকম মেপে মেপে সবসময় চলতে পারবেন না জানি। কিন্তু তাও একটা সম্ভাব্য ছক করে নিন। মাসের শুরুতেই সেই মাসে কতটা জমানো যেতে পারে তার একটা টার্গেট ফিক্সড করুন।
২. হিসাব লিখে রাখুন
খুব ভালো হয় যদি আপনি আপনার রোজের হিসাব একটা জায়গায় লিখে রাখতে পারেন। এটা অতিরিক্ত করছেন মনে হলে কয়েকটা প্রধান খরচের এলাকা বেছে নিয়ে তার হিসেব রাখুন। এই হিসেব কয়েক মাস করুন। দেখবেন আপনি কী কী ক্ষেত্রে হিসেব বেশী করছেন তার একটা নমুনা পেয়ে যাচ্ছেন। খরচাগুলো পারলে কমিয়ে দিন।
৩. একসাথে কেনাকাটা করুন
আপনি একটু একটু করে জিনিস কেনা বন্ধ করুন। একবারে সব জিনিস কিনে আনুন। দেখবেন একবারের একটা হিসেব আপনার সামনে থাকছে। অনেকেই মাস-কাবারির ক্ষেত্রে এটা করে থাকেন। জিনিস না হয় সামান্য বেশী করেই আনুন। থেকে গেলে পরে কাজে লাগিয়ে দেবেন। আর দেখুন আপনি যা কিনছেন তাতে কোনো অফার থাকছে কিনা। অনেকসময় অফার দেখে কিনলে টাকা ভালো জমে।
৪. রোজ চা-কফি নয়
আগে যে হিসেবটা করতে বললাম রোজের, তাতে দেখবেন আপনি অনেকটা টাকা চা বা কফি খেয়েই উড়িয়ে দিচ্ছেন। আর ওই পরিমাণে চা বা কফি খাওয়াও তো ঠিক না। অনেকে দিনে ছয়-সাতবার চা খান। রোজের হিসেবে টাকাটা চোখে না লাগলেও মাসের শেষে অঙ্কটা দেখলেই বুঝবেন এতটা না খেলেই হত।
৫. রোজ বাইরের খাবার নয়
কাজের জন্য রোজ বাইরে বেরোতে হয়। আর কাজের ফাঁকে দুপুরে বাইরেই লাঞ্চ সেরে নেওয়া- এতো প্রায় সব মানুষেরই এক ব্যাপার। কিন্তু একটু বাইরের খাওয়া বন্ধ করুন আর ঘর থেকে খাবার নিয়ে যান পারলে। দেখবেন টাকা কি সুন্দর জমছে।
৬. ব্যাঙ্ক কার্ড পরিমিত ব্যবহার করুন
রোজ কিছু কিছু করে টাকা তুললে দেখবেন অ্যাকাউন্ট খুব তাড়াতাড়ি খালি হয়ে যাচ্ছে। তার থেকে ভালো হয় যদি শুরুতেই একটা প্ল্যান করে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তুলে নেওয়া যায়। সেটা হতে পারে সাপ্তাহিক, বা মাসে দু’বার। কিন্তু রোজ টাকা তোলা কিছু কিছু করে বন্ধ করুন।
৭. ঝোঁক কমান
আমরা অনেকেই ঝোঁকের বশে টাকা খরচ করে ফেলি। যখন যেটা মনে হয় তখন সেটা কিনে ফেলি। কোনো হিসেবের ধার ধারি না। এটা করা যাবে না। আপনার কোনো জিনিস পছন্দ হলে আর তা যদি একান্তই দরকার না হয় তাহলে তা তখনই কেনা বন্ধ করুন আর পরের মাসে না হয় কিনে নিন। দেখবেন কেনাও হল আর টাকাও জমলো। তবে হ্যাঁ, অতিরিক্ত চাহিদাটা করা বন্ধ করুন।
৮. ভ্রমণে খরচ কমানোর চেষ্টা করুন
জানি আপনার ঘুরতে যেতে ভালো লাগে। কিন্তু আমরা সবাই তো সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ। তাই আমাদের একটা জায়গায় গিয়ে খানিক আপোষ করতে হয় নিজেদের ইচ্ছের সঙ্গে। তাই যখনই মনে হল, তখনই বেরিয়ে পড়লেন সেটা নাই বা করলেন। আগে দেখুন আপনার এখন সামর্থ আছে কিনা যাওয়ার। টাকার টানাটানি করে যাওয়ার মানেই হয় না। ঘরে এসেও টানাটানির মধ্যে পড়ার মানে হয় না। যখন তখন ঘুরতে না গিয়ে চেষ্টা করুন একটা বড় সময়ের গ্যাপে যাওয়ার কোনো ভালো জায়গায়। দেখবেন টাকাও থাকবে আর মনও ভরবে।
৯. খুচরো টাকায় মন দিন
শুনে আপনাদের হাসি পেতে পারে। কিন্তু এক টাকা, দু টাকা ভেবে ছোট করবেন না। মাসের শুরুতে জমাতে শুরু করুন দেখি রোজ। দেখুন মাসের শেষে গিয়ে কত জমে। দেখবেন এত সহজ উপায় হাতের কাছে আছে জেনে আপনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবেন।
১০. যানবাহনে নজর দিন
চেষ্টা করুন সাধারণ পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাওয়া-আসা করার। কথায় কথায় ওলা, উবের বা ট্যাক্সি নেওয়া বন্ধ করুন। নিজস্ব গাড়ি নিয়ে বেরোলে জ্যাম থাকলে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ রাখুন। দেখবেন তেলের পিছনে কি সুন্দর খরচ কমছে।
১১. বিলাসিতা একটু ভেবে করুন
দেখুন বিলাসিতার সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। কিন্তু তাও একটা সাধারণ দিক তো থাকেই। খুব দরকার না হলে এ.সি. ব্যবহার না করাই ভালো। করলেও কমিয়ে ব্যবহার করুন। অহেতুক টি.ভি, ফ্যান চালিয়ে রাখবেন না। কতটা ইলেকট্রিক বিল আপনার পক্ষে ঠিকঠাক হতে পারে তার একটা টার্গেট তৈরি করুন। তার ওপরে উঠতে দেবেন না। দেখুন তো কি সুন্দর আরামও হবে আর টাকাও জমবে।
১২. পোষ্ট অফিস যান
একটু মাঝে মাঝে পোষ্ট অফিস যান। এখানে শুধু চিঠি ফেলাই হয় না। টাকা জমানোর হরেক স্কিম হয় পোষ্ট অফিসে। ব্যাঙ্কে তো অনেক জমালেন, না হয় খানিক পোষ্ট অফিসেই যান। দেখবেন ঠকবেন না খুব একটা।
১৩. আয় বাড়ানোর দিকে নজর দিন
দেখুন টাকা জমাতে গেলে টাকা সেইরকম আয় করতে হবে। কম টাকা রোজগার করলে আপনি কিভাবে টাকা জমাবেন। তাই চেষ্টা করুন কীভাবে আয় বাড়ানো যায়। তবে হ্যাঁ, আয় বাড়ানোর জন্য কিন্তু রোবট হয়ে যাবেন না। কিন্তু যতটা পারা যায় আয় করুন। দেখবেন টাকা জমানোর সাহসটা নিজের মধ্যে থেকেই পাচ্ছেন।
১৪. জিনিস বিক্রি করুন
না না, শুনে চমকে যাবেন না। আমি বলতে চাইছি যে জিনিসটি আপনি ব্যবহার করছেন না বর্তমানে, সেটা যদি ভালো অবস্থায় থাকে, তাহলে তা বিক্রি করে দিন বর্তমান বাজার মূল্য হিসাবে। দেখুন শুধু শুধু পড়ে থাকার থেকে তার বদলে যদি টাকা আসে সেটা তো ভালোই বলুন!
১৫. শপিং-এ গিফট কার্ড ব্যবহার
অনেকসময় নানান মল থেকে আপনাকে হয়তো কিছু কার্ড দেওয়া হয়। সেই কার্ড ব্যবহার করেই আপনি হয়তো অনেক কমে মানে ডিসকাউন্টে জিনিস কিনতে পারবেন। অথচ অনেকেই সেই কার্ড ব্যবহারই করেন না। তাই এই ধরণের কার্ড পেলে তা ব্যবহার করুন আর টাকা বাঁচান।
১৬. আপনার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
আপনি যেখানে কাজ করেন সেখানকার কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। কর্মচারীর জন্য কি ধরণের পলিসি টাকা রেখেছেন, প্রভিডেন্ট ফান্ডের কি সিস্টেম সব জানুন। এইভাবেই আপনি বিচক্ষণতার সঙ্গে আপনার টাকা জমাতে পারবেন।
১৭. মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন
আপনি আপনার টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করতে পারেন। অনেকেই ভাবেন এর নিশ্চয়তা নিয়ে। কিন্তু ভালো ভাবে সব নিয়ম পড়ে আর বুঝে বিনিয়োগ করলে আপনি দেখবেন কম সময়ে অনেকটা টাকা সঞ্চয়ের এটা একটা ভালো পথ। সব সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখার মানে হয় না।
১৮. ইনস্যুরেন্স করুন
অনেকেই এটা করতে কেমন যেন করেন। জীবনবিমা বা এই ধরণের ইনস্যুরেন্স কিন্তু অনেকটাই আপনাকে বিপদে সাহায্য করবে। আর ইনস্যুরেন্স করতে হলে অনেক রকমের স্কিমের মধ্যে আগে একটা তুলনা করে নিন। দেখুন কোনটা বেশী লাভজনক। তারপর স্কিম করুন।
১৯. বাড়িতে নিজের কাজ নিজে করুন
আপনার হয়তো তেমন বয়স হয়নি। হাতেও সময়ও আছে। সেক্ষেত্রে নিজের কাজ নিজে করুন। শুধু শুধু কাজের লোক রেখে টাকা কেন নষ্ট করবেন। এতে টাকাও বাঁচবে, আর শরীরও ভালো থাকবে।
২০. নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন
টাকা জমানোর জন্য এইটা সবচেয়ে দরকারী। নিজের ইচ্ছেগুলোকে লাগাম দিন। নিজেকে বুঝুন। নিজের এক্তিয়ার বুঝুন। তারপর খরচ করুন। দেখবেন আপনি দিনের শেষে কিন্তু হাসি মুখেই থাকবেন।
তাহলে বন্ধুরা, আজ আপনারা জেনে গেলেন কীভাবে আপনি সহজেই টাকা জমাতে পারবেন। শুধু একটু প্ল্যান, ব্যাস, আপনার সঞ্চয় করা থেকে আপনাকে আটকায় কে!
মিউচুয়াল ফান্ড সম্বন্ধে জানুন বিস্তারিত | What is a Mutual Fund? – Explained in Detail
মন্তব্য করুন