শরীর ভালো রাখতে অনেকেই রোজ ভিটামিন ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্টারী ফুড খান। কিন্তু তার কোন দরকারই পড়বে না যদি রোজ একটু করে এই ড্রাই ফ্রুটস গুলি খেতে পারেন। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম উপাদান থাকে এতে। শরীরকে সবদিক থেকে সুস্থ রাখে। শুধু কি শরীর, ত্বক চুল সবই সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে। এক কথায় ড্রাই ফ্রুটস আপনাকে একদিকে সুস্থ অন্যদিকে সুন্দর থাকতে সাহায্য করবে।
কেন এতো উপকারী ড্রাই ফ্রুটস?
আমরা প্রতিদিন শাকসবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি খাবার তো খাই। কিন্ত এগুলো আমরা অনেক সময় বেশ তেল, ঝাল, মশলা দিয়ে রান্না করি। আবার অতি উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার ফলে এর খাদ্যগুণ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু এই সমস্যাটা ড্রাই ফ্রুটসে হয়না। ড্রাই ফ্রুট আমরা সরাসরি খাই। ফলে এগুলোতে থাকা উপকারী উপাদান গুলোও সরাসরি আমাদের শরীরে পৌছায়।
শরীর সুস্থ ও কার্যকরী রাখতে আমাদের যা যা দরকার মোটামুটি সেই সবকিছুই ড্রাই ফ্রুট থেকে পাওয়া যায়। হার্ট থেকে শুরু করে ব্রেন, হাড়, স্কিন, চুল সবই ভালো থাকে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িতে তোলে। রক্তচাপ, হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রনে রাখে। আবার যারা রোগা হতে চান তাদের জন্যও উপকারী। ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রনে। এককথায় বহুগুণে গুনাম্বিত এই ড্রাই ফ্রুটস। তাই প্রত্যেকেরই রোজের ডায়েটে এগুলো রাখা উচিৎ।
অনেকে মনে করেন ড্রাই ফ্রুটসে ফ্যাট থাকে। এগুলো খেলে ওজন বেড়ে যাবার সমস্যা হতে পারে তারা একদমই ভুল ভাবছেন। এতে বরং ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে। কারণ এগুলোতে উপকারী ফ্যাট থাকে যা শরীরের দরকার লাগে। তাই নিশ্চিন্তে খান। অনেক ধরণের
কাঠবাদাম
এটি ভীষণ উপকারী একটি ড্রাই ফ্রুট। এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলিক, আয়রন, কপার রয়েছে। যেগুলো হার্ট ভালো রাখতে উপকারী। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আয়রনের ঘাটতি থাকলে এই বাদাম বেশ উপকারী। এছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতেও সাহায্য করে এই বাদাম। আবার ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতেও দারুণ উপকারী। রোজ ৪ – ৫টি করে কাঠবাদাম খেলেই উপকার পাবেন।
কাজু
কাজু বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, বি-সিক্স, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও রয়েছে ওমেগা থ্রী ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হার্টের জন্য খুব ভালো। ক্যান্সার থেকে আমাদের দূরে রাখে। চোখও ভালো থাকে। এছাড়াও রক্তাল্পতার সমস্যা থাকলে এই বাদাম খান। এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত রাখে। এছাড়াও এই বাদাম ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতেও সাহায্য করে।
কিশমিশ
কাজুর মত কিশমিশও কিন্তু খুব উপকারী। কারণ কিশমিশে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, আয়রন সহ আরও অনেক উপাদান। আপনার যদি অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে তাহলে কিশমিশ আপনাকে সাহায্য করবে। এছাড়াও পেট পরিষ্কার রাখতে এটি সাহায্য করে। অন্যদিকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, রক্ত কম থাকলে এটা খেতে পারেন। আবার দাঁত ভালো রাখতেও এটি উপকারী। এছাড়াও যাদের ওজন বেশ কম ওজন বাড়াতে চাইলে কিশমিশ উপকারী। তবে কিশমিশে চিনিও থাকে তাই ডায়েবেটিক রোগীরা এটি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
পেস্তা
এটি হল আরেকটি বেশ উপকারী ড্রাই ফ্রুট। শরীরের জন্য অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে এতে। যেমন ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ সহ প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ব্লাড সুগার, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তলে। ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক উপকারিতা।
ওয়ালনাট বা আখরোট
খেতে খুব ভালো না লাগলেও গুণ কিন্তু অনেক। এতে থাকা প্রোটিন শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটায়। এছাড়াও রয়েছে ওমেগা থ্রী ফ্যাটি অ্যাসিড যা হার্ট ভালো রাখে। সারাদিন ব্রেন আমাদের অনেক কাজ করে পরিশ্রম করে তাই মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে এতে রয়েছে উপকারী উপাদান। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও খুব ভালো। এতে থাকা ভিটামিন ই চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। চুল নখ সাইনি রাখে।
খেজুর
অনেকে যেমন ওজন কমাতে চান আবার অনেকেই তেমনই ওজন বাড়াতেও চান। সেক্ষেত্রে কিশমিশের মত খেজুর আপনাকে সাহায্য করবে। এছাড়াও এতে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে অনেক। যা নার্ভাস সিস্টেম ভালো রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খেজুরে থাকা সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম হাড় মুজবুত রাখে। এতে থাকা ভিটামিন ত্বকের জন্যও উপকারী। খেজুরে রয়েছে প্রচুর আয়রন অ্যানিমিয়া বা রক্ত কম থাকলে অবশ্যই খেজুর খান।
রোজ কতটা খাবেন?
সবরকম ড্রাই ফ্রুটস দু তিনটে করে নিয়ে খেতে পারেন। যেমন ২টি খেজুর, ৩টি কাঠবাদাম, ৩টি কাজু, কিশমিশ এভাবে। আবার পরেরদিন বদলে ২ – ৩ করে পেস্তা, আখরোট, কিশমিশ এভাবে মিলিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন। খাওয়ার সময়ের ক্ষেত্রে বলব সকালে খালিপেটে খেতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। যখন খুশি খেতে পারেন। তবে খুব বেশি পরিমাণ নয়। রোজ অল্প করে খেলেই যথেষ্ট। বিশেষ করে সুগারের রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খান। কেননা কিছু ড্রাই ফ্রুটসে মিষ্টি থাকে।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ড্রাই বেরি যেমন স্ট্র বেরি, ক্র্যানবেরি বাজারে পেলে কিনে নিন। এগুলো খেতেও ভালো আবার বেশ উপকারী।
মন্তব্য করুন