মূলত শীতের সবজি হলেও টম্যাটো কিন্তু এখন বারো মাসই লাগে। গ্রেভির সুন্দর রঙ আনা থেকে শুরু করে স্যালাড, এমনকি রূপচর্চা, টম্যাটো খুবই দরকারি। কিন্তু বাজারে এখন টম্যাটো কিনতে গেলে তো হাতে ছ্যাকা লাগছে। তাই আপনি ভাবছেন বাড়িতেই যদি টম্যাটো চাষ করা যেত! আর আপনার ভাবনাকে বাস্তবের রূপ দিতেই আজ আমরা হাজির বাড়িতে টম্যাটো চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি নিয়ে।
প্রথমে মাটি তৈরি
টম্যাটো চাষের জন্য বিশেষ আলাদা কিছু মাটি লাগবে তা কিন্তু নয়। আপনার বাগানের যে মাটি সেই মাটিই নিন। এর সঙ্গে শুধু মিশিয়ে নিন অল্প ভার্মিকম্পোজ বা কেঁচো সার। কেঁচো সার মাটির উর্বরতা বাড়ায়। যে কোনও ভালো নার্সারিতে এই সব কিছু পেয়ে যাবেন। এবার বাগানের মাটি, তার এক তৃতীয়াংশ ভার্মিকম্পোজ, আর তার সঙ্গে সামান্য পরিমাণে সার মিশিয়ে আপনার টম্যাটো চাষের মাটি তৈরি করে নিন।
এবার বীজ তৈরি
আপনি চাইলে নার্সারি থেকে ছোট টম্যাটোর চারা কিনে আনতেই পারেন। কিন্তু ঘরেই যখন বীজ তৈরি করা যাচ্ছে তখন কেনার কি দরকার! ভালো বীজের জন্য দরকার লাল লাল ভালো পাকা টম্যাটো। বাড়ির জন্য কেনা একটা টম্যাটো নিয়ে গোল গোল করে তিন টুকরো করে নিন। একটা এমনি ছোট পাত্রে ওই তৈরি করা মাটি দিয়ে তার মধ্যে ওই টুকরোগুলো একটু ফাঁকা জায়গা করে করে রেখে দিন। মাঝে মাঝে অবশ্যই জল দেবেন মাটি শুকনো মনে হলে। কয়েক দিন পর দেখবেন সুন্দর চারা এসেছে।
মূল চাষ এবার
আজ আপনাদের টবে বা বাগানে টম্যাটো চাষ নিয়ে কিছু বলব না। বরং বলব বোতলে কীভাবে ঝোলানো অবস্থায় আপনারা টম্যাটো চাষ করতে পারেন। ফ্ল্যাটে যারা থাকেন তাঁরা কিন্তু এতে বেশ উপকার পাবেন। আর এটি কিন্তু বেশ জনপ্রিয়। একে শর্ট স্পেস ফার্মিং বা ভার্টিকাল ফার্মিংও বলা হয়।
স্টেপ ১
একটা ৫ লিটারের বোতল নিন। এই বোতলের পিছন দিকটা খানিক কেটে দিন। যেন একটা ফাঁকা হাঁ মুখের মতো হয়ে যায়। এবার সাইড দিয়ে ফুটো করে নিন ঝুলিয়ে নেওয়ার জন্য। একটা দড়ি নিয়ে ওই ফুটোর মধ্যে দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে নিন।
স্টেপ ২
টম্যাটোর চারাটা নিয়ে, একটা ছোট জিনসের টুকরোর মাঝখান থেকে ঢুকিয়ে বোতলের পিছন থেকে এনে সামনে দিয়ে বের করে দিন। জিনসের টুকরো দেওয়া হল চারাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য।
স্টেপ ৩
এবার ওই তৈরি করা মাটি ভরে দিন। মাটি ভরার আগে ওই জিনসের ফুটো ঘিরে অল্প স্টোনচিপ দিন। এর ওপর অল্প বালি দিন। তার ওপর মাটি দিন। এভাবে গাছ বসালে মাটি ধুয়ে বেরিয়ে যায় না আর জল ভালো ভাবে বেরিয়েও যায়। এটা গাছের জন্য বেস্ট ড্রেনেজ সিস্টেম। এবার মাটি দেওয়া হলে খানিক জল দিন আর হাল্কা ছায়া থাকে এমন জায়গায় ঝুলিয়ে রেখে দিন। ভয় পাবেন না, গাছ পড়ে যাবে না উলটে রাখার জন্য।
কখন চাষ করবেন?
শীতে আমরা টম্যাটো পাই। তাই তার তিন মাস আগে মানে সেপ্টেম্বর নাগাদ চাষ শুরু করতে পারেন। কারণ ভালো লাল লাল টম্যাটো হতে আড়াই থেকে তিন মাস সময় লাগবেই। কিন্তু গরমেও আপনি টম্যাটো চাষ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে টম্যাটো যেখানে রাখছেন সেখানে যেন কড়া রোদ না আসে। শেড করে দিতে পারেন, খুব ভালো হবে।
পরিচর্যা
যে কোনও গাছ ভালো রাখার জন্য তিনটে জিনিস মাথায় রাখা খুব দরকার; সার, পোকা আসছে কিনা, আর অবশ্যই জল। আমরা আগে জল দিয়ে শুরু করি।
গাছে নিয়মিত জল দেওয়া দরকার তো সবাই বলেন। কিন্তু জল কী দিনে দু’বার করে দিতেই হবে? উত্তর হল, না। আসলে নিয়ম হল, গাছের মাটি শুকনো হলেই জল দিতে হবে। আমাদের গরমের দেশে তাড়াতাড়ি জল শুকিয়ে যায়। তাই আমরা দিনে দু’বার জল দিতে অভ্যস্থ। কিন্তু জল দেওয়ার সময়ে দেখে নেবেন মাটি ভিজে আছে না শুকনো আছে। যদি সকালে জল দেওয়ার পর দেখেন বিকেলেও মাটি ভিজে আছে, তাহলেই জল দেবেন, নয়তো নয়। বর্ষাকালেও যদি দেখেন মাটি শুকিয়ে গেছে জল দিন অল্প।
এবার সারের প্রসঙ্গ। নিয়ম হল, প্রতি মাসে একবার করে সার দিতে হবে। সার দেওয়ার নিয়ম আছে। ভিজে মাটিতে সার দেওয়া যায় না। সার দিতে হবে শুকনো মাটিতে। গাছের চারদিক থেকে সার ছড়িয়ে দিন। তারপর অল্প জল দিয়ে দিন। খোঁচাখুঁচি করার দরকার নেই। মাটিতে সার নিজেই মিশে যাবে। আর বাড়ির রোজকার সবজির খোসা, না ব্যবহার করা অংশ একটু শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিয়ে সেটাও সার হিসেবে দেওয়া যায়। আর সার কিন্তু অল্প পরিমাণেই ব্যবহার করতে হবে।
পোকা থেকে গাছকে বাঁচানো খুব দরকার। না হলে ভালো ফল আপনি পাবেন না। পোকার জন্য নার্সারি থেকে রোগোট প্লাস নিয়ে আসুন। এটা একটা লিকুইড মতো। ৩০ এম.এল এক লিটার জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে গাছে। এটা পনেরো দিন ছাড়া ছাড়া দিতে হবে। এই লিকুইড কিন্তু গাছ বড় হতেও সাহায্য করে।
এবার আর কীসের অপেক্ষা! কাল-পরশুর মধ্যেই লাগিয়ে ফেলুন চারা। এই শীতে আপনার বাড়িতে টম্যাটো ফলিয়ে আপনার মুখে হাসি ফোটানোর আর পকেট বাঁচানোর দায়িত্ব আমরা নিলাম।
ভবানীশঙ্কর দণ্ডপাট
আপনার এই টিপসগুলো ভীষণ উপকারি। দয়াকরে ক্যাপসিকাম কি ভাবে টবে চাষ করা যায় জানালে আনন্দ পাব। কি ভাবে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি দয়াকরে জানাবেন
anurup manna
খুব
Joychakraborty
very good procedure.
প্রশান্ত সিংহ রায়
আমি ছাদে পেয়ারা লাগিয়েছি খুব বর সাইজের পেয়ারা হয়েছে
প্রশান্ত সিংহ রায়
খুব ভালো লাগল এই রকম পোষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।