সামনেই আসছে পুজো আর পুজোর এই কয়েকটা দিন সকলেই চান সুন্দরভাবে সাজুগুজু করতে। কিন্তু অনেকেরই মুখে ব্রণ হয় অনেকের আবার এই ব্রণর থেকেই ত্বকের মধ্যে দাগ সৃষ্টি হয়।
মুখের মধ্যে থাকা এই অস্বস্তিকর দাগ ছোপ গুলিই হলো মেচেতা। এগুলি যে কারো মুখের সৌন্দর্যের বারোটা বাজিয়ে দেয়। এখন নিখুঁত ত্বকের সৌন্দর্য পেতে সবার আগে এই মেচেতার দাগগুলো তুলে ফেলতে হবে। আজ বলবো রান্নাঘরের মধ্যে থাকা জিনিস দিয়েই কীভাবে মেচেতার দাগ দূর করবেন।
ক. প্রথম পর্যায় থেকেই যত্নঃ
মেচেতার দাগ তুলতে অনেকেই নানান রকম বাজারচলতি ক্রিম, লোশন ব্যবহার করেন তবে তারা সেই সবের ব্যবহার করে খুব একটা উপকার পান না। বাজারচলতি সেইসব লোশন ও ক্রিমের বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এছাড়া মেচেতা দূর করতে অনেকেই বিভিন্ন রকমের লেজার ট্রিটমেন্ট করে থাকেন, তবে সেই চিকিৎসাও স্থায়ী নয় সাময়িক।
সেক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মুখের এই সমস্যা থেকে যদি রেহাই পাওয়া যায়, তাহলে এগুলি যেমন হাতের কাছে পাওয়া যাবে তেমনি এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকবে না। তবে এই ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই ত্বকের যত্ন নিতে হবে অর্থাৎ মেচেতায় আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিন থেকেই ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে হবে তবেই এটি ত্বকের উপর বিশেষভাবে প্রভাব ফেলতে পারবে না।
খ. মেচেতার চিকিৎসাঃ
মেচেতার চিকিৎসা করাবার আগে জানতে হবে মেচেতা কেন হয়? মেচেতা হওয়ার প্রধান কারণ হলো, চেহারা অপরিষ্কার রাখা ও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি যদি সরাসরি চেহারায় পড়ে তখন মেচেতার মতো সমস্যা হয়। এছাড়াও অনিদ্রা, থাইরয়েড জনিত সমস্যা, হরমোনের তারতম্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবনে ত্বকের মধ্যে মেচেতার সৃষ্টি হয়।
গ. রোজকার যত্নঃ
ত্বক যাতে খুব বেশি ময়লা না হয়, সেই কারণে প্রতিদিন ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। তার সাথে ত্বকের সাথে ব্যবহার করা প্রত্যেকটা জিনিসকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ব্রণ প্রবণ ত্বক হলে অতিরিক্ত মেকআপ করা যাবে না। মেকআপ করার পর অবশ্যই মেকআপ ধুয়ে ভালো করে গোলাপজল দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়া দিনে রোজ দুই লিটার করে জল খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
ঘ. বিশেষ কতগুলি যত্নঃ
মেচেতা দূর করতে চাইলে সানস্ক্রিন না মেখে ভুলেও বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। রোজ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। বাড়ির বাইরে যদি নাও বেড়ান, তাও সানস্ক্রিন লাগান। রান্নাঘরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন মুখে। অনেকেই রান্নাঘরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগান না, এমনি ঘরে থাকলে সানস্ক্রিনের ইউজ করেন না। এই ভুলটি করবেন না।
সপ্তাহে একদিন করে চালের গুঁড়ো ও টক দই দিয়ে একটি বিশেষ প্যাক তৈরি করে মুখে স্ক্রাব করুন। এর পাশাপাশি ১ চা চামচ মুলতানি মাটি, ১ চা-চামচ চন্দনের গুঁড়ো, ১ চা চামচ টক দই, ১ চা চামচ মধু একটি পাত্রে একসাথে মিশিয়ে নিয়ে মেচেতার বসে যাওয়া দাগের ওপর দিলে মেচেতার দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে, এর পাশাপাশি গোলাপ জল ও এলোভেরা ক্রিমের ব্যবহার করতে পারলে উপকার পাবেন।
ঙ. মেচেতার দাগ দূর করুন রান্নাঘরের জিনিস দিয়েঃ
১. লেবুর রসঃ রোজ মেচেতার দাগ হওয়া স্থানে তুলোর বলের সাহায্যে লেবুর রস লাগান। মিনিট খানেক রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. গুঁড়ো দুধ ও গ্লিসারিনঃ একটি পাত্রে গুঁড়ো দুধ ও তার সাথে গ্লিসারিন মিশিয়ে মেচেতার দাগ হওয়া স্থানে লাগাতে পারেন এতে উপকার পাবেন।
৩. অ্যালোভেরা জেল ও আলুর পেস্টঃ অ্যালোভেরা জেল ও আলুর পেস্ট একত্রিত করে মুখে রোজ লাগান।
৪. আমন্ড অয়েল ও মধুঃ আমন্ড অয়েল ও মধু একসাথে মিশিয়ে মেচেতা হওয়া স্থানে হালকা করে ঘষে নিন। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে নিন। বেশ কিছুদিন ব্যবহার করলে আস্তে আস্তে দেখবেন কিছুটা উপকার পাচ্ছেন।
৫. কমলালেবুর খোসা ও দুধঃ কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো করে তার সাথে দুধ মিশিয়ে রোজ মেচেতার দাগ হওয়া স্থানে ব্যবহার করুন। নিয়মিত যদি এটি ব্যবহার করেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।
৬. ভিনেগারঃ মেচেতার দাগ হওয়া স্থানে লেবুর রস, সামান্য ভিনেগার ও অল্প একটু জল মিশিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
৭. কাঁচা পেঁপেঃ কাঁচা পেঁপে দাগ তুলতে ভীষণ রকম ভাবে উপকারী। ঠিক একইভাবে দাগ তুলতে জুড়ি নেই মধু ও লেবুর রসের। দাগের যম এই তিনটে জিনিসকে একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
৮. টক দইঃ টক দই মেচেতার দাগের ওপর লাগালে সহজেই কমে যাবে।
চ. নিমপাতার প্যাক মেচেতা তুলতে সাহায্য করবেঃ
১. নিম আর হলুদের প্যাকঃ নিম অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে। তাই এটি ত্বকে ব্রণ ও ব্রণর ফলে সৃষ্টি হওয়া দাগ, মেচেতা সবকিছু থেকেই ত্বককে সুরক্ষিত করে। এছাড়া নিম ত্বককে ড্রাই হওয়া ও অতিরিক্ত অয়েলি হওয়ার থেকে রক্ষা করে। নিমের সাথে তাই একটু হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন আর এই প্যাক মুখে লাগিয়ে মিনিটে দশেকের জন্য লাগান, সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে দিন। এই প্যাকটা মুখে লাগালে কিছুদিনের মধ্যেই মেচেতা কমে যাবে।
২. নিম তুলসীর ফেসপ্যাকঃ নিমের যেমন অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাংগাল গুণ আছে, তেমনি তুলসীরও অ্যান্টি সেপটিক গুণ আছে। নিম ও তুলসি পাতা ভালো করে বেটে তার সাথে ত্বক অনুযায়ী মধু বা চন্দন গুঁড়ো বা মুলতানি মাটি মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি সারা মুখে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। তারপর মুখ হালকা স্ক্রাব করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩. নিম ও পাকা পেঁপের ফেসপ্যাকঃ ত্বকের যেকোনো দাগ ছোপ কমাতে পাকা পেঁপে ভীষণ ভাবে কার্যকর। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে মিনিট দশেকের জন্য রেখে দিন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে কয়েক মাসের মধ্যেই উপকার পাবেন।
৪. দারুচিনি ও কাঁচা দুধঃ ত্বকে যে কোনো দাগ কমাতে দারুচিনি ভীষণভাবে উপকারী একটি জিনিস, প্রত্যেকে রান্নাঘরেই এটি পাবেন। এর সাথে একটু কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিন, তারপর ত্বকে লাগান। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে উপকার পাবেন।
৫. ছোলার ডালঃ মেচেতা দূর করতে কাঁচা ছোলা সারারাত জলে ভিজিয়ে তারপর ব্লেন্ডারে বেটে মুখে লাগান। মিনিট পনেরো রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৬. লেবুর রস ও চিনিঃ যেকোনো দাগ দূর করতে লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকরী। তাই একটি পাত্রের মধ্যে লেবুর টুকরো নিন ও কিছুটা চিনি নিয়ে নিন। তারপর মেচেতার ফলে সৃষ্টি হওয়া দাগের ওপর এক টুকরো লেবু নিয়ে ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না চিনি গলে যায়। এমনটা করলে আপনি উপকার নিজেই বুঝতে পারবেন।
৭. অ্যালোভেরা ও মধুঃ ত্বকের দাগ কমাতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ব্রণ, ফুসকুড়ি থেকে শুরু করে যেকোনো দাগছোপ কমাতে অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। অ্যালোভেরা ও মধু মিশিয়ে ত্বকে হওয়া মেচেতার দাগের ওপর লাগালে দাগ দূর হবে।
মন্তব্য করুন