অমরনাথ হল হিন্দুদের একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। এটি জম্মু কাশ্মীরে অবস্থিত। এটি মূলত একটি গুহা। এবং চারিদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা। পাহাড়গুলি আবার বরফাবৃত। গ্রীষ্মকালে খুব কম সময়ের জন্যই এখানে যাওয়া সম্ভব হয়। কারণ বাকি সময় পুরো রাস্তাটি বরফে ঢাকা থাকে। এবং সেই সময় লক্ষ লক্ষ ভক্ত সেখানে যাত্রা করে। কিন্তু দুর্গম এই পথ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সাধারন মানুষদের কাছে?
অমরনাথের গুহার ভেতর জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে, আর সেই জল জমে জমে শিবলিঙ্গের আকার ধারন করে। আর সেখানেই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ যাত্রা করেন। এবং এই শিবলিঙ্গে পূজা দেন। বিভিন্ন পৌরাণিক ইতিহাস, মানুষের কিছু সাধারন বিশ্বাস তাদের এখানে বার বার টেনে আনে।
প্রচলিত আছে, বহুকাল আগে ভৃণ্ডমুনি সেখা অমরনাথ বা শিবকে দেখতে পান। তারপর থেকেই অমরনাথে যাত্রার প্রচার শুরু হতে থাকে। এবং তারপর থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষ অমরনাথে যাত্রা করতে শুরু করেন।
পুরাণে আছে, শিব পার্বতীকে অমরত্ব শিক্ষা প্রদানের জন্য, এই স্থানে নিয়ে এসেছিলেন। এবং কথিত আছে শিব তার সমস্ত ত্যাগ করেছিলেন অর্থাৎ তাঁর ষাঁড় নন্দি, তার শিরস্থ চন্দ্র, বায়ু, অগ্নি, জল, মৃত্তিকা এবং সর্পকুলকে বিভিন্ন স্থানে রেখে আসেন অমরনাথ যাত্রা করার আগে। তাই এটি ভক্তদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ ।
একটি কাহিনি প্রচলিত আছে, মহাদেব পার্বতীকে যখন অমরত্ব সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করছিলেন, তখন সেখানে কোন প্রানী ছিল না। শুধুমাত্র দুটি পায়রার ডিম ছিল। সেই দুটি নাকি এখনো দেখতে পাওয়া যায় ওখানে। এইসব গল্প কাহিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এইরকম গল্প কাহিনীর টানে মানুষ বার বার এখানে ছুটে আসেন।
সাধারন মানুষের একটি আধ্যাত্মিক টান রয়েছে এই তীর্থস্থানের প্রতি। তারা মনে করেন অমরনাথের শিব লিঙ্গের দর্শন মানে, সাক্ষাৎ মহাদেবের দর্শন। এছাড়াও মানুষের গভীর বিশ্বাস, দুর্গম এই তীর্থস্থানে গেলে পূর্ণ অর্জন হয়। এবং তার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের সমস্ত অনৈতিক কাজের নিবৃত্তি সম্ভব। ভগবান শিব মানুষের অতিরিক্ত লালসা, এবং সেই লালসার ফলে হওয়া পাপকে ক্ষমা করে দেন। তাই সেই পূর্ণ অর্জনের জন্যই এত মানুষ যান সেখানে।
এই অমরনাথ যাত্রাকে সবাই অত্যন্ত পবিত্র মনে করেন। শিবরাত্রি ব্রত অত্যন্ত জনপ্রিয় সাধারন মানুষের কাছে। বেশির ভাগ বাঙালী শুধু বাঙালী নয় অন্যান্য ধর্মের মানুষও ঘটা করে শিবের পূজা করেন। অমরনাথের মত পবিত্র স্থানে গিয়ে সকলের ভগবান শিবকে দেখা এবং তার পূজা দেবার ইচ্ছা প্রবল থাকে। তারা মনে করেন ভগবানের কৃপাতেই সেই যাত্রা হয়। এবং সবার ভাগ্যে এই পবিত্র যাত্রা থাকে না। আর এই যাত্রা হলে জীবন সার্থক। তাই অত্যন্ত দুর্গম পথ হলেও তারা যেতে চান। যানও অমরনাথ দর্শনে।
অমরনাথ হিন্দুদের পবিত্র স্থান হলেও ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ এই যাত্রায় আপনি পাবেন। অমরনাথ যেতে হলে একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত গাড়ি যায়। এই গাড়ির অনেক ডাইভার মুসলিম। কেন এই কথা বলছি? আসলে জঙ্গি হামলা যেসময় হয়েছিল অমরনাথে, তখন এই মানুষগুলি জাত পাত ভেদাভেদ না করে বহু পর্যটকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তারা হলেন সেলিম মির্জা , ইব্রাহিম। অমরনাথ মানে শুধু হিন্দু মন্দির নয়। জাতিভেদ নির্বিশেষে মানুষের মিলনক্ষেত্র। তাই অমরনাথের মন্দিরের এত মাহাত্ম্য।
মন্তব্য করুন