দেবী দুর্গার যেমন দশ হাতে দশটি অস্ত্র আছে, তেমনই স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আসার জন্য ও মর্ত্য থেকে স্বর্গলোকে গমনের জন্য অনেকগুলি যানবাহন ও আছে। এই সকল যানবাহনগুলির উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন শাস্ত্রে। এই বছর দুর্গাপুজোয় কোন যানে মায়ের আগমন হবে আর কোন যানে মায়ের গমন হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত বলতেই আজকের আর্টিকেলটি লেখা।
মা দুর্গার আগমন ও গমন প্রসঙ্গে শাস্ত্রে একটি শ্লোকের উল্লেখ আছে। এই শ্লোকের অর্থ বুঝতে পারলেই পঞ্জিকা ছাড়াই মায়ের আগমন ও গমন এর বিষয়টি বুঝতে পারা যায়।
“রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ।
গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।।”
আমরা সবাই জানি দেবীর আগমন হয় সপ্তমী তিথিতে আর দেবীর গমন হয় দশমী তিথিতে।তাহলে শ্লোক অনুসারে -‘রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া’র অর্থ সপ্তমী যদি রবিবার বা সোমবার হয় তাহলে দেবী দুর্গার আগমনের যান হবে গজ বা হাতি।একইভাবে দশমীও যদি রবি বা সোমবার হয় তাহলে দেবী দুর্গা গজে গমন করবেন কৈলাসে।
“ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ”
এই শ্লোক অনুসারে সপ্তমী ও দশমী যদি শনি অথবা মঙ্গলবার পরে তাহলে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন হবে ঘোটকে।
”গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং”
অর্থাৎ সপ্তমী বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার হলে দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায়, অনুরূপভাবে দশমী ও যদি বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার পরে তাহলে দেবীর গমন হবে দোলায়। দোলা অর্থাৎ পালকি।
”নৌকায়াং বুধবাসরে”
এর অর্থ হলো সপ্তমী ও দশমী যদি বুধবার হয়, তাহলে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন নৌকায় হবে। তাই এই শ্লোকটা যদি আপনি পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন, তাহলে পঞ্জিকা ছাড়াই আপনি বুঝতে পারবেন যে কোন বছর দেবীর আগমন ও গমন কোন যানে হবে।
এবছর কিসে আসছেন মা আর কিসে ফিরছেন?
এই বছর সপ্তমী তিথি পরেছে শুক্রবার। তাই ‘গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং’-এই শ্লোক অনুসারে দেবীর আগমন হবে দোলায় অর্থাৎ পালকি তে। আর দশমী তিথি পরেছে সোমবার। তাই ‘রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া’- এই শ্লোক অনুসারে দেবীর গমন হবে গজে অর্থাৎ হাতিতে।
এইবছর দেবী পালকিতে চেপে আসবেন মর্ত্যে আর হাতির পিঠে চড়ে কৈলাসে যাবেন।
এখন দেবীর আগমন ও গমন এর কিছু ফলাফলও উল্লেখ করা থাকে পঞ্জিকাতে। এই বছরও দেবীর আগমন ও গমন এর ফলাফল বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকায় উল্লেখ করা আছে।
পঞ্জিকাতে দেবীর আগমনের ফল হিসেবে লেখা আছে-‘মড়ক’ অর্থাৎ মহামারী। দেবীর আগমনের সময় পৃথিবীতে মড়ক, মহামারী ইত্যাদি লেগে থাকবে আর এই ফল তো আমরা প্রত্যক্ষ করতেই পারছি। করোনা মহামারীর সঙ্গে আম্ফান এর মতো দুর্যোগ ও উড়িষ্যার বন্যা পরিস্থিতি সব মিলিয়ে দেবীর আগমনের ফলাফল হুবহু মিলে যাচ্ছে।
দেবীর আগমনের ফলাফল খারাপ হলেও দেবীর গমনের ফলাফলটি কিন্তু শুভ বলে উল্লেখ করা আছে। পঞ্জিকাতে দেবীর গমন এর ফলাফল হিসেবে উল্লেখ করা আছে-“শস্যপূর্ণাবসুন্ধরা।”
অর্থাৎ দেবীর গমনের পর এই পৃথিবী শস্য শ্যামলা হয়ে উঠবে। পৃথিবী হয়ে উঠবে সবুজে সবুজ।
মন্তব্য করুন