ফ্যাশনেবল পোশাকের সঙ্গে চাই কালারফুল হেয়ার, এখন এটাই ট্রেন্ড। রাস্তায় বেরোলেই আমরা দেখি নীল, লাল, গোলাপি কত রকমের রঙ করেন মানুষ চুলে। এছাড়া চিরাচরিত বার্গান্ডি বা হাল্কা লাল রঙ করা তো আছেই। কিন্তু এই রঙ করা চুলের যত্ন নেবেন কীভাবে? আজকের দাশবাসের আর্টিকেল সেই বিষয়েই রইল।
১. রঙ করার আগের প্রস্তুতি
আজ ভাবলেন রঙ করব আর কাল করে নিলেন এভাবে চললে চুলের ক্ষতি হবেই। রঙ করবেন ভাবার অন্তত দু’মাস পর চুলে রঙ করুন। এই দু’মাসে চলুক রঙ করার আগের খানিক যত্ন। চুলে ভালো করে তেল দিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে। এতে চুল নারিশড হবে।
সপ্তাহে একবার করে হেয়ার মাস্ক বা হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। এই দু’মাসে চুলে কোনওরকম হিট দেবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি রঙ করার আগের দিন চুলে কোল্ড প্রেসড নারকেল তেল লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে চুলে রঙ করাও হয়, আবার চুলের সরাসরি সংস্পর্শে কালার আসে না।
২. উপযুক্ত ডাই বেছে নিন
চুলের ডাই হিসেবে বাজারে অনেক কিছুই বিক্রি হয়। কিন্তু আপনাকে বেছে নিতে হবে সেই হেয়ার ডাই যা আপনার চুলের কোনও ক্ষতি করবে না। কেনার আগে দেখে নেবেন তাতে যেন অবশ্যই অ্যামোনিয়া না থাকে।
রঙ করার সময়ে উপযুক্ত ‘ডেভেলপার’ ব্যবহার করুন। ডেভেলপার হল এক ধরনের ক্রিম জাতীয় জিনিস যাতে থাকে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। এটি চুলে রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। আপনাকে অবশ্যই ২০ বা ৩০ ভলিউম ডেভেলপার ব্যবহার করতে হবে। এতে চুলের ক্ষতি কম হবে।
৩. শ্যাম্পু সঙ্গে সঙ্গে নয়
রঙ করা হয়ে যাওয়ার পর খানিক পরেই শ্যাম্পু করে নেবেন না। অন্তত দু’দিন অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করুন। এতে রঙ খুব ভালো করে বসে যাবে, তাড়াতাড়ি উঠে যাবে না। তাই ঘন ঘন রঙ করতেও হবে না।
আর দু’দিন শ্যাম্পু না করলে যে সাধারণ তেল স্ক্যাল্পে তৈরি হবে তা চুলকে স্বাভাবিক সুরক্ষা দেবে। রঙের জন্য চুল শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে যাওয়ার সমস্যা কমবে।
৪. শ্যাম্পুও বেছে কিনতে হবে
চুলের রঙের ক্ষেত্রে যেমন বাছাই দরকার, তেমনই শ্যাম্পুর জন্যও। কালার করা চুলে যে কোনও শ্যাম্পু করা যায় না।তার জন্য কালার প্রোটেক্টিভ শ্যাম্পু আছে। কালার প্রোটেক্টিভ শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার চুলে সুরক্ষা বলয় তৈরি করে।
শ্যাম্পুর ক্ষেত্রে সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করাই ভালো। সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু চুলের ন্যাচারাল তেল উৎপাদনে কোনও সমস্যার সৃষ্টি করে না। এতে চুল ভালো থাকে।
৫. ঘন ঘন চুল পরিষ্কার নয়
একটা কথা মনে রাখা খুব দরকার। কালার করা চুল ভালো রাখার জন্য চুলের স্বাভাবিক তেল উৎপাদন বজায় রাখতে হবে। আর তার জন্য ঘন ঘন শ্যাম্পু করা বন্ধ করতে হবে। যদি আপনি সপ্তাহে চার দিন শ্যাম্পু করে থাকেন, এবার থেকে সেটা দু’দিন করুন। এতে রঙ অনেক দিন বজায় থাকবে।
আর চুলের স্বাভাবিক তেল উৎপাদনও ঠিক থাকবে। এতে স্ক্যাল্পের পিএইচ ব্যাল্যান্স বজায় থাকবে। ভালো চুলের জন্য এটি কিন্তু খুব দরকার। আপনি কিন্তু অনায়াসেই ড্রাই শ্যাম্পুও ব্যবহার করতে পারেন।
৬. ঠাণ্ডা জল ব্যবহার করুন
গরম জলে চুল ধুলে চুলের কিউটিকল দুর্বল হয়ে যায়।এতে রঙ ধুতে শুরু করে। শুধু তাই নয়। এতে চুল ময়েশ্চার হারিয়ে ফেলে। তাই চুল হয়ে যায় শুষ্ক আর রুক্ষ। তাই সব সময়ে ঠাণ্ডা জলে চুল পরিষ্কার করুন। এতে কিউটিকল মজবুত থাকবে। তাই রঙ থাকবে অনেক দিন।
যদি আপনি মাথায় ঠাণ্ডা জল ব্যবহার করতে না পারেন তাহলে অল্প উষ্ণ জল মাথায় দিয়ে অন্তত একবার ঠাণ্ডা জল দিন মাথায়।
৭. একটি ঘরোয়া কন্ডিশনার
তেল, শ্যাম্পু এইসবের পাশাপাশি কন্ডিশনার নিয়মিত ব্যবহার করা কিন্তু উচিত। এই কন্ডিশনার বলতে আমি শ্যাম্পু করার পর করার কন্ডিশনার বলছি না। এমন একটি জিনিস যা আপনার চুলের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখবে। এটি এক ধরণের হেয়ার মাস্ক আপনি বলতে পারেন। এটি আপনি ঘরেই করতে পারেন।
উপকরণঃ
- ১টা পাকা কলা
- এক টেবিল চামচ অলিভ তেল
- চামচ দই এক চামচ
- এক চামচ মধু
পদ্ধতি
একটি বাটিতে কলা নিয়ে সেটি ভালো করে চটকে নিন। এর মধ্যে অলিভ তেল দিন আর একটি স্মুথ পেস্ট তৈরি করুন। এবার দই আর মধু দিয়ে আরও ভালো করে মিশিয়ে নিন।
এই মিশ্রণ চুলে ভালো করে মাখিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এটি সপ্তাহে একবার করে করুন।
এভাবে যদি আপনি কালার করা চুলের যত্ন নেন, তাহলে কিন্তু চুলের রঙও বজায় থাকবে। আর চুল থাকবে সুন্দর, সতেজ। যতই রঙ করুন না কেন, ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই নেই।
মন্তব্য করুন