ভাবুন তো, কম বয়সে চুল পেকে গেলে কি খারাপই না লাগে! বন্ধু-বান্ধবদের থেকে প্যাঁক তো শুনতেই হয়, আর সেইসাথে আপনার একমাথা ভর্তি কালো চুলের স্বপ্ন সেটাতেও গুড়ে বালি পড়ে যায়।
তাই অগত্যা আপনাকে শরণ নিতেই হয় অগতির গতি চুল রঙে! কিন্তু এই সামান্য চুল রঙ করার জন্য বারবার পার্লারে যেতে আর কাঁহাতক ভালো লাগে বলুন? তাই এবার বরং ঘরে বসেই জেনে নিন চুলে কালার করার সহজ উপায়।
১. কালার করার আগে চুল ভালো করে ধুয়ে নিন
চুলে রঙ করার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে চুলকে ভালো করে ধুয়ে নিন। তাহলে আপনার স্ক্যাল্পও পরিষ্কার হবে আর ন্যাচারাল অয়েলের সাথে মিশে চুলে রঙটা ভালো করে লাগতেও পারবে। ফলে কালার অনেকদিন অবধি থাকবে। আর আপনি যদি কালার করার আগের দিন শ্যাম্পু করেন, তাহলে কন্ডিশনার দেবেন না। কেননা কন্ডিশনার মাথা থেকে ন্যাচারাল অয়েল দূর করে, ফলে রঙ স্থায়ী হয় না।
২. ঠিকঠাক রঙ বাছুন
চুলে কালার করা মানে কিন্তু যে সে ব্যাপার নয়। চুলে কী রঙ করবেন, কোন কালারটা আপনার স্কিন টোনের সাথে ম্যাচ করবে, এটা জেনে ঠিকঠাক কালার পছন্দ করাও কিন্তু খুবই জরুরী। আমাদের ভারতীয় ধরণের গায়ের রঙের সাথে কিন্তু আর যাই হোক, সোনালী রঙ যে একদম মানাবে না সেটা তো আপনি বোঝেনই। আর চুল কালার করা মানে কিন্তু চুলকে নরমালি কালো রঙ করাও হয়।
৩. চুল আঁচড়ান
আপনার চুলে কালার করার আগে চুলকে ভালো করে আঁচড়ে নিতে কিন্তু ভুলবেন না। দেখবেন চুলে যেন একদম জট না থাকে। চুল ভালো করে না আঁচড়ালে কিন্তু কালার করার সময় আপনার চুলে ইভেনলি কালার হবে না। তখন ভাবুন তো, একদিক সাদা আর একদিক কালো—আপনার চুল আপনার নিজেরই দেখতে ভালো লাগবে না!
৪. কালার মিক্স করুন
আপনার কালার করার প্যাকেটে যদি দুটো স্যাশে থাকে, তাহলে দেখবেন তার মধ্যে একটা কালার আর একটা ডেভলপার। আপনার হেয়ার কালার প্যাকের বাইরে নিশ্চয়ই ইন্সট্রাকশন লেখা থাকবে। আপনার হেয়ার কালার ব্রাশ দিয়ে এই দুটো স্যাশে থেকে ঢেলে একটা বাটিতে নিয়ে সেই ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী ভালো করে মিশিয়ে নিন।
৫. কী করে কালার করবেন?
আপনার চুলে রঙ করা কিন্তু মোটেই সোজা কাজ যে নয়, তা তো বুঝতেই পারছেন। এর জন্যে কয়েকটা স্টেপ ফলো করা কিন্তু খুব জরুরী।
পদ্ধতি:
- এরপর আপনার গলা ঘাড় একটা কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে ঢেকে ফেলুন, যাতে চুলে রঙ করার সময় অন্য কোথাও রঙ না লেগে যায়। হাতে গ্লাভস পরে নিন আর মাথার চুলের আশেপাশে, কপালে তেল বা ভেসলিন লাগিয়ে নিন, যাতে সেখানে কালার লেগে না যায়।
- এবার আপনার কপালের হেয়ার লাইন থেকে কালার করতে শুরু করুন। মাথাকে কয়েকটা ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন, তারপর সেখানে আস্তে করে ধরে ধরে ব্রাশ দিয়ে রঙ করতে শুরু করুন।
- এরপর আবার আপনার কালার প্যাকে লেখা ইন্সট্রাকশন ফলো করে দেখুন, চুলে রঙ কতক্ষণ রাখতে হবে সেই বিষয়ে কিছু বলা আছে কিনা। যদি বলা থাকে, তাহলে সেই অনুযায়ী রাখুন। আর না বলা থাকলে অন্তত ২০ মিনিট শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।
- দেখবেন গোটা চুলে যেন ভালো করে আর সমান ভাবে সব জায়গায় কালার লাগে।
৬. ধোবেন কীভাবে?
কালার করার নির্দিষ্ট সময় পরে আপনার চুলকে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া কিন্তু খুব দরকারী। হালকা গরম জলে মাথা ধুয়ে নিন যতক্ষণ না পর্যন্ত রঙ উঠে যায়। খেয়াল রাখবেন, আপনার মাথায় যদি বাড়তি রঙ থেকে যায়, তাহলে কিন্তু এটা পরে আপনার চুলের বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। খুশকি তো হতে পারেই, তাছাড়া চুল পড়ার সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। তাই সাবধান হন।
৭. সব শেষে কন্ডিশনিং
মনে রাখবেন কালার করার পরে কন্ডিশনিং করা কিন্তু খুবই দরকার। এর ফলে আপনার চুল সফট থাকে, আর কালার করার পরে কোনো বাড়তি রাফনেস আসে না।
কিছু খুচরো টিপস
- হতে পারে আপনি বাড়িতে বসেই চুলে সবসময় কালার করেন। এবং এটা করে করে আপনার হাত এক্কেবারে পেকে গেছে। কিন্তু তাও আপনি যখনই রঙ করবেন, ইন্সট্রাকশন পড়ে নিতে কিন্তু ভুলবেন না।
- আপনার চুলের নর্মাল কালারের থেকে যদি একেবারে আলাদা কোনো কালার ট্রাই করতে চান, তাহলে কিন্তু পার্লারে যাওয়াই ভালো। নয়তো ভাবুন তো, বিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটে আপনার চুল আনইভেনলি কালারড হয়ে কিন্তু যাচ্ছেতাই একটা ব্যাপার হতে পারে!
৫টি বেস্ট হেয়ার কালার প্যাকের সন্ধান
কিন্তু চুলে কীভাবে কালার করবেন, সে নাহয় হল। আপনি নিশ্চয়ই এবার ভাবছেন যে বাজার চলতি এতগুলো কোম্পানির হেয়ার কালার প্রোডাক্টের থেকে কোনটা আপনার চুলের জন্য বাছবেন? চাপ নেই। আজকের লেখায় রইলো সেই ৫ টি বেস্ট হেয়ার কালার প্যাকেরও সুলুক সন্ধান।
১. ল’রিয়াল প্যারিস কাস্টিং ক্রিম গ্লস
ল’রিয়াল প্যারিসের হেয়ার প্রোডাক্ট নিয়ে তো আলাদা করে আর কিছুই বলার দরকার নেই। তবে এই হেয়ার কালার কিন্তু এক্কেবারে অ্যামোনিয়া ফ্রি। অনেকদিন পর্যন্ত কালার থাকে, এবং চুলকে তার নর্মাল সিল্কি অ্যান্ড শাইনি ভাব দেয়। ব্ল্যাক ছাড়াও আরও অনেক রঙেই পেয়ে যাবেন। পছন্দের রঙটা বেছে নিন।
[amazon box=”B006QHBB3Q” title=”ল’রিয়াল প্যারিস কাস্টিং ক্রিম গ্লস” description=”অ্যামোনিয়া ফ্রি” button_text=”কিনুন”]
২. গারনিয়ার কালার ন্যাচারালস শেড ন্যাচারাল ব্ল্যাক
গারনিয়ারের এই হেয়ার কালার প্যাক তিনটে নিউট্রিশাস অয়েল দিয়ে এনরিচড। যা চুলকে কালার করার পরে একটা গ্লসি ফিনিশ দেয়।
[amazon box=”B006QHBC76″ title=”গারনিয়ার কালার ন্যাচারালস শেড” description=”গ্লসি ফিনিশ দেয়” button_text=”কিনুন”]
৩. স্ট্রিক্স ডার্কেস্ট ব্রাউন হেয়ার কালার
স্ট্রিক্সের হেয়ার কালারও চুলের জন্য খুব ভালো। নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতেই পারেন।
[amazon box=”B00DRE3738″ title=”স্ট্রিক্স ডার্কেস্ট ব্রাউন হেয়ার কালার” description=”নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন” button_text=”কিনুন”]
৪. রেভলন কালারসিল্ক হেয়ার কালার
অ্যামোনিয়া ফ্রি রেভলনের এই হেয়ার কালার ব্যবহার করে দেখুন। এটা আপনার চুলে ন্যাচারাল সিল্ক প্রোটিন বজায় রাখবে।
[amazon box=”B00TTNUTPK” title=”রেভলন কালারসিল্ক হেয়ার কালার” description=”অ্যামোনিয়া ফ্রি রেভলনের এই হেয়ার কালার” button_text=”কিনুন”]
৫. শাহনাজ হুসেন হেয়ার টাচ আপ
শাহনাজ হুসেনের প্রোডাক্ট নিয়ে কিন্তু কোনো কথা হবে না। নিশ্চিন্তে ব্যবহার করে ফেলুন।
[amazon box=”B006LXBHVG” title=”শাহনাজ হুসেন হেয়ার টাচ আপ” description=”পারফেক্ট কালার আসে” button_text=”কিনুন”]
তাহলে ৫ টা বেস্ট হেয়ার কালার প্যাকের খবর তো পেয়েই গেলেন আজ। চুলে এবার কালার করুন মনের আনন্দে। দেখবেন আপনিও হাসবেন, আপনার চুলও!
মন্তব্য করুন