ঋতু পরিবর্তনের খামখেয়ালিপনা, হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, জ্বর এবং অনিয়মিত জীবনযাপনের দরুন খিদেতে অনীহা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মানসিক চাপ, অবসাদ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও খাবারে অরুচি শরীর খারাপ এর প্রাথমিক লক্ষণ বলা চলে।
ডাক্তারি ভাষায় একে এনোরেক্সিয়া বলে। বমিভাব, বুকজ্বালা, মাথাধরা ইত্যাদি উপসর্গের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই ক্ষুধামান্দ্য দূর করে প্রাকৃতিক উপায়ে খিদে বাড়াবার কৌশল বলে দিচ্ছি আপনাদের।
মৌরি:
- মৌরি যদিও মুখশুদ্ধি হিসেবে খাবার চল রয়েছে কিন্তু মৌরি পিত্তরস নিঃসরণের প্রধান অনুঘটক রূপে কাজ করে থাকে। যার জন্য হজম প্রক্রিয়া সচল হয়ে ওঠে।
- ২-৩ কাপ জলে ১ টেবিলচামচ মৌরি ও ১/২ টেবিলচামচ মেথি একসাথে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পান করলে অভূতপূর্ব ফল পাবেন।
আদা:
“বিয়ানে খায় আদা নুন, পেটের আগুন বাড়ে দ্বিগুন” খনার এই বচন কিন্তু বাস্তবেই ফলদায়ী। আদর তেল হজমে সহায়ক এবং খিদের আগুন জ্বালিয়ে দেবে আপনার পেটে। গরম জলে আদা ও নুন যোগ করে খেতে পারেন অব্যর্থ উপকার নিশ্চিত।
খাবারে একঘেয়েমি দূর করুন:
- শাস্ত্রে বলা আছে আমরা শুধু জিভ দিয়েই খাদ্যগ্রহণ করি না, চোখ এর কাছেও খাদ্যের গ্রহণযোগ্যতা আবেদনময় হয়ে ওঠে। রোজকার একঘেয়ে খাবারের রুটিনে পরিবর্তন আনুন।
- খাদ্যের গন্ধ, রঙ ও চেহারার উপর বিশেষ খেয়াল রাখুন। স্যালাড, ড্রেসিং, টপিং, গার্নিশিং এ রংবেরং এর দ্রব্য যোগ করে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। ক্যাপসিকাম, লেটুস, ড্রাই ফ্রুটস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। পরিবেশনে আকর্ষণীয়তা বাড়াতে নানা স্টাইল এর প্লেট ও কাটলেরি আইটেম ইউজ করে দৃষ্টিনন্দন করে তুলুন।
বাছাই সব্জি:
- খিদে বাড়াতে অনেকেই ভিটামিন টনিক খেতে বলেন। আমরা কিন্তু সরাসরি উৎস থেকে গ্রহণ করার পরামর্শই দেব কারণ তাতে ফল বেশি কার্যকর হয়।
- ফলিক এসিড এর সুনাম রয়েছে খিদে তৈরির চাহিদা তৈরি করার ক্ষেত্রে। এটি এপিটাইট সেন্টারকে উদ্দীপিত করে রাখে। তাই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন – ব্রকলি, টমেটো, বাঁধাকপি, বিট, ধনেপাতা ইত্যাদি খেতে পারেন। কমলা ও আপেলের রসেও এটি পাবেন।
মশলা কম্বিনেশন:
- খাবারের স্বাদ আনতে ও রুচি ফিরিয়ে আনতে হজমে সাহায্যকারী মশলা রান্নায় দিতে পারেন – গোলমরিচ, এলাচ, রসুন, ভিনেগার, আচার ইত্যাদি।
খাবার আগে কি করবেন?
খাদ্যে রুচি ফেরাতে আমরা কয়েকটা টোটকা বলছি সেগুলোর একটা বা একাধিক বাড়িতে ট্রাই করে দেখুন। খাবার গ্রহণের অন্তত একঘন্টা আগে এগুলো সেবন করবেন।
- পুদিনা পাতা সেদ্ধ করে মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- ব্ল্যাক সল্ট খালি মুখে চেটে খেতে পারেন।
- আমলকী চূর্ণ জলে গুলে খাবেন।
- তেঁতুলের রস ও চিনি একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
খাবার আগে কি করবেন না?
খাবার গ্রহণের আগে বিশেষ করে ভারী মিল অর্থাৎলাঞ্চ বা ডিনার এর আগে জল, কফি, জুস, এলকোহল, ফাস্টফুড বা ভাজাভুজি জাতীয় এপিটাইজার ভুলেও খাবেন না। এগুলো খিদের ইচ্ছে মেরে ফেলে ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি রাখে।
আদর্শ জীবনশৈলী:
সঠিক সময়ে খিদে তৈরি করতে গেলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা জরুরি। তাই নিজের জীবনে অনুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ আনুন। প্রতিদিন সময়ে ঘুমানো, সকালে জলদি ওঠা, খাবার পর বিশ্রাম নেয়া, স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম ও কিছু দৈহিক পরিশ্রম করলে ক্যালোরি সঠিক পদ্ধতিতে বার্ন হয় এবং বিপকক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং খিদে বাড়ে।
মন্তব্য করুন