ছেলেদের আবার মাসিক? আজকের আরটিকল দেখেই নিশ্চয়ই ভাবছেন যত্তসব বাজে কথা! গুল দেবার আর জায়গা নেই বলে আপনার কানের কাছেই বকতে এসেছি! তা আপনি ভাবতেই পারেন। আপনার দোষ নেই। বিশ্বাস করুন, মাসিক, মানে যাকে কিনা সোজা ভাষায় বলে পিরিয়ড, সেটা সবসময় মেয়েদের সাথেই জুড়ে এসেছে। আমরাও জানতাম সেই কথা! কিমাসিকন্তু ছেলেদেরও যে মাসিক হয়, তা আমরা জানতেই পারতাম না যদি না বছর দুয়েক আগে ব্রিটেনে ‘দ্য টেলিগ্রাফে’র উদ্যোগে সার্ভেটা হতো!
‘ম্যান পিরিয়ড’: সার্ভে রিপোর্ট কী বলে?
২০১৫ সাকে ব্রিটেনে ‘দ্য টেলিগ্রাফে’র উদ্যোগে যে সার্ভেটি হয়েছিল, ওতে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। তা সেই সার্ভের রিপোর্টটিতেই দেখা গেছে যে, ব্রিটেনে নাকি ২৬ শতাংশ পুরুষই বিশ্বাস করেন ‘ম্যান পিরিয়ডে’।
তাঁদের বক্তব্য পিরিয়ডের সময় মেয়েরা যেমন ক্লান্তি, পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্প ইত্যাদি অনুভব করেন, তাঁরাও নাকি সেইসমস্ত জিনিস অনুভব করেন। পেটে ব্যথা নাকি তাঁদেরও হয়, ক্লান্তি নাকি তাঁদেরও আসে! বুঝুন কাণ্ড! শুধু তাই নয়। ওই সার্ভেতেই অংশগ্রহণকারী ৪৩ শতাংশ মহিলা দাবী করেন, তাঁদের পার্টনারের ‘ম্যান পিরিয়ডে’র সময় তাঁরা নাকি তাঁদের পাশে থেকেছেন!
সার্ভে রিপোর্টের আরও চমক
এখানেই শেষ নয়। ওই সার্ভেতে অংশগ্রহণকারী ‘ম্যান পিরিয়ডে’ বিশ্বাসী পুরুষদের ৫৬ শতাংশ জানান ওই ‘ম্যান পিরিয়ডে’র সময়টা তাঁদের কাছে খুবই ইরিটেটিং একটা সময়। যে সময়ে তাঁরা নর্মাল সময়ের থেকে অনেক বেশী ক্লান্ত বোধ করেন। কোনো কাজও করতে ইচ্ছে হয় না। ওইসময় তাঁরা সহজেই আপসেট হয়ে পড়েন, খিদেও পায় নাকি খুব! ৫ শতাংশ আবার জানান, তাঁরা মেনস্ট্রুরাল ক্র্যাম্পও নাকি ফিল করেছেন!
‘ম্যান পিরিয়ড’ তাহলে সত্যিই হয়?
কিন্তু তাহলে ব্যাপারটা কি? পিরিয়ড বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝি, মেয়েদের যেটা হয়, ছেলেদের যে সেই বিষয়টা হয় না, সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত। ছেলেদের পিরিয়ড হওয়া সম্ভবও নয়। মেয়েদের মাসিকের একটা কারণ থাকে, যে কারণটা ছেলেদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। তাদের জরায়ুও নেই, ডিম্বাশয়ও নেই। তাহলে হয় টা কি? ব্যাপারটা আর কিছুই না। ছেলেদের ক্ষেত্রে ‘ম্যান পিরিয়ড’ যেটাকে বলা হয়, তা হল হল হরমোনাল কিছু পরিবর্তন। এই হরমোনাল পরিবর্তনের ফলেই মেয়েদেরও কিন্তু আদতে পিরিয়ড হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা মোটামুটি একটা গোটা মাসের ব্যাপার হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যাপারটা সের’ম কিছু না।
মাসিক বলা যায়?
আপনারা জানেন, যে মেয়েদের শরীরে যেমন ইস্ট্রোজেন থাকে, ছেলেদের তেমনই থাকে টেস্টোস্টেরন। এই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কিন্তু যখন খুশি ওঠানামা করতে পারে। স্ট্রেস থেকে শুরু করে নর্মাল ডায়েট—সবই টেস্টোস্টেরনের মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেমন, সাধারণত রোজ সকালে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশী থাকে। ফলে ছেলেরা তখন বেশ এনারজেটিক, চনমনে, অ্যাগ্রেসিভ ফিল করেন। যত দিন গড়াতে থাকে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও কমতে থাকে। এনার্জি লেভেলও কমতে থাকে। ক্লান্তি বোধ হয়। এটা প্রায় রোজই হতে পারে। কিন্তু তাহলেও একে মাসিক বলা বোধহয় যায় না। কারণ মাসিক বলতে আমরা যা বুঝি তার সাথে এই ‘ম্যান পিরিয়ডে’র কোনো মিলই নেই।
আই.এম.এস.
আজ্ঞে হ্যাঁ। এই নামেই ডাকা হয় ‘ম্যান পিরিয়ড’কে। বিখ্যাত ‘দ্য ইরিটেবল মেল সিনড্রোমে’র লেখক জেড ডায়মন্ডই প্রথম এর উদগাতা। আই.এম.এস. বা ইরিটেবল মেল সিনড্রোম যে হরমোনের পরিবর্তনের জন্যই হয়, একথাও তিনিই প্রথম বলেছিলেন। ডায়মন্ড বলেছিলেন, আই.এম.এস. হল একটা বিশেষ অবস্থা, যে অবস্থায় ছেলেরা হাইপার সেনসিটিভ থাকে, সহজে রেগে যায়, বা উদ্বিগ্ন থাকে। তবে ওই ক্র্যাম্প বা ব্যথা বিষয়টা মেয়েদের যা হয়, ছেলেদের তার সিকিভাগও হয় না। হবার কথাও নয়। আর ব্যথা ট্যথাকে ছেলেরা আর কবেই বা বেশী পাত্তা দিয়েছে!
আজগুবি নয় মোটেই। তাহলে এবার থেকে আপনিও বলতেই পারেন আপনার গিন্নিকে যে আপনারও ক্র্যাম্প ধরেছে, বা আপনারও ‘ম্যান পিরিয়ড’ হয়েছে। তবে এরপর তিনি যদি রেগে যান, তাহলে সে দায়িত্ব কিন্তু আমাদের নয়!
মন্তব্য করুন