দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত জলের ট্যাঙ্কে যতোই পরিষ্কার জল থাকুক না কেন, ট্যাঙ্কটাই একসময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে যদি না ঠিকমতো পরিষ্কার করেন। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ট্যাঙ্কের ভিতর শ্যাওলা ও ব্যাকটেরিয়া জমে জলের সাথে মিশে যায়। পরে সেই জল ফুটিয়ে খেলেও রোগের ঝুঁকি থেকে যায়।
বছরে কমপক্ষে একবার সঠিকভাবে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করলে সারাবছর নিশ্চিন্তে জল খেতে ও ব্যবহার করতে পারবেন। আজকে থাকছে জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের সহজ টিপস।
ট্যাঙ্কটি খালি করুন এবং শুকাতে দিনঃ
সবার আগে জলের ট্যাঙ্কের কলটা খুলে ট্যাঙ্কটি খালি করে নিন। সব জল বেরিয়ে গেলেও নিচের জলটুকু সহজে বের হবেনা। তার জন্য প্রথমে বালতি ব্যবহার করুন এবং পরে প্লাস্টিকের মগ বা কাপ ব্যবহার করুন। একদম তলানির জলটা ওয়েট বা ড্রাই ভ্যাকুয়ামের সাহায্যে বের করে নিন, তারপরে শুকনো তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে ফেলুন। যদি ট্যাঙ্কটি আকারে ছোট হয় তাহলে কয়েকজনে মিলে ট্যাঙ্কটি উল্টে জলশূন্য করতে পারেন। জলশূন্য করার পরে ট্যাঙ্কটি শুকানোর জন্য কিছুক্ষণ রেখে দিন।
ট্যাঙ্কের ভিতরটি পরিষ্কার করুনঃ
ট্যাঙ্কের সাইজ অনুযায়ী গরম জল ও লিকুইড ডিটারজেন্ট বা ডিটারজেন্ট পাউডার একসাথে মিশিয়ে একটি ক্লিনিং সলিউশন তৈরি করে নিন। এরপরে নাইলনের ব্রাশ বা স্পঞ্জ সলিউশনে ডুবিয়ে ট্যাঙ্কের ভিতরটা ভালো করে ঘষে পরিষ্কার করুন। ছোট হাতলের ব্রাশ হলে আড়াআড়িভাবে ঘষতে হবে। আর বড় হাতলের ব্রাশ হলে লম্বালম্বিভাবে ঘষতে হবে। ট্যাঙ্কের নিচ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য বড় হাতলের ব্রাশ হলে ভালো হবে। স্টিলের ব্রাশ বা স্পঞ্জ ভুলেও ব্যবহার করতে যাবেন না, এগুলো ট্যাঙ্কের প্লাস্টিক নষ্ট করে দিবে।
দেয়ালের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিনঃ
ডিটারজেন্ট জলে ট্যাঙ্কের দেয়াল পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। যদি না হয়, তাহলে বেকিং সোডা ট্যাঙ্কের দেয়ালে ছিটিয়ে দিন এবং ব্রাশ দিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন। কর্ণার এবং জয়েন্টের ময়লা তোলা বেশ কঠিন, তাই এসব জায়গায় ছোট টুথব্রাশ দিয়ে ঘষতে হবে। কঠিন জায়গার দাগ-ময়লাগুলো ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত সেগুলো পরিষ্কার হচ্ছে।
ময়লা ধুয়ে ফেলুনঃ
ট্যাঙ্কের ভিতরের এলাকা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর পাইপযোগে জল দিয়ে ময়লা ধুয়ে ফেলুন। কঠিন জায়গার ময়লা যতক্ষণ না পর্যন্ত জলে মিশছে ততক্ষণ পর্যন্ত জল স্প্রে করতে থাকুন। তারপর ট্যাঙ্কের কল ছেড়ে জলটা বাইরে ফেলে দিন। চাইলে গরম পানি ট্যাঙ্কে ঢেলে কয়েক ঘন্টা রেখে দিতে পারেন, পরে বের সেটা বের করে ফেলবেন। প্রয়োজনে কয়েকবার জল বদলে ট্যাঙ্ক ধুতে হবে পরিপূর্ণভাবে ময়লা ও ডিটারজেন্ট পরিষ্কার করার জন্য। বড় ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তলানির আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে ভ্যাকুয়াম এবং শুকনো তোয়ালে/মপিং ব্রাশের সাহায্যে।
ট্যাঙ্কের পাইপ পরিষ্কার করুনঃ
ট্যাঙ্কের পাইপে একটু ক্লিনিং সলিউশন ঢেলে দিন। তারপরে ওয়াটার পাম্পের সাহায্যে সলিউশনটা পাইপের ভিতর পাম্প করুন ময়লা সরানোর জন্য। তারপর গরম জল পাম্প করে পরিষ্কার করে ফেলুন। প্রয়োজনে আরও কয়েকবার সলিউশন ও গরম জল পাম্প করে পাইপ পরিষ্কার করুন।
ট্যাঙ্কটি জীবাণুমুক্ত করুনঃ
পরিষ্কারের পরে ট্যাঙ্কটি জীবাণুমুক্ত করতে প্রথমে এটি চার ভাগের তিন ভাগ পরিষ্কার জল দিয়ে ভরে নিন। তারপরে এতে পরিমাণমতো ক্লোরিন ব্লিচ ঢেলে দিন। কতটুকু পরিমাণে ঢালতে হবে তার জন্য নির্দিষ্ট একটি মাপ আছে।
- ২৫০ গ্যালন ট্যাঙ্কের জন্য ৪ কাপ ব্লিচ,
- ৫০০ গ্যালন ট্যাঙ্কের জন্য আধা গ্যালন ব্লিচ,
- ৭৫০ গ্যালন ট্যাঙ্কের জন্য পৌনে এক গ্যালন ব্লিচ,
- ১০০০ গ্যালন ট্যাঙ্কের জন্য পুরো এক গ্যালন ব্লিচ লাগবে।
ব্লিচ ঢালার পরে ট্যাঙ্কের বাকি অংশ জলপূর্ণ করে নিন, তাহলে ব্লিচ জলের সাথে ভালোভাবে মিশে যাবে। তারপরে ২৪ ঘন্টা ট্যাঙ্ক ওভাবেই রেখে দিন। নির্দিষ্ট সময় পরে কল খুলে ক্লোরিন জল বের করে দিন। তলানির জলের জন্য আগের মতোই তোয়ালে এবং ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করুন।
জল ভরার আগে শুকিয়ে নিনঃ
ব্লিচিং শেষে ট্যাঙ্কটা আবার শুকিয়ে নিন। ভালোমতো শুকিয়ে নিয়ে জল ভরলে গন্ধ থাকবেনা। এক্ষেত্রে ৭-৮ ঘন্টা খালি রাখলে ভালো হবে।
সতর্কতাঃ
জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের পুরো প্রসেসে খেয়াল রাখবেন যেন কোনভাবেই এর ময়লা বা কেমিক্যাল মিশ্রিত জল কোন গাছপালা, অন্য কোন জলের উৎস, মানুষ, প্রাণীর সংস্পর্শে না আসে। এমনকি ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করাও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কাজেই পরিষ্কারের সময় প্লোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করবেন।
sohel
useful tips