ঘি খেতে সকলেই কম বেশি পছন্দ করেন। বিশেষ করে বাঙালির গরম ভাতে ঘি চাইই চাই। গরম ভাতে কাঁচালঙ্কা, একটু আলু সিদ্ধ, আর এক চামচ গাওয়া ঘি যেন অমৃতের স্বাদ এনে দেয়। কিন্তু সবসময় গাওয়া ঘি পাওয়াটাও একটু মুশকিলের ব্যাপার। আগেকার দিনে ঠাকুমা-দিদিমারা বাড়িতেই গাওয়া ঘি বানাতেন কিন্তু এখন দোকানে যে সকল ঘি পাওয়া যায় তার স্বাদ আগেকার সেই স্বাদের সঙ্গে কিছুতেই মেলে না। অনেকেই তাই বাড়িতেই দুধ থেকে ঘি বানিয়ে নেন। অনেকে আবার ঝুট ঝামেলার কথা ভেবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে দোকান থেকেই ঘি কিনে আনেন। তবে বাড়িতে ঘি বানানো কিন্তু খুব সোজা। তাই আজ দাশবাসের তরফ থেকে আপনাদের জন্য রইলো ঘি বানানোর রেসিপি।
১. ঘরে ঘি বানানোর উপকরণঃ
ঘরে ঘি বানানো যায় দুই রকম পদ্ধতিতে। কেউ কেউ দুধের সর দিয়ে ঘরে ঘি বানিয়ে থাকেন, কেউ আবার মাখন দিয়েও ঘরে ঘি বানিয়ে থাকেন। তবে দুধের সর থেকে ঘি বানাতে গেলে দুধের সর জমাতে অনেকটাই সময় লাগে, সেক্ষেত্রে মাখন দিয়ে ঘি তৈরি করা অনেক সহজ উপায়। তবে আমি আপনাদের আজ দুই পদ্ধতিতে ঘি করার বিষয়েই বলবো।
পদ্ধতি ১ .দুধের সর থেকে ঘি বানানোঃ
স্টেপ ১ .দুধের সর জমানোঃ
প্রথমে দুধে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে রাখুন। তারপর দুধের থেকে সরটা তুলে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। এই কাজটি রোজ একইভাবে করতে থাকুন। প্রায় এক থেকে দেড় মাস এইভাবে দুধ জ্বাল দিয়ে দিয়ে দুধের সর তুলে জমিয়ে রাখুন।
স্টেপ ২. দুধের সর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে ফেটিয়ে নিনঃ
যেদিন ঘি করবেন বলে ভাবছেন সেই দিন সকাল বেলায় উঠে ডিপ ফ্রিজ থেকে দুধের সরটা বের করে নিন। এরপর সাধারণ তাপমাত্রায় কিছুক্ষণ রাখার পর ভালো করে দুধের সরটা ফেটিয়ে নিন।
স্টেপ ৩. ঘি বানানোর হাতে খড়িঃ
এরপর দুধের সরটা ননস্টিক প্যানে দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নাড়তে থাকুন। অনেকক্ষণ ধরে নাড়তে নাড়তে দেখবেন একসময় ঘি বেরিয়ে আসবে আর নীচে চাঁচির রংটা পাল্টাতে থাকবে। সমস্ত ঘি বেরিয়ে আসার পর নীচে খয়রি রঙের চাঁচি পরে থাকবে। এইবার ঠান্ডা হয়ে এলে পরিষ্কার পাত্রে আপনি শুধু ঘি টুকু ছেঁকে নিন। এই গাওয়া ঘি যেমন মুড়ির সাথে মাখিয়ে খেতে পারবেন, তেমনি রুটির সাথে ও খেতে পারবেন আর গরম ভাতের সাথে ঘি তো সর্বদাই পছন্দের।
ফুটনোটঃ ঘি এর যে চাঁচিটা রয়ে গেলো, সেই দিয়ে মিল্ক কেক বানিয়ে মিষ্টিমুখ করে নিতে পারেন।
মিল্ক কেক বানাতে গেলে যেগুলি লাগবেঃ
- ১. ঘি এর চাঁচি
- ২. দেড় কাপ মত দুধ
- ৩. এক কাপ গুঁড়ো দুধ
- ৪. চার-পাঁচটা এলাচ গুঁড়ো
- ৫. এক কাপ চিনি
- ৬. ঘি
- ৭. দশ বারোটা বাদামের গুঁড়ো
মিল্ক কেক বানানোর রেসিপিঃ
ননস্টিক প্যানে পরে থাকা ঘি এর চাঁচি গুলির সাথে দেড় কাপ দুধ, এক কাপ গুঁড়ো দুধ, এক কাপ চিনি ও এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। তারপর সব উপকরণ গুলি নিয়ে একসাথে নাড়তে থাকুন। এবার প্যানে লক্ষ রাখুন প্যান থেকে চাঁচি যখন ছেড়ে আসবে তখন নামিয়ে নিন। একটি থালাতে ঘি মাখিয়ে রাখুন, এবার গরম গরম সেই চাঁচি ঢেলে দিন ওই থালার মধ্যে। এরপর আপনার কাজ শেষ, আপনি এই থালাটি ঠান্ডা হওয়ার জন্য এক ঘন্টা রেখে দিন।
এরপর ঠান্ডা হয়ে এলে
একটা চাকু দিয়ে বরফির আকৃতি বা ত্রিবুজ আকৃতি বা আপনার পছন্দের মত আকারে কেটে নিন। তারপর একটু বাদাম গুঁড়ো এর মধ্যে ছড়িয়ে দিন আর খাবার পর শেষপাতে এই মিল্ক কেক পরিবেশন করুন।
পদ্ধতি ২. মাখন দিয়ে ঘি বানানোর পদ্ধতিঃ
কড়াইতে মাখন দিয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে দিন। তবে গ্যাসের আঁচ মাঝারি রাখবেন। এরপর চামচ দিয়ে মাখন নাড়তে থাকলেই দেখবেন মাখনটা গলে গিয়েছে। ৫-৬ মিনিট এইভাবে নেড়ে জ্বাল দেওয়ার পর একসময় দেখবেন মাখন গলে ফেনা উপরে উঠছে আর কেমন যেন তেলতেলে হয়ে গেছে ও মাখনের রং ও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে।
ফেনা ফেনা হয়ে যে তেল বেরোচ্ছে এটাই আসলে ঘি। এরপর গ্যাস বন্ধ করে দিন। কারণ বেশিক্ষণ জাল দিলে ঘি পুড়ে কালো হয়ে যাবে। গ্যাস বন্ধ করবার পর একটা পরিষ্কার পাত্র এনে ছাঁকনি দিয়ে ঘি ছেঁকে নিন। গরম অবস্থায় ঘি তেলের মতই দেখায়, তাই কিছুক্ষণ রেখে দিন ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য।
ঠান্ডা হয়ে গেলে দেখবেন ঘি সুন্দরভাবে জমে গেছে। ঠান্ডা করবার জন্য ফ্রিজে দেওয়ার দরকার নেই বাইরেই ঘি ঠান্ডা হয়ে যাবে। এয়ারটাইট বয়ামে ঘি রেখে দিলে বেশি ভালো থাকে।
মন্তব্য করুন