নিজেদের সাজে ও বাহারে কেতাদুরস্ত করায় তীক্ষ্ণ নজর থাকে মেয়েদের।কিন্তু ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এ তাদের আধিপত্য একচেটিয়া নয় মোটেই। পুরুষরা নিজেদের ‘পুরুষালী’ ভাবমূর্তি রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের পরিচর্যা এমনকি পরিচ্ছন্নতা নিয়েও থাকেন উদাসীন ও অগোছালো।
তিরিশ এর কোঠা পেরোনো হোক বা চল্লিশোর্ধ আপনার স্বামীর মাচো লুক ফিরে আসবে আমাদের বলে দেয়া এই গ্রূমিং টিপস ফলো করলে যাতে তিনিও আত্মবিশ্বাসী হয়ে সমাজের স্পটলাইটে পা রাখেন।
১) চুলের যত্ন:
- চুল নিয়ে কেয়ারলেস ভাবভঙ্গি ছেলেদের জন্মগত। অথচ এন্ড্রোজেন হরমোনের কারণে তিরিশ পর থেকেই ছেলেদের হেয়ার ফলিকলের সংবেদনশীলতা কমে গিয়ে চুল উঠতে শুরু করে।
- সামান্য লাইফস্টাইলগত যত্ন নিলেই তাদের চেহারার সামগ্রিক খোলনলচে পাল্টে যেতে পারে।
- যখন কর্তাবাবু পাড়ার সেলুন বা ফ্যান্সি পার্লার যেখানেই যাবেন তার রেগুলার হেয়ারস্টাইল এ পরিবর্তন আনার জন্য নিম্নলিখিত যেকোনো একটি কাটিং ট্রাই করতে বলুন – ফরওয়ার্ড হেয়ারকাটিং, আপসাইড ফিনিশিং,প্যারালাল হেয়ারকাটিং। মুখ ও চেহারার সাথে মানানসইভাবে এবং চুলের ভলিউম এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে চুল কাটলে অনেকটাই স্মার্ট লাগে দেখতে।
- এর সাথে ন্যূনতম যত্ন হিসেবে সপ্তাহে দুবার শ্যাম্পু ও তারপর কন্ডিশনার এর ব্যবহার। চুল খুব ড্রাই হলে সিরাম বা স্পা করতে পারেন। মাথায় পাকা চুল বেশি থাকলে ন্যাচারাল শেডস কিন্তু দারুন লাগবে কাঁচা পাকার কম্বিনেশন এ।
২) স্কিন কেয়ার রুটিন:
- মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ত্বক একটু বেশি রুক্ষ হয়ে থাকে তাই যত্নের বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু এই ব্যাপারে ছেলেরা বড্ড বেশি অবহেলা করে থাকেন।
- স্বামীদের কাজ ও দৌড়ঝাঁপ এর বেশিরভাগটাই বাইরে হয়ে থাকে। তাই ধুলোবালি ও ময়লা জমার আদর্শ স্থান হয় তাদের মুখ। বাড়ি ফিরলেই মুখ ধোয়া মাস্ট লিস্ট এ রাখুন। বেরোনোর আগে দিন সানস্ক্রিন অতিবেগুনি রশ্মি ছেলেদের ত্বকেও সমানভাবে ক্ষতি করে।
- বাইক চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার অবশ্য করতে বলুন। ঘাম মোছার জন্য থাকুক ওয়েট টিস্যু বা ওয়াইপার।
- আপনার কসমেটিক্স এর বাক্সে ওঁকে হাত দিতে দেবেন না মোটেই। মেনস স্পেশাল প্রোডাক্ট ইউজ করতে বলুন যেগুলো পুরুষদের ট্যান ও ব্ল্যাকহেডস ও ব্রণ নির্মূল করতে বেশি কার্যকর।
- দূষণে ছেলেদের ত্বক বেশি সংবেদনশীল তাই ত্বকের ধরন বুঝে নিয়ে একটা ফেসওয়াশ নিয়মিত ব্যবহার করা নিয়ম এ পরিণত করুন। ক্লিংজিং ও টোনিং ও করাতে পারেন মাঝে মাঝে। চোখের নিচে ফোলাভাব কমাতে ও ত্বকের উজ্জীবনে থাকুক মাসে একবার ফেসিয়াল।
- রাতে ঘুমোতে যাবার আগে যদি নাইটক্রিম ব্যবহারে থাকে এলার্জি তবে বলুন একটা আইসকিউব মুখে ঘষে নিতে এতে রক্তচলাচল ভালো হয়।
- লেবুর অর্ধেক কেটে নিয়ে সেটা চিনিতে ঘষে তারপর মুখে এপ্লাই করতে বলুন। সাইট্রিক এসিড সমৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক স্ক্রাব অতিরিক্ত তেল ও পিগমেন্টেশন হতে দেবেনা।
৩) টপনচ ড্রেসকোড:
- গ্রূমিং হলো আদতে আপনি নিজেকে কিভাবে সবার সামনে ক্যারি করছেন তারই পরিভাষা। কাজেই বেশভূষার একটা বড় মাহাত্ম থাকে নিজের ফ্যাশন ও ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণে।
- সবসময় ফর্মাল শার্ট-প্যান্ট বা কোট এর পরিবর্তে ইন্ডো-ওয়েস্টার্ন ফিউশন পরিধান করার টিপস দিতে পারেন। পার্টিতে বা গেট টুগেদার এ নিজেকে মেলে ধরতে কুর্তার সাথে ক্যাজুয়াল জ্যাকেট এর পরামর্শ দিন। বাজারে গেলে এবার থেকে ট্রাই করান টর্নড জিন্স ও টারটার নেক টিশার্ট।
- ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবী বা শেরওয়ানির সাথে স্পোর্টস শু বা স্নিকার্স পরার ভুল এবার থেকে করতে দেবেন না। কোলহাপুরী বা কিটো চলতে পারে।
- ঘড়ির ক্ষেত্রে মেটাল স্ট্র্যাপ ছেড়ে লেদার এর বেল্ট ইউজ করতে দিন ট্রেন্ডি লাগে। কমফোর্ট ও কালার এর ম্যাচিংই কিন্তু আত্মবিশ্বাস অর্জনের পথ প্রশস্ত করে দেয় মনে রাখবেন। নিজের পছন্দের স্টারকে কপি করতে পারেন তবে নিজের নিজস্বতা বজায় রেখে।
৪) দাড়ির যত্ন:
- এখন নয়া ফ্যাশন ছেলেদের একমুখ দাড়ি রাখা। তবে রাখলেই তো হলোনা তার দেখাশোনা ও স্টাইল মেন্টেন করাও সমানভাবে জরুরি।
- বিয়ার্ড এর কাটের মধ্যে ভ্যান, ডাইক, রয়্যাল ও সার্কেল ইত্যাদি কাট খুব জনপ্রিয় ও দেখতেও খুব সুন্দর লাগে। দাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার না করলে মৃতকোষ জমা হয়ে গিয়ে দাড়ি নোংরা হয়ে যায়। জন্ম নেয় রাশ ও চুলকানি। দাড়ি নরম ও শাইনি রাখতে ভার্জিন তেল ব্যবহার করুন ও রেগুলার ট্রিমিং ও দরকার।
- যারা শেভ করেন তারা চেষ্টা করুন গরমজল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে দাড়ি কামানোর। এতে দাড়ির ও ত্বকের নমনীয়তা অক্ষুন্ন থাকে। তবে শেভিং এ ক্রিম এড়িয়ে জেল বা ফোম ইউজ করতে পারেন। ত্বকে জ্বালা পোড়া কমাতে এলকোহলযুক্ত আফটার শেভ লাগাবেন না।
৫) ওয়াক্সিং, ম্যানিকিউর ও প্যাডিকিউর:
- সাঁলয় যাওয়া সবসময় ব্যস্ততার জন্য সম্ভব না হলেও বাড়িতেই ওয়াক্সিং স্ট্রিপ বা কিট দিয়ে করে নেয়া যেতে পারে। রেজর দিয়ে করবেন না মোটেই। যারা রোমশ বুক পছন্দ করেন তারা অল্প করে ট্রিম করে নিতে পারেন। স্ট্রিপ তোলার সময় হেয়ার গ্রোথ দিকেই প্লাক করবেন। তোলার পর ত্বকের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য এলোভেরা জেল বা ময়েশ্চারাইজার দিতে ভুলবেন না।
- সামান্য উষ্ণ গরমজলে নুন, লেবুর রস ও কয়েকফোঁটা বডি ওয়াশ দিয়ে হাত ও পা ভিজিয়ে রাখুন ১০-২০মিনিট মতো। ত্বক আর্দ্র হলে নখ কাটতে পারেন ও ব্রাশ দিয়ে গোড়ালি ক্লিন করে নিতে পারেন। ব্যাস হোম স্টাইল ম্যানিকিউর মেকওভার কমপ্লিট।
৬) ফিটনেস ফ্রিক:
- কিন্তু গ্রূমিং এর ষোলআনা-ই বৃথা যদিনা নিজের হাইজিন ও ফিটনেস এর দিকে নজর দেয়া ও আবশ্যিক। সিক্স প্যাক না হোক তবু নিয়মিত শরীরচর্চার দিকে কেয়ারফুল হতে বলুন। ধূমপান বর্জন করে জিম বা যোগা ক্যালরীক্ষয় ও ঘামঝরানো বাঞ্ছনীয়।
- টোনড বডি পেতে এক্সারসাইজ এর সাথে স্বাস্থ্যকর ডায়েট মিশেলে নিজেকে ফিট রাখুন ও স্বামীকেও সাহায্য করুন।
মন্তব্য করুন