বেশ সুন্দর আপনার ঘন কালো চুল, খুশকিও নেই আবার ড্রাই স্ক্যাল্পের সমস্যাও নেই। তাও কয়েক দিন ধরে মাথা চুলকোচ্ছে কেন বলুন তো? একদম ঠিক ধরেছেন। আপনার এই মাথা চুলকানোর কারণ কিন্তু উকুন হতেই পারে|
অন্যদের মাথায় উকুন হলে তো নাক সিট্কোন, কিন্তু নিজের মাথায় হলে কি করবেন? অন্য কেউ আপনাকে মাথা চুলকোতে দেখলেই কিন্তু ভয়ে বয়কট করে দেবে| আবার উকুন একবার যদি আপনার মাথায় ঘর করলো তো বাড়ির সকলের মাথাকেই আপন করে নেবে| উফ চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না? আরে আপনি যাতে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোতে পারেন আর আপনার পরিবারের লোকজনকে যাতে সকলের সামনে মাথা চুলকে এমব্যারেস না হতে হয় তার জন্য উকুনের বংশ নির্বংশ করতে আজ আমরা হাজির|
উকুন সংক্রমণ কেন মারাত্মক
উকুন একধরনের জীব যা আমাদের স্ক্যাল্প থেকে রক্ত শোষণ করে জীবিত থাকে| এগুলি মাথাতেই ডিম পাড়ে এবং স্থায়ীভাবে আমাদের মাথায় এবং চুলে বসবাস শুরু করে| এই উকুন সংক্রমণকে না আটকালে এর দ্বারা বাহিত নানা ধরনের ইনফেকশন আমাদের ক্ষতি করে| এছাড়া চুল পড়ে যাওয়া, সকলের সামনে মাথা চুলকানো, স্ক্যাল্পে ইনফেকশন ইত্যাদিও হতে পারে| উকুন কোনো ভাবে আমাদের শরীরের ভেতর প্রবেশ করলে উদরী রোগও হতে পারে|
কীভাবে সংক্রমণ ঘটে?
উকুন সাধারণত ক্লোস হেড টু হেড কন্ট্যাক্টে ছড়ায়| যেমন স্কুলে কারো মাথায় উকুন হলে কিন্তু আপনার সন্তানের মাথায় সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়| আর তারপর বাড়ির সকলের মাথায় ছড়ায়| এছাড়া যৌন মিলনের সময় বা একসাথে শুলে, এমন কি একই চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালেও উকুন ছড়ায়|
কীভাবে তাড়াবেন উকুন?
আপনার মাথা চুলকোনোর সময় এখন শেষ| কারণ আজকের আর্টিক্যালটি পড়লে আপনি কিন্তু নিজেই আপনার বাড়িতেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন উকুন নাশক তেল| এই তেলগুলি উকুন মারতে ১০০% কাজ করবে|
১. নিম তেল
বাড়ির আশেপাশে নিম গাছ আছে নিশ্চয়ই! না থাকলে বাজার থেকে নিম পাতা কিনে আনুন| কারণ নিম তেল হলো উকুনের যম| কীভাবে বানাবেন? খুব সহজ।
উপকরণ
নিম পাতা ও তুলসী পাতা বেশ কিছু পরিমাণে, নারকেল তেল ২০০ গ্রাম|
পদ্ধতি
নিম পাতা ও তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে অল্প জল সমেত মিক্সিতে বেটে নিন| দেখবেন যেন জুস মতো হয়, পেস্টের মতো ঘন না হয়| এবার একটি নন-স্টিক পাত্রে ২০০ গ্রাম নারকেল তেল গরম করে তাতে এই নিম পাতা ও তুলসী পাতা বাটা খুব সাবধানে ঢালুন| আঁচ কম করে নাড়তে থাকুন| কিছুক্ষণের মধ্যেই তেলের রং পরিবর্তন হতে শুরু করবে| খেয়াল রাখবেন কোনো ভাবেই যাতে তেল পুড়ে না যায়| ১৫ মিনিট কম আঁচে ক্রমাগত নাড়ার পর গ্যাস বন্ধ করে দিন| তেল ঠান্ডা হয়ে গেলে একটি পরিষ্কার ও শুকনো পাত্রে তেল ছেঁকে রাখুন|
সপ্তাহে দু’দিন করে রাতে শোবার সময় ভালো করে মাথায় এই তেল মেখে সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন| কয়েক দিনের মধ্যেই উকুন নির্বংশ হবে|
২. রসুন তেল
রসুন তেল কিন্তু উকুনের রামবাণ| আমাদের প্রত্যেকের ঘরেই এই উপাদানটি থাকে আর এই তেল বানানোও খুব সহজ|
উপকরণ
রসুন ২-৩ টি, নারকেল তেল ২০০ গ্রাম|
পদ্ধতি
প্রথমে ২-৩ টি রসুনের কোয়াগুলি ছুলে নিন| এবার একটি ননস্টিক পাত্রে ২০০ গ্রাম নারকেল তেল গরম করুন| তেল গরম হয়ে গেলে তাতে রসুনগুলি দিয়ে দিন| কম আঁচে নাড়তে থাকুন| আপনাকে পুরো রসুনের নির্যাসটি যাতে তেলে মিশে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং রসুন যাতে পুড়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে| ১৫ মিনিট ধরে একদম কম আঁচে নাড়ার পর রসুন গোল্ডেন ব্রাউন কালারের হয়ে গেলে বা একেবারে নরম হয়ে আসলে চামচ দিয়ে রসুনগুলিকে থেঁতলে দিন| গ্যাস বন্ধ করে দিন| তেল ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে একটি পাত্রে রেখে দিন|
সপ্তাহে ৩ দিন রাতে শোবার সময় আপনার স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন| সকালে শ্যাম্পু করে নিন| উকুন কয়েকদিনের মধ্যেই দূর হবে|
৩. ওনিয়ন অয়েল
আপনার মাথায় উকুনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার ১০০% কার্যকরী উপায় হলো ওনিয়ন অয়েল| খুব সহজে বাড়িতেই বানাতে পারেন এই তেল|
উপকরণ
১ টি বড় মাপের পেঁয়াজ স্লাইস করে কাটা, কারি পাতা ১ বাটি (মোটামুটি মাঝারি মাপের), নারকেল তেল ৫০০ গ্রাম|
পদ্ধতি
প্রথমে কারিপাতাগুলি ভালো করে ধুয়ে ফেলুন| এবার একটি পাত্রে নারকেল তেল গরম করুন| তেল পুরোপুরি গরম হলে তাতে প্রথমে কারি পাতা ও পরে স্লাইস করা পেঁয়াজগুলি দিন| গ্যাসের আঁচ কম রেখে ৩০ মিনিট মতো ভাজুন| মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন যাতে কোনো উপাদান পুড়ে না যায়| পেয়াজ ও কারি পাতার নির্যাস পুরোপুরি তেলের সাথে মিশে গেলে গ্যাস বন্ধ করে তেল ঠান্ডা করে নিন| এবার একটি পাত্রে তেল ছেঁকে নিন|
এই তেল আপনি সপ্তাহে ৩ দিন রাতে শোবার আগে মাথায় মালিশ করে সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন| উকুনের বংশ বিস্তার আটকাতে এই তেলের কোনো তুলনা নেই|
মাথায় উকুন হলে প্যানিক না করে প্রথমে চিরুনি বা তোয়ালে আলাদা করে দিন| এই হোম মেড তেলগুলিও চটজলদি বানিয়ে ব্যবহার করুন| কথা দিছি উকুন আর আপনার যুদ্ধে এই তেলগুলি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলে জয় আপনার নিশ্চিত!
মন্তব্য করুন