অবশেষে তিনি আসিতেছেন! ট্রেলার লঞ্চ হয়ে গেছে, মিউজিক লঞ্চও হল বলে—এবার অপেক্ষা শুধু পয়লা ডিসেম্বরের! আজ্ঞে হ্যাঁ। আমরা ‘পদ্মাবতী’ সিনেমাটার কথাই বলছি! ট্রেলার তো আপনিও নিশ্চয়ই দেখেছেন, অ্যাদ্দিনে বোধহয় বার বিশেক দেখে দেখে মুখস্তও করে ফেললেন! দীপিকার অমন রাজপুত রমণীর রমণীয় লুক, শাহিদের রাজা রাজা ভাব, আর রণবীরের অমন বীভৎস হিংস্র মূর্তি দেখে আপনিও তো সোজা বোল্ড হয়ে গেছেন জানি! কিন্তু এমন একটা মার-মার-কাট-কাট ব্যাপার তৈরি হল, আর সেখানে কোনো মুচমুচে খাস্তা কচুরির মতো গাল ভরা গসিপ তৈরি হল না—এ কি হতে পারে নাকি?
আর ডিরেক্টরের নাম যখন সঞ্জয় লীলা বনশালি, তখন গল্প তৈরি হতে তো বাধ্য! তা সেসব জানতে নিশ্চয়ই আপনার পেট গুড়গুড় করছে? আসুন, আজ আপনাদের নিয়ে যাই ‘পদ্মাবতী’র খাস মহলে, যেখানে পাথরের দেওয়ালে কান পাতলে এখনও শুনতে পাবেন সিনেমার শুটিং-এর মুখরোচক সব গল্প!
বিতর্ক তো আর পিছু ছাড়ে না!
বলিউড মানেই নাকি বিতর্ক! এর’ম একটা কথা অবিশ্যি নিন্দুকেরা বলেই থাকেন বটে। আমরা তাতে কান দিতাম না। কিন্তু ‘পদ্মাবতী’র শুটিং-এর পর মনে হচ্ছে, এবারও যদি কান না দিই, তাহলে ঘোরতর অপরাধ হয়ে যাবে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আশুতোষ গোয়াড়িকরের ‘জোধা আকবর’ যখন রিলিজ করেছিল, তখন রাজস্থানে কিছু লোকজন বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তা তাঁরা কিন্তু এবারেও আছেন। ‘পদ্মাবতী’ শুটিং শুরু হবার পর পরই যখন জয়পুরে শুটিং লোকেশন ফেলা হয়, রাজপুত কর্ণী সেনার দল এবারও হামলা করে সেটে। শোনা যায়, সঞ্জয় লীলা বনশালিকে নাকি খানিক চড়-চাপড়ও খেতে হয়েছে তাদের হাতে! তা তাদের অভিযোগ এ সিনেমায় নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে! সেখানে নাকি দেখানো হয়েছে আলাউদ্দিন স্বপ্নে পদ্মাবতীর সাথে শারীরিক মিলন করছেন! তা তাদের আবেগের দোষ নেই। কিন্তু গল্পের গোরু আর কবেই বা মাটিতে থেকেছে!
রণবীর নাকি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছেন?
শোনা যাচ্ছে সিনেমার শুটিং-এর পরেই নাকি এ ছবির অন্যতম অভিনেতা রণবীর সিং-কে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে ছুটতে হয়েছে! কেন? আপনারা জানেন যে রণবীর যখনই কোনো সিনেমায় অভিনয় করেন , তিনি ওই চরিত্রের মধ্যে আপাদমস্তক ঢুকে যান। সোজা ব্যাপার নয় জানি। কিন্তু ট্রেলারটা যদি দেখে থাকেন, তাহলে দেখতেই পেয়েছেন, এখানে রণবীর অভিনীত আলাউদ্দিন খিলজি লোকটিও মোটেই সোজা ছিলেন না। তাঁকে অমন নারকীয় আর বীভৎসভাবে পারফেক্ট করে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা কিন্তু বেশ কঠিন কাজ। রণবীর সেটা করেছেন ঠিকই, এমনভাবেই করেছেন যে সেটে তাঁকে দেখলে সবাই ভয়ও পেত! কিন্তু ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করে আর চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়ে এখন নাকি তাঁকে সেই চরিত্রের ‘ডার্ক সাইড’ থেকে বেরোনোর জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরই শরণ নিতে হয়েছে!
রণবীর কি বাই-সেক্সুয়াল?
আরে নানা। যা ভাবছেন সেটা না। আমরা রণবীরকে মোটেই বাই-সেক্সুয়াল বলিনি। তবে হ্যাঁ। এ ছবিতে রণবীর নাকি বাই-সেক্সুয়ালের চরিত্রে অভিনয় করছেন। নাহ। আলাউদ্দিন বাই-সেক্সুয়াল ছিলেন কিনা সেটা জানা যায় নি। তবে সেনাপতি মালিক কাফুরের প্রতি তাঁর নাকি একটা দুর্বলতা ছিল। আর সেটাই নাকি রণবীরও ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে এ গসিপের সত্যতা জানা যাবে অবিশ্যি সিনেমাটা রিলিজের পরেই!
শাহিদ কাপুর সেটে ফোন ব্যবহার করতেন না!
সিনেমার শুটিং-এর সময় এমনিতেই অভিনেতারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। কারণ ওতে নাকি মনঃসংযোগের ব্যাঘাত হয়। হেডস্যার সঞ্জয় লীলা বনশালির অবশ্য কড়া হুকুম ছিল সেটে যেন কেউই মোবাইল নিয়ে না ঢোকেন। কেন? না তাঁর অমন সাধের সেটের ছবি নাকি আগে-ভাগেই লিক হয়ে যাচ্ছে। তা শাহিদ কাপুর এমনিতেই সেটে ফোন ব্যবহার করেন না। কিন্তু এই ছবির শুটিঙের সময় তিনি নাকি নিজের ম্যানেজারকেও ফোন দেননি। ফোন জমা রাখতেন সিকিউরিটি গার্ডের কাছে।
অবসর সময়ে চলত আড্ডা
ভাবুন তো, একটা সিনেমার শুটিং হচ্ছে, আর দুটো সিনের মাঝে অভিনেতা, ক্যামেরাম্যান, পরিচালক একসাথে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। আজ্ঞে হ্যাঁ। এর’মটাই নাকি হত ‘রানী পদ্মাবতী’র শুটিঙে। সেটে ফোন নয়ে ঢোকা তো বারণ। অবসর সময়ে তাই সঞ্জয় লীলা বনশালি, শাহিদ কাপুর, রণবীর সিং, দীপিকা পাড়ুকোন মিলে বসে নাকি জমিয়ে আড্ডা হতো। আর কী থাকত সেই আড্ডার বিষয়বস্তু? নাহ, এখনকার দিনের কোনো খোশ গল্প নয়, গল্প হতো সেই সময়কার, মানে পদ্মাবতীর সময়কার সংস্কৃতি, রাজনীতি সেইসব নিয়ে! ভাবুন দেখি!
রণবীর টানা ২৪ টা চড়ও খেয়েছেন!
মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খানের পরেই বলিয়ুডে খুঁত-খুঁতোমিতে সেরা কিন্তু রণবীর সিং। এমনই খুঁতখুঁতে যে পদ্মাবতীর সেটে নাকি তিনি ২৪ টা চড়ও খেতে রাজি হয়েছেন! ব্যাপারটা কি? আসলে রাজা মুরাদ, যিনি কিনা জালালুদ্দিন খিলজি হয়েছেন, তাঁর সাথেই আলাউদ্দিন রণবীরের একটা সিন ছিল। তা সেটাই পারফেক্ট হচ্ছিল না মোটে। আর তাই সেটা যতক্ষণ না পারফেক্ট হয়, ততক্ষণ ধরেই রণবীর রাজা মুরাদের হাতে চড় খেতে লাগলেন! টানা চব্বিশটা! তারপর ‘ওকে’ হল সিন! কি ডেডিকেশন ভাবুন শুধু!
দীপিকায় মুগ্ধ!
‘পদ্মাবতী’র ট্রেলার দেখে দীপিকায় মুগ্ধ হননি, এমন মানুষ ভু-ভারতে কমই আছেন বোধহয়! কিন্তু আমার-আপনার বাইরেও আরও অনেকে ‘পদ্মাবতী’র ট্রেলার দেখে মুগ্ধ হয়েছেন আর দীপিকায় মজেছেন! করণ জোহর তো ট্রেলারে দীপিকাকে দেখে আপ্লুত! আর আলিয়া ভাট লিখেছেন ‘উফ! জাস্ট ডায়েড! এপিক!’ ভাবুন তো এক অভিনেত্রী আর এক অভিনেত্রীর প্রশংসা করছেন—বলিউডে এ ঘটনা কিন্তু সত্যিই বিরল!
আজ এটুকুই থাক। আপাতত গসিপে কান দিন। আর সে যাই হোক না কেন, মোদ্দা ব্যাপারটা হল ফার্স্ট ডে, ফার্স্ট শো না হোক, সিনেমাটা রিলিজ করার অন্তত এক সপ্তাহের মধ্যে কিন্তু আপনার দেখে আসা চাইই চাই!
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় চলচ্চিত্র দুনিয়ায় ফিরছেন, ‘জিও পাগলা’ মুভিতে দেখা যাবে আবার তাকে।
মন্তব্য করুন