পুজোর আবহের রেশ কাটতে না কাটতেই বাতাসে ঠান্ডা আমেজ ও ভোররাতের কুয়াশা নিয়ে শীত নিজের আগমনবার্তা ঘোষণা করেছে। তার সাথেই হিমেল হাওয়ার ছোঁওয়া লেগে ত্বকের চেহারাতেও রুক্ষতা ও শুষ্কতা ছাপ ফেলেছে। আর যাদের ড্রাই স্কিন রয়েছে
তাদের ত্বকের খসখসে ভাব বেড়ে গিয়ে তা আরো নির্জীব দেখায় এবং ব্রণ বেরোনোর সম্ভাবনা ও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবারে শীত জাঁকিয়ে পড়ার আগেই আপনার স্কিনের লাবণ্য অমলিন রাখতে ঘরোয়া দশটি টিপস ফলো করুন চোখ বুজে।
১) ময়েশ্চারাইজারঃ
এই শীতে বাজারচলতি হাইড্রেটিং ক্রিম এর উপরে ভরসা না করে বিশ্বাস রাখুন প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার এর প্রতি। অর্গানিক ময়েশ্চারাইজার যেমন ক্যাস্টর, অলিভ বা জোজোবা তেলে ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন এ রয়েছে যা আপনার ত্বকের কোলাজেন ভাঙতে দেয়না ও ফ্রি রাডিকেল ক্ষয় হতে দেয় না। তাই স্নান করার আগে বা রাতে শুতে যাবার আগে ত্বকের আর্দ্রতা সুনিশ্চিত করতে ময়েশ্চারাইজ করতে মোটেই ভুলবেন না।
২) ওটমিলঃ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওটমিল অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান শুষ্কতা দূরীকরণে। এর জন্য
ওট নিয়ে ব্লেন্ডার এ গুঁড়ো করে সেটা জলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে চামড়ায় এপ্লাই করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে পিএইচ ব্যালেন্স রাখতেও ওটমিল দারুন কাজে দেয় যেটা এই হেমন্তে খুব দরকারী।
৩) জল-ই জীবনঃ
জল যে আমাদের জীবনের অনাদি উৎস এই আপ্তবাক্য সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা
মোটামুটি জেনে এসেছি। কিন্তু সেটার উপযোগিতা সম্পর্কে প্রকৃত সজাগ হই কি? বোধয়
না। শীতকালে এমনিতেই আমাদের জল খাওয়া কমে যায় তাই ত্বকেও তার প্রভাব পড়ে
বৈকি! সেইজন্য দৈনিক ৮-১০ গ্লাস জল খাবার অভ্যেস তৈরি করুন এবং সাথে জুস বা
অন্যান্য পানীয় ও। ভেতর থেকে ত্বক সজীব না হলে স্কিন টিস্যুতে তার প্রতিফলন
আসবে কি করে?
৪) কি কি থাকবে বারণ?
শীত জমিয়ে দাপট দেখানোর আগেই কিছু জিনিসে আগাম সতর্কতা নিয়ে ফেলুন যাতে
করে ড্রাই স্কিনের যত্নে কোনো খামতি না থাকে।
- গরমজলের ব্যবহার থেকে সতত বিরত থাকুন। কারন এটি স্কিন থেকে আর্দ্রতা
- শুষে নেয়।
- বারবার করে মুখ ধোবেন না।
- ত্বকে ফ্রেশনেস আনতে আমরা সাবান এর ব্যবহার করে থাকি। যেটা আমাদের
- চামড়া শীতে আরো শুষ্ক করে তোলে। বিকল্প হিসেবে বডিওয়াশ ইউজ করুন।
- ত্বকে লোশন বা কৃত্রিম রঙ যুক্ত প্রসাধন ব্যবহার করবেন না। তার বদলে ক্রিম
- নিন। শিয়া বাটার খুবই উপকারী ক্রিম অপশন হতে পারে আপনার জন্য।
- এলকোহল যুক্ত টোনার বা ক্লিনজার ব্যবহার করবেন না।
৫) ঠোঁটের যত্নঃ
শীতে ঠোঁট শুকিয়ে ফুটিফাটা হওয়া অন্যতম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠোঁটে মসৃণতা
আনতে তাই পেট্রোলিয়াম জেলি বা লিপবাম ব্যবহার করতে ভুলবেন না। তবে ঘরোয়া
টোটকা হিসেবে ঘি ও লাগিয়ে দেখতে পারেন , ঠোঁট এর কালচে ভাব দূর হবে এবং গোলাপি মখমলে ভাব ফিরে পাবেন।
৬) সানস্ক্রিনঃ
গরমে সানস্ক্রিন ত্বকের গভীর বন্ধু হলেও শীতকালে আমরা একে অবহেলা করে ব্রাত্যই
করে রাখি। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও প্রখরতা শীতকালে বেশ খানিকটা বেড়েই যায়। তাই বাইরে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন লাগিয়ে বেরোন। এটি একদিকে ত্বকের ক্লান্তি
আসতে দেয় না অন্যদিকে টানটান রাখতেও সাহায্য করে।
৭) সিরাম:
ত্বকের সজীবতার সামগ্রিক উন্নতি ঘটাতে ও ঔজ্বল্য ফেরাতে সিরাম এর
প্রয়োজনীয়তা এখন ভীষণ অনুভূত হচ্ছে। এটা আপনি বাড়ি বসেই অতি সহজে বানিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য দরকার ১/২ টেবিলচামচ গ্লিসারিন, ১ টেবিলচামচ ভিটামিন ই তেল, ১/২ টেবিলচামচ অলিভ অয়েল ও খানিকটা গোলাপজল। এগুলো একসাথে মিশিয়ে নিলেই তৈরি অপনার হোমমেড সিরাম। মুখে এটা চক্রাকারে ম্যাসাজ করে ১৫মিনিট পর জল দিয়ে ধুয়ে নেবেন। নিয়মিত ব্যবহারে শুষ্ক ত্বকে কোমলতা ও নমনীয়তা ফিরবেই ফিরবে।
৮) এক্সফোলিয়েশন:
শীতে ত্বক অনুজ্জ্বল হবার প্রধান কারণ তার উপর জমে থাকা মৃতকোষের পাহাড়। সেটা
সামলাতে সপ্তাহে একবার ত্বকের এক্সফোলিয়েশন করা জরুরি। টক দই ও চিনি একসাথে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে স্ক্রাবিং করতে পারেন ত্বকের প্রাণবন্ততা পুনরুদ্ধার করতে।
বেসন,সর বা চালের গুঁড়ো ও নিতে পারেন এক্ষেত্রে।
৯) ফেসপ্যাক:
শীতের রুক্ষ হাওয়া সেই সাথে নিষ্প্রভ ত্বক এই জোড়াফলা থেকে পরিত্রাণ পেতে
ফেসপ্যাক ছাড়া উপায় নেই। এলোভেরার মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এই ক্ষেত্রে খুবই
উপকারী ভূমিকা নেয়। এলোভেরার সাথে মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন ও ত্বকে এপ্লাই
করে গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। এটা স্কিনে হাইড্রেশন তো আনবেই সাথে দূষণ, ধুলোবালি ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষাকবচ হিসেবেও কাজ করবে।
১০) মাস্ক মোকাবিলা:
শীতকালের শুরুতে ত্বক থেকে আর্দ্রতা হারিয়ে যাবার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ত্বকের
এপিডার্মাল লেয়ার থেকে ময়শ্চার গায়েব হওয়া। যদি ঐস্থানে আর্দ্রতা লক করা যায়
তবে ড্রাই স্কিনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এর জন্য ২ টেবিলচামচ
পাকাকলার নির্যাস, ১ টেবিলচামচ দুধ ও ১ টেবিলচামচ মধু একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এই ফেসমাস্ক ইউজ করলে একনে বা ব্ল্যাকহেডস এর বিপত্তি ও ধারেকাছে ঘেঁষে না।
তাহলে দেখলেন তো শীতের আগেই আগাম সতর্কতা ও একটু সচেতন পরিচর্যা করলেই
রুক্ষ ত্বক ও হয়ে উঠতে পারে মোহনীয়।
মন্তব্য করুন