আমার এক বন্ধু বলছিল তার বাবা নাকি একটা জুতো ফেলতেই চাইছেন না। সেই জুতো তিনি আর পরেন না। কিন্তু তিনি সেটি ফেলবেন না কারণ সেটা নাকি শিলিগুড়ির হংকং মার্কেট থেকে কেনা। সেই মার্কেটে গিয়ে শপিং করা নাকি এক আলাদাই অভিজ্ঞতা।
তা এই শুনে আমি খানিক সার্চ করলাম হংকং মার্কেট নিয়ে। তাতে যা দেখলাম তা দেখে ওপরের এই কথাটাই মাথায় এলো- কেনাকাটার স্বর্গরাজ্য। তাই ভাবলাম আমার লেখার মাধ্যমে আপনাদের ঘুরিয়ে আনি হংকং মার্কেটে, চলুন।
কোথায় এই হংকং মার্কেট?
শিলিগুড়ি শহরের একদম কেন্দ্রস্থলেই এই মার্কেট। যদি আপনি একদম ঠিক ঠিকানা চান তাহলে বলতে হয়, ৬ সত্যজিৎ রায় কলোনি রোড, শিলিগুড়ি। একদম হিলকার্ট রোডের সামনেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, শিলিগুড়ি গেলে আপনাকে ঠিকানা, গুগুল ম্যাপ এইসব কিছুর ধার ধারতে হবে না। পাঁচ পাঁচটা গেট খুলে রেখে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে হংকং মার্কেট।
শিলিগুড়িতে মানুষের সময় কাটানোর অন্যতম উদ্দেশ্যই থাকে হংকং মার্কেটে ঘোরা। অনেকে আবার ব্রেক নিয়ে নিয়ে এ বেলা ও বেলা করে করে ঘুরে বেড়ান। সঙ্গে রয়েছে খানাপিনার অজস্র জায়গা। এমন একটি জায়গাই কিন্তু আপনাদের শপিং করার প্যারাডাইস হয়ে উঠতে পারে।
কেন বিখ্যাত হংকং মার্কেট?
হংকং মার্কেট মূলত বিখ্যাত কম দামে জিনিস পাওয়ার জন্য। মূলত চিনের জিনিস কম দামে এখানে পাওয়া যায়। এছাড়া আসাম, নেপাল, ভুটান এই সব জায়গার জিনিসও কিন্তু এই মার্কেটে অনায়াসে পাওয়া যেতে পারে।
এতেই কিন্তু শেষ নয়। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এই সব দেশের জিনিসও এখানে কম দামে পেয়ে যাবেন। নিন্দুকেরা বলেন এটি নাকি চোর বাজার, মানে চোরাই মার্কেটের বাজার। তাই ওই কম দামে সব পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি যদি ফ্যান্সি বিদেশী জিনিস কম দামে কিনতে পারেন, তাহলে নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে চলে যান হংকং মার্কেটে।
কী কী পাওয়া যায়?
বলুন কি পাওয়া যায় না। তুলনা করাটা ঠিক হবে কিনা জানি না। কিন্তু আমাদের কলকাতায় যেমন নিউ মার্কেট, তেমনই ওখানে হংকং মার্কেট। তবে হংকং মার্কেট আরও অনেক ব্যাপক চাহিদার জায়গা।
ইলেকট্রিকাল থেকে ইলেকট্রনিক্স, জামা থেকে জুতো, হরেক রকমের লাইট, ফোনের কভার, ফোনের চার্জার, ব্যাটারি, পারফিউম, নেলপলিস, সাজার জিনিস, চকোলেট, মিষ্টি, ছাতা, ব্যাগ, টুপি, গরমের আলাদা ড্রেস, শীতের আলাদা ড্রেস, মজার খেলনা, চুরি, লেটেস্ট ট্রেন্ডি গয়না, ঘর সাজাবার জিনিস, উফফ! বলে তালিকা শেষ করা যাবে না।
আচ্ছা দাম কেমন?
ওপরের এই তালিকা শুনেই যদি আপনি আনন্দে নাচতে থাকেন তাহলে বলি, কাহানি আভি বাকি হ্যাঁ ম্যারে দোস্ত। দামগুলো শুনলে আপনার মুখের হাসি আরও চওড়া হয়ে যাবে। ধরুন আমি যদি বলি গড়িয়াহাটে যে কানের দুলের দাম অন্তত ১২০, সেটা এখানে পাবেন ৫০ টাকায়।
বা ধরুন, একটা জামা বা টি শার্ট যেটার অন্তত কলকাতার ফুটপাথে দাম ৪৫০ এর কম নয়, সেটা ওখানে পাবেন ১৫০ টাকায়? বুঝতে পারছেন কিছু দামের ফারাক? হ্যাঁ এরকমই সস্তা সব জিনিস।
২০-৩০ টাকা থেকে জিনিসের দাম শুরু হয় এখানে। ইলেক্ট্রিকাল জিনিসের দামও শুরু হয় ৬০-৭০ টাকা থেকে। এছাড়া ৫০০ টাকায় মোটামুটি চলনসই ফোন, ৩০০ টাকায় দামী মডেলের সুন্দর রিস্ট ওয়াচ, ১০০ টাকায় জুতো এইসব তো টিপ অফ দ্য আইসবার্গ মাত্র।
কীভাবে শপিং করবেন
দেখুন স্বর্গের নিয়ম আছে আর আপনাকে সেটা মানতে হবে। প্রথমেই যেটা বলার সেটা হল এখান থেকে কেনা জিনিসের গ্যারান্টি নিয়ে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন না। বুঝতেই পারছেন, এতো কম দামের জিনিস, তার ওপর প্রায় বেশির ভাগই চিনা জিনিস। তাই খুব বেশিদিন চলবে তা নাও হতে পারে। তবে ১২০ টাকা দিয়ে টি-শার্ট কিনে এক বছর বা দু বছর ব্যবহার করতে পারলে খারাপ কি! ঠিক করে ব্যবহার করলে দেড় বছর আরাম করে চলে যাবে।
দ্বিতীয় কথা হল, আপনাকে ভালো করে দাম করতে জানতে হবে। অনেক সময়ে এখানকার লোকেরা দাম তিনগুণ বা দুই গুণ করে বলে। প্রথম বারেই কিন্তু ঢুকে একটা দোকান থেকে কিনে নেবেন না। পরপর অনেক দোকান রয়েছে একই জিনিসের। দোকান পালটে পালটে দাম করতে করতে যান। আপনাকে পিছন থেকে দোকানদার অবশ্যই ডাকবে।
আর তিন নম্বর আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, কোনও ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস কিনলে ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানির ট্যাগ দেখে নেবেন। যদিও ট্যাগ অদলবদল করা যায়, তাও আপনার নিজের সাবধানতা নিজের কাছে।
করোনার জন্য অনেকদিন ঘুরতে জাননি জানি। কিন্তু এই যে মানস ভ্রমণ করালাম সেটাও কিছু কম তো নয় বলুন! সব ঠিক হলে একবার ঘুরে আসুন। তবে হ্যাঁ, কি কি কিনবেন প্ল্যান করে যাবেন না। সেই প্ল্যান বদলে যেতে বাধ্য।
মন্তব্য করুন