কথায় আছে বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন| কারণ বঙ্গসন্তানদের আশির্বাদ প্রদান করার জন্য দেবদেবীর কোনো অভাব নেই তাই সকলকেই যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে পূজা করা হয়| মহা ধুমধামের সাথে দূর্গাপূজা, লক্ষ্মীপুজোয় আনন্দ করার পর সময় আসে কালী পুজোর| এই সময়টি সমস্ত দেশে ধনতেরাস বা দ্বীপাবলি হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় তবে বাংলা, আসাম ও ওড়িশায় দ্বীপাবলী বা আলোর উৎসবের সাথে সাথে কালিপুজো অনুষ্ঠিত হয়| আবার এই কালী পুজোর দিন অনেকেরই ঘরে বিশেষ করে বাঙালিদের ঘরে অলক্ষ্মী পুজো করা হয়| কে এই দেবী? কেনই বা এর পুজো করা হয়? জানতে ইচ্ছে করছে তো? চলুন আজ এই অলক্ষ্মী দেবীর গল্প শোনাই আপনাদের|

জন্ম কথা
পুরানে কথিত আছে ইনি দেবী লক্ষ্মীর জ্যেষ্ঠা ভগিনী| সমুদ্র মন্থনের সময় সমুদ্রের তোলা থেকে অমৃতের কলস নিয়ে উঠে এসেছিলেন দেবী লক্ষ্মী| আর গরল বা বিষের পাত্র নিয়ে উঠে এসেছিলেন এই অলক্ষ্মী| আবার কোনো কোনো পুরান অনুযায়ী ব্রহ্মার মুখের জ্যোতি থেকে জন্ম হয়েছে দেবী লক্ষ্মীর এবং তার মাথার পেছনের অন্ধকার থেকে জন্ম হয়েছে অলক্ষ্মীর|
রূপ ও স্বভাব
আমরা প্রায়ই কোনো অত্যন্ত চঞ্চল বা কাজে কর্মে অকর্মন্য, অপরিছন্ন মেয়েদের অলক্ষ্মী বলে সম্মোধিত হতে শুনে থাকি| তার কারণ পুরান অনুযায়ী অলক্ষ্মীর সরূপটিও সেই ভাবেই বর্ণিত হয়েছে| অত্যন্ত অপরিছন্ন, ছন্নছাড়া, গায়ের রং ময়লা, কুচকানো চামড়া অবিন্যস্ত চুল এবং পরনের কাপড়টিও অত্যন্ত ময়লা| এনার বাহন হলো গাধা| শুধু রূপের দিক থেকেই নয় স্বভাবের দিক থেকেও ইনি দেবী লক্ষ্মীর বিপরীত| যেখানেই হিংসা, ঝগড়া, অহংকার, একে অপরের প্রতি ঈর্ষা, অপরিচ্ছন্নতা এবং অন্ধকার সেখানেই এই দেবীর বসবাস| ইনি নিজের সঙ্গে দুর্ভাগ্য বহন করে নিয়ে আসেন|
পুজোর কারণ
দ্বীপাবলী বা কালিপুজো আমাদের কাছে সমাজের এবং সেই সঙ্গে মনের অন্ধকার বা অশুভ শক্তির বিনাশের এক উৎসব| তাই এই বিশেষ দিনটিতে অলক্ষ্মী পুজো করার একটি বিশেষ তাৎপর্য্য আছে| দেবী লক্ষ্মী এবং অলক্ষ্মীর সহাবস্থান কিন্তু একই সাথে ঘটে| কারণ যেখানেই দেবী লক্ষ্মীর কৃপায় বা আগমনে ধন, ধান্য, প্রাচুর্য্য ইত্যাদির আগমন ঘটে সেখানেই অদৃশ্য ভাবে অলক্ষ্মী বা অহংকার, ঈর্ষা ও মলিনতার আগমনের সম্ভাবনাও ঘটে| তাই এই দিনে অলক্ষ্মী পুজোর মাধ্যমে আমাদের মনের ঈর্ষা, মলিনতা, অহংকার ও তার ফলে আসন্ন দুর্ভাগ্য কে দূর করে ধন, ধান্য ও সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মীর বন্দনা করে তাকে আমাদের গৃহে স্থাপন করা হয়|

এই দিন ঘর বাড়ি পরিষ্কার করে চালের গুঁড়ো দিয়ে লক্ষ্মীর পা এঁকে আল্পনা দেওয়া হয়| ঘরের চারপাশে আলো বা প্রদীপ জ্বালানো হয়| এতে আমাদের মনের অন্ধকার দূর হয় এবং আমাদের ঘরে সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতিষ্ঠা হয়| আর অন্ধকার আর অশুভ স্বত্তা কে দূর করার জন্য দ্বীপাবলির থেকে শুভ দিন বা তিথি আর কিছুই হতে পারেনা|
আসলে লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী আমাদেরই মনের দুই স্বত্তা| বাইরের সুখ ও সৌভাগ্যের আলোয় যাতে আমাদের মনের ভেতরে ঈর্ষা এবং অহং এর অন্ধকার যাতে আমাদের মনুষ্যত্ব কে গ্রাস না করতে পারে তার জন্যই এই পুজোর প্রচলন| তাই আসন্ন দ্বীপাবলিতে আমাদের সকলের মনের অলক্ষ্মী দূর হোক এবং মা লক্ষ্মীর কৃপায় সকলের অন্তরাত্মা আলোকিত হোক এই আশা নিয়েই আজকের লেখা শেষ করছি|
মন্তব্য করুন