দৈনন্দিন জীবনে মশলা হিসেবে আমরা মেথি ব্যবহার করে থাকি, পাঁচ-ফোঁড়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ মেথি। কখনো বা মেথির পাতা শাক হিসেবে রান্না করে খাই। অনেকে আবার ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে কিংবা কৃমির ঔষধ হিসেবেও মেথি খেয়ে থাকেন। স্টেরয়েড জাতীয় অনেক ঔষধের মূল উপাদান আসে এই মেথি থেকেই। এসবের বাইরেও মেথির রয়েছে নানান গুণ। মশলা, খাবার কিংবা ঔষধ রূপে মেথিকে আমরা সবাই চিনি। কিন্তু ত্বকের সৌন্দর্য ঠিক রাখতেও যে মেথি ব্যবহার করা যেতে পারে – সেটা কি জানি?
এত সাধারণ একটা উপাদান মেথি, অথচ হরেক রকমের গুণে ভরপুর। ত্বকের লাবণ্য ধরে রেখে বলিরেখা দূর করে মেথি। সেই সাথে ত্বকের যে কোনো ধরনের ঘা, ফোঁড়া, পাঁচড়া, ব্রণ ইত্যাদি নিরাময়েও সাহায্য করে। নিয়মিত মেথির ব্যবহার কমাতে পারে আপনার মুখের স্থায়ী ব্রণের দাগও, ফিরিয়ে আনে হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা।
আমরা সবাই চাই নিজেকে সুন্দর রাখতে। গায়ের রং যেমনই হোক – ত্বকটাকে ভালো রাখতে চাই, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাই। আর কিছু না হোক, ত্বককে ব্রণ কিংবা মেছতার দাগমুক্ত রাখতে চাই। কিন্তু আমাদের এসব চাওয়ার মাঝে যেই বিষয়টা অনেক বেশি মাত্রায় বিঘ্ন ঘটায় তা হচ্ছে ব্রণ। একবার মুখে ব্রণ উঠলে তো থামার নামই নিতে চায় না। একটার পর একটা উঠতেই থাকে আর পুরো মুখ ভরে যায় বিচ্ছিরি দাগে। অনেকের তো ব্রণের দাগ থেকে মুখে গর্তও হয়ে যায়। এসব উটকো সমস্যা থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে মেথি। যে কোনো ধরনের দাগ সারাতে মেথি কিন্তু খুবই কার্যকর। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তাহলে কিছুদিন ব্যবহার করেই দেখুন। তার আগে চলুন জানি মেথি কি কি উপায়ে আপনার মুখ থেকে ব্রণের দাগ দূর করতে পারে।
১. মেথির পেস্টঃ
মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা বেটে পেস্ট করে নিন। গোসলের আগে এই পেস্ট মুখে, গলায়, ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। আধ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। মেথির পেস্ট ত্বকের যে কোনো ধরনের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে দুদিন এই পেস্ট ব্যবহার করলে ফলাফল পাবেন খুব দ্রুতই।
২. পুদিনা পাতা ও মেথির পেস্টঃ
পুদিনা পাতা ছেঁচে রস করে নিন। এই রস মেথির পেস্টের সাথে মিশিয়ে ব্রণের দাগের উপর লাগিয়ে রাখুন। বিশ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে দাগ থাকবে না একটুও, সেই সাথে দৌড়ে পালাবে ব্রণও।
৩. মেথি পাতা ও মধুর পেস্টঃ
মেথি পাতা সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে পরিস্কার করে নিন। এই পাতা বেটে পেস্ট করে এর সাথে মধু মিশিয়ে নিন। এবার মুখে, গলায়, ঘাড়ে বা হাতে-পায়ের যে স্থানে দাগ আছে সেসব স্থানে লাগিয়ে নিন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মধু ত্বকে স্যুট না করলে মধুর বদলে শসার রস, গোলাপজল কিংবা লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
৪. মেথি ভেজানো পানিঃ
মেথি পরিষ্কার করে ধুয়ে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি পান করুন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও দাগ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া মেথি ভেজানো পানি তুলোর বলের সাহায্যে কিছুক্ষন পরপর ব্রণের দাগের উপর লাগিয়ে রাখলেও দাগ কমে যায়।
৫. মেথি, বেসন, চিনির মিশ্রণঃ
চিনি ত্বকের প্রাকৃতিক স্ক্রাবারের কাজ করে। বেসন ত্বকের গভীরে জমে থাকা ধুলো-ময়লা দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। মেথি বেটে পেস্ট করে এর সাথে বেসন মিশিয়ে পাতলা মিশ্রণ তৈরি করুন। এবারে এতে চিনি দিয়ে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে থাকুন। যতক্ষন পর্যন্ত চিনির দানা গলে না যায় ততক্ষন পর্যন্ত ম্যাসাজ করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি দাগ দূরীকরনের পাশাপাশি ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা, মৃত কোষ এসবও তুলে আনবে।
৬. মেথি ও এসেন্সিয়াল অয়েলঃ
কুসুম গরম পানিতে সারা রাত মেথি ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানি ছেকে নিয়ে এতে আপনার পছন্দের সুগন্ধীযুক্ত কয়েক ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিন। এই তরলটি একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষন করুন। দিনে যতবার মুখ পরিষ্কার করবেন ততবার এই মিশ্রণটি মুখে স্প্রে করে আলতোভাবে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিন। এটি দাগ কমাতে সাহায্য করার পাশাপাশি কাজ করবে টোনারেরও।
৭. মেথি পাতা ও অ্যালোভেরা জেলঃ
অ্যালোভেরা জেলের সাথে মেথি পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট রাতে ঘুমোবার আগে ত্বকে লাগিয়ে আধ ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। যে কোনো ধরনের ত্বকের দাগ দূর করতে এই মিশ্রণটি খুবই কার্যকর। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।
মন্তব্য করুন