আমরা সকলেই এখন একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যদিও লকডাউন উঠে গেছে, আবার আমরা কাজে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা কিন্তু কাজ করেই চলেছে। একঘেয়েমি, হতাশা, অবসাদ এই সব কথা এখন আমরা রোজ শুনতে পাচ্ছি।
কিন্তু শুধু তো এখন নয়। যে কোনও সময়েই জীবনে আসতে পারে কঠিন সময়। আর কঠিন সময় পার করার জন্য দরকার মনের সুস্থ থাকা। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে ঠিক কি কি করা যেতে পারে।
১. সবসময় পজিটিভ ভাবুন
ধরুন কোনও কারণে আপনার জীবনে একটা দুঃসময় এসেছে। আপনি সাময়িক ভেঙে পড়লেও একটু পরে সময় নিয়ে ভাবুন। ভাবুন যা গেল তার বদলে আপনি কি কি পেতে পারেন। কি কি দিয়ে আপনি আপনার ফাঁকা স্থান পূরণ করতে পারেন। ভাবার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করে দিন। এভাবে কিছু না থাকাটা অন্য অনেক পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করে দেখুন। মনে একটা আলাদা বল পাবেন। আর অবশ্যই মন খুলে হাসুন।
২. কথা বলুন অন্যদের সঙ্গে
কঠিন সময়ের মধ্যে পড়লে আমরা কারোর সঙ্গে কথা বলতে চাই না। আমরা অন্য লোকের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলি। আর কথা বলতে গেলেই ভাবি লোকে বুঝি করুণা করছে। এগুলি খুব ভুল ধারণা। খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেলে কথা বলুন কাছের মানুষদের সঙ্গে। ভাগ করে নিন মনের কষ্ট।মনের যন্ত্রণা ভাগ না করলে কিন্তু তা ডিপ্রেশনের রূপ নেবে। তাই যত পারেন মন হাল্কা রাখুন।
৩. ‘না’ কে বাদ দিন
জীবন থেকে এই ‘না’ শব্দটা একেবারে কেটে ফেলুন। আপনি মনে মনে ভাবুন সব হবে, এবং সত্যি চেষ্টা করলে সব হয়। এর জন্য আরেকটা কাজ করতে হবে। আপনার চারপাশে যত মানুষ আছে যারা ‘না’ বলে তাদের বাদ দিয়ে দিন। কিছু মানুষ আছে যারা সবসময়েই বলবে কিছু তো হল না, কিছু তো হচ্ছে না। এদের আগে জীবন থেকে সরান। না হলে তাদের নেগেটিভিটি আপনার মধ্যে দানা বাঁধবে।
৪. ধ্যান করুন
ধ্যান বা মেডিটেশন মনকে সুস্থ রাখার অনেক বড় ওষুধ। দিনে ১০ মিনিট অবশ্যই এটি করুন। একটি ফাঁকা ঘরে, যেখানে বেশি শব্দ যায় না সেই জায়গায় ধ্যান করুন। শান্ত মনে পদ্মাসনে বসে নিজের মনকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করুন। প্রথমে সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। এতে যেমন মন শান্ত হবে, তেমন সব কাজে একাগ্রতা বাড়বে।
৫. নিজেকে পুরস্কার দিন
খারাপ সময় হলেই সবও সময়ে নেই নেই করবেন না। মাঝে মাঝে রান্না করুন জমিয়ে। ভালো করে খান বিভিন্ন রেসিপি। কোথাও গিয়ে ঘুরে আসুন সবার সঙ্গে। ইচ্ছে হলে গান চালিয়ে নাচুন বা পছন্দের ছবি আঁকুন। যদি আপনার গাছ লাগাতে ভালো লাগে তাহলে অনেক গাছ লাগান। অর্থাৎ নিজেকে নানা কাজে ব্যস্ত করুন আর এভাবেই নিজেকে আবিষ্কার করুন।
৬. আস্তে আস্তে পা ফেলুন
পরিকল্পনা কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিস। আপনি যখন খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাবেন তখন মনের ওপর বেশি চাপ দেবেন না। একসঙ্গে অনেক কিছু ভেবে মনকে স্ট্রেস দেবেন না। বরং আস্তে আস্তে পরপর কি কি করা যায় তার লিস্ট বানান। সেগুলি ধীরে ধীরে করতে থাকুন। সব কাজ ভালো করে ভেবে করুন। একটা ভুল সিদ্ধান্ত আপনাকে আরও অনেকটা পিছিয়ে দিতে পারে। তাই একেবারে ছয় না মেরে দুই চার করে রান তুলুন।
৭. বই পড়ুন
বই কিন্তু আজও আপনার খুব কাছে সঙ্গী হতে পারে। আজকের কর্পোরেট জগতে মানুষকে বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু বইকে করতে পারেন। দিনে অন্তত নির্দিষ্ট কিছু সময় বইয়ের সঙ্গে কাটান। যা ভালো লাগে পড়তে তাই পড়ুন। দেখবেন বেশ রিফ্রেশ লাগছে আপনার।
৮. রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন
খারাপ সময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি যেটা হয় সেটা হল রাগ। রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা আমাদের মানসিক কাঠামো ভেঙে দেয়। আপনি অন্যদের মনে আঘাত দিয়ে ফেলতে পারেন। নিজের সঙ্গে খারাপ কিছু করে ফেলতে পারেন।তাই রাগ কমান। বরং রাগকে জেদে পরিণত করুন। এই জেদ আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
৯. গরম জলে স্নান
যখন আপনার খুব স্ট্রেস বাড়বে তখন গরম জলে স্নান করুন। খুব গরম জল নয় অবশ্য। শাওয়ারের তলায় যদি আপনি ৫ মিনিট দাঁড়াতে পারেন তাহলে আপনার স্টেস অনেকটা কমে যাবে। গরম জল আপনার স্নায়ু শিথিল করে।ফলে আপনি আরাম পাবেন।
১০. ভাল করে ঘুমোন
খারাপ সময় মানে ঘুম কম আসবে জানি। কিন্তু তার জন্য ঘুম একেবারে ছেড়ে দেবেন তা করলে হবে না। কঠিন সময় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আপনাকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। অনেক পরিকল্পনা করতে হবে।আর তার জন্য ভালো করে নির্দিষ্ট সময়ের ঘুম খুব দরকার। অন্তত ৮ ঘণ্টা রোজ ঘুমোন। শরীর আর মন দুইই ঝরঝরে থাকবে।
ভালো আর খারাপ সময় দুইই কয়েনের দুই পিঠ। খারাপ সময়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন আর তার সম্মুখীন হন। খারাপ সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখলেই কিন্ত আছে জয়ের হাতছানি।
মন্তব্য করুন