১৯৯৯ এর কার্গিল যুদ্ধ এক অর্থে ইতিহাস। এই যুদ্ধের আগে কেউই বুঝতে পারেননি যে যুদ্ধটি এত বড় আকার ধারণ করবে। ১৯৯৯ সালে কার্গিলের যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ করা বছর পঁচিশের তরুণী গুঞ্জন সাক্সেনা ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা পাইলট।
কার্গিল যুদ্ধের সময় তিনি কো পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শ্রীবিদ্যা রাজেনকে সঙ্গে নিয়ে চিতা হেলিকপ্টারে করে জওয়ানদের যুদ্ধ সামগ্রী পৌঁছে দিতেন। আবার জখম হওয়া জওয়ানদের সেখান থেকে উদ্ধার ও করতেন।
কে এই গুঞ্জন সাক্সেনা?
গুঞ্জন সাক্সেনা হলেন ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা পাইলট। তিনি জওয়ানদের ওষুধ, খাবার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও সরবরাহ করতেন। মাত্র কুড়ি দিন তিনি এইরকম দশটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন সম্পন্ন করেছিলেন। তার বীরত্বের জন্য ই তাকে বলা হয় ‘দ্য কার্গিল গার্ল’।
১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় এই সকল সামগ্রী তিনি পৌঁছে দিতেন। নবাগত পাইলট এর পক্ষে এ কাজটি একেবারেই সহজ ছিল না কারণ তার জীবনের যথেষ্ট শঙ্কা ছিল। এটি ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। এই কাজটি করতে গিয়েও শত্রুদের গুলিতে বিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা ছিল বহুলাংশে। তবে গুঞ্জন তার দায়িত্ব পালনে দক্ষতা দেখিয়েছেন।
মেয়েদের উড়তে শিখিছেন তিনি!
নিজের কর্ম জীবনে বিচক্ষণতা ও কাজের প্রতি নিষ্ঠার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। সেইসময়ে যখন মহিলাদের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশের অনুমতিটুকু ছিল না যুদ্ধ বিমান চালানোর অনুমতি তো অনেক দূর। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি বহু আহত জওয়ানদের উদ্ধার করেছিলেন। তার বুদ্ধির জোরেই অনেক মানুষের প্রাণ বেঁচে ছিল।
নেটফ্লিক্সে তারই জীবন নিয়ে তৈরি হওয়া মুভি সম্প্রতি লঞ্চ করেছে। তার স্বপ্নের গল্প কঠিন পরিস্থিতিতে তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের গল্প, বাধা পেরিয়ে উঠে দাঁড়ানোর গল্পই সিনেমাতে দেখানো হয়েছে।
গুঞ্জান রেখার ডায়েট কেন ফলো করেছিলেন?
সেই সময়কার সমাজ ব্যবস্থার পাশাপাশি তার ওজন ও তার স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার ওজন কমাতে হত তাকে। দুই সপ্তাহে সাত কিলো ওজন কম করে ছিলেন তিনি। আর এই কাজটি করেছিলেন তিনি ফিল্ম তারকা রেখার ডায়েট চার্ট ফলো করে।
গুঞ্জন সাক্সেনা রেখার সেই ডায়েট চার্ট পেয়েছিলেন একটি পত্রিকায়। তারপর তিনি সেটাকেই মন্ত্রের মতো করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দুই সপ্তাহের মধ্যে ৭ কেজি ওজন কমাতে সক্ষম হন। রেখার সেই গোপন ডায়েট চার্টের কথাই বলবো আজকে যার জন্য ৬৫ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরও আজ ও তার শরীরে এতোটুকু বার্ধক্যের ছাপ পড়ে নি। আজও তার সৌন্দর্য এক রহস্যের মত।
রেখার সেই ডায়েট চার্ট
জলঃ
জল দেহকে হাইড্রেট রাখে। ওজন কমাতেও ত্বককে সুন্দর রাখার জন্য জলের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বাদ চলে যায় শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল গ্রহণ করলে। রেখার ডায়েট চার্টের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল এটি। দিনভর তিনি প্রচুর পরিমাণে জল খেতেন।
রুটিঃ
ভাতের পরিবর্তে রেখা রুটি খেতেন। মাল্টিগ্রেইন ময়দার তৈরি রুটি তিনি খেতেন। আর এই রুটির কারণেই তার ওজন সবসময় হালকা থাকতো।
টক দইঃ
ওজন কমাতেও শরীর সুস্থ রাখতে সহায়ক টক জিনিস। রেখা রুটির সাথে টক দই কে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। টক দই শরীরের ওজন কমাতে ও ফিটনেস বজায় রাখতে ভীষণরকম গুরুত্বপূর্ন।
করলার রসঃ
করলার কথা শুনলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা নাক সিঁটকে থাকি। কিন্তু সৌন্দর্যের গোপন রহস্য আসলে লুকিয়ে আছে এরই মধ্যে। শরীরের ওজন কমাতে ও শরীরকে সুস্থ রাখতে রেখা নিয়মিত করলার রস খেতেন।
অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার বাদঃ
রেখা তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পরিবর্তে সবজির সাল্যাড, শুকনো ফল ইত্যাদি খেতেন।
ঘনঘন খাওয়াঃ
একবারে বেশি পরিমাণে খাওয়ার পরিবর্তে যদি বারবার অল্প পরিমাণে খাওয়া যায় তাহলে সেটা ওজন কমাতে, ও শারীরিকভাবে ফিট রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি টিপস।
ব্যায়ামঃ
শরীরের সৌন্দর্যের গোপন রহস্য হলো ব্যায়াম এ কথা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। রেখাও নিজের সৌন্দর্য চর্চার জন্য নিয়মিত প্রাণায়াম, ধ্যান ও ব্যায়াম করতেন। নিয়মিত যোগ অনুশীলন করলে, অথবা হালকা ওজনের ব্যায়াম করলে, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে হাঁটা,জগিং স্কিপিং, যোগব্যায়াম এগুলির গুরুত্ব তাই অপরিসীম। এছাড়া তিনি নৃত্য অনুশীলন ও করতেন।
পর্যাপ্ত ঘুমঃ
খাওয়া-দাওয়া, ডায়েট চার্ট, প্রচুর পরিমাণে জল পান, হালকা ব্যায়াম করা এই সকল গুলোর পাশাপাশি সৌন্দর্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিশ্রাম। উপরিউক্ত সমস্ত কাজ গুলোই ঠিকমতো করার পরেও কেউ যদি দিনে নির্দিষ্ট সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ এ না ঘুমোন,তবে সেটা শরীরের পক্ষে ভীষণভাবে ক্ষতিকর। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। এর থেকে কম পরিমাণ ঘুম হলে খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হজম হয় না। যার ক্ষতিকারক প্রভাব আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের ওপর ই পড়ে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমেরও প্রয়োজন আছে।
মন্তব্য করুন