করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জেরে সমাজ-অর্থনীতির পাশাপাশি ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবনও। করোনা রুখতে সারা দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে লকডাউন। গৃহবন্দি শিশু থেকে বয়স্ক সকলেই, এর মধ্যে বাড়ির পরিচারিকা, যাদের সাহায্যে গৃহস্থালির কাজ আরও সহজ হয়ে ওঠে, তারাও আসতে পারছে না।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির সকল সদস্যরা যেহেতু বাড়িতেই রয়েছেন, পরিচারিকাও আসছেন না, তখন বাড়ির গৃহিনীর সারাটা দিন রান্নাঘরেই কেটে যাবে। বাড়ির গৃহিনীই ঘর সাফ-সাফাই করছেন, আবার কাপড় ধুচ্ছেন, কখনও স্বামীর চা, কখনও বাচ্চার খিদে মেটানো, সবমিলিয়ে লকডাউনে বাড়ির বউদের জন্য যে একটা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একথা বলাই যায়। তবে আসুন আজ আপনাদের জন্য রইল কিছু শর্টকাট-টিপস যা মেনে চললে পরিচারিকার অনুপস্থিতিতেও কাজ হতে পারে সহজ।
একা নয় সবাইকে দিয়ে কাজ করান
- এই সময় সবার প্রথমে যে টিপসটি দেব তা হল, এই অবকাশে আপনার স্বামী এবং সন্তানদের দিয়ে অবশ্যই কিছু কাজ করিয়ে নিন। স্বামী যদি রান্না করতে জানেন তো খুব ভালো, আর তা না হলে তাঁকে থালা-বাসন ধোয়া, জামা-কাপড় কাচা বা ঘর ঝাড়া-মোছার মতো কাজগুলি দিতে পারেন।
- পাশাপাশি আপনার সন্তানকেও ঘর ঝাড়া বা পরিষ্কার করার মতো কাজ দিতে পারেন।
- সব কাজ একা করতে যাবেন না, নিজের স্বাস্থ্যেরও যত্ন নিন। প্রত্যেকদিন তাড়াতাড়ি উঠে আপনার স্বামী এবং সন্তানদের তাদের সারাদিনের রুটিনটি ঠিক করে নিন।
খাবারের নানা টিপস মেনে চলুন
- সকালের খাবারের জন্য বানানো উপমা, হালুয়া, ইডলি বানানোর জন্য সুজি ভেজে নিন শুকনো খোলায়। এরপর তাতে প্রয়োজনীয় যা যা মশলা দরকার তা যোগ করুন।
- যদি আপনি ধোকলা বানাতে চান, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যাটার বানিয়ে মশলা যোগ করে রেখে দিন। স্যান্ডউইচ বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবজি কেটে এবং আলু সেদ্ধ করে স্টোর করে রেখে দিন।
- আজকে যখন পরিচারিকা নেই তখন উত্থপম, ইডলি, ধোসা, বানাতে এই সময় চাল-ডালের বদলে সুজি দিয়ে ট্রাই করুন। এতে করে আপনি চাল-ডাল ধোয়া-বাটার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- দুপুরে রান্নার জন্য চাল এবং ডাল আগে থেকে ধুয়ে রেখে দিন। চালের জল ছেঁকে নিয়ে, তারপর ডাল জলে ভিজিয়ে দিন। সবজি আর ডালের জন্য আদা, কাঁচালঙ্কা ধুয়ে নিয়ে কেটে ফ্রিজে রেখে দিন। ধনেপাতা, কারিপাতা কেটে রেখে দিন, যখন প্রয়োজন সেইমতো ব্যবহার করুন।
- ডালের সঙ্গে কিছু আলু সেদ্ধ করে নিতে পারেন। সেদ্ধ আলু ম্যাশ করে তাতে মশলা মিশিয়ে ভর্তা বানিয়ে নিতে পারেন, যা দুপুরের খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন।
- এখানে একটা টিপস দিয়ে রাখি ফ্রিজে ডাল ৫ দিন, সেদ্ধ সবজি ৩-৪ দিন, চাল ৩ দিন পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকে, এর মধ্যেকার পুষ্টিও একরকম থাকে।
- তাই আপনি একবারে দু’বারের রান্না প্রস্তুত করে রেখে দিন। এইসময় যখন আপনাকেই রান্না-বান্না করতে হবে, তখন অযথা না খেটে এইসব শর্টকাটগুলি অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
- যদি আপনি লাঞ্চে হিং-জিরে ডাল বানান, তাহলে পরের দিন তাতে কেবল পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, টমেটো বা সাম্বার মশলা যোগ করে খেতে পারেন, তাহলে একই খাবারের স্বাদ দেখবেন অন্যরকম হয়ে যাবে, আপনার কাজও কিছুটা কমবে।
বিশেষ টিপস
- তবে চাল, ডাল, সবজি রান্না করার পর ফ্রিজে রাখার আগে অতি অবশ্যই তা আগে ঠান্ডা করে নিন, ২ঘণ্টা বাইরে রেখে তারপর টাইট ঢাকনাওয়ালা পাত্রে তা ফ্রিজে রেখে দিন।
- এইভাবে রাখলে তা ২৪ তেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে এবং সমস্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ থাকে।
- একবারে দুবারের ভাত বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। পরের দিন হিং, সর্ষে, কাঁচালঙ্কা দিয়ে ভাত ভাজতে পারেন, বা পেঁয়াজ এবং সবজি দিয়েও ভাজতে পারেন। ভাতভাজা খেতে খুবই সুস্বাদু।
- দুপুরে সবজি যদি হিং ও জিরে ফোড়ন দিয়ে রান্না করেন, তো আর এক বেলা পেঁয়াজ-রসুন দিয়ে রান্না করতে পারেন।
- স্বামী বাড়িতে থাকলে খুব স্বাভাবিকভাবেই অফিসের মতো সে ২-৩ ঘণ্টা অন্তর অন্তর চা চাইবেন। এই কাজকে সহজতর করতে আপনি সকালে দুধ,জল,চিনি,আদা,এলাচ, প্রয়োজনমতো মিশিয়ে চা বানিয়ে নিন।
- এবার তা ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিন। এবার আপনার পতিদেবকে বলুন সেই চা প্রয়োজন মতো বের করে ফুটিয়ে খেয়ে নিতে।
মুখরোচক খাবারের টিপস
- স্বামী এবং শিশুরা বাড়িতে থাকলে তারা কিছু মুখরোচক খাবার খেতে চায়। তাই বারবার নতুন কিছু বানানোর বদলে আপনি বাজার থেকে মুড়ি, চিনাবাদাম, কর্নফ্লেক্স, কাজু, কিশমিস কিনে আনুন। এবার সেগুলি মাইক্রোওয়েভে এমনি রোস্ট করে নিতে পারেন বা একটু তেলেও রোস্ট করতে পারেন। এইভাবে রোস্ট করে নিয়ে আপনি স্টোর করেও রাখতে পারেন।
- মাখনাও খুব পুষ্টিকর। এগুলি আপনি মাইক্রোওয়েভ বা ফ্রাই প্যানে সামান্য ঘিয়ে ভেজে নিতে পারেন। তাতে যোগ করুন বীট নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো, বা চাট মশলা, এটি কিন্তু দারুণ স্ন্যাক্স।
- চিনাবাদামও আপনি মাইক্রোওয়েভ বা ফ্রাই প্যানে তেলে রোস্ট করে রাখতে পারেন। তারপর সেগুলি ময়দায় কোট করে ভেজে খেতে পারেন।
- এই টিপস মেনে আপনি বারবার নতুন কিছু বানানোর চেয়ে মজাদার চটপটা এইসব স্ন্যাক্স বানাতে পারেন।
কত রকমের খাবারের টিপস
- পাশাপাশি আপনি একটি বড় কেক তৈরি করে ফ্রিজে রেখে খেতে পারেন।
- এইসব খাবার একঘেয়ে লাগলে বাড়িতে তৈরি করে নিতে পারেন নানারকমের চাটনি। যেমন ধনে পাতা, পুদিনা, টমেটো, নারকেল, রসুন, কাঁচালঙ্কা, চিনাবাদামের চাটনি তৈরি করে নিয়ে তা রান্নার ২ ঘণ্টার মধ্যে এয়ার টাইট কৌটোতে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন এবং প্রয়োজন মতো খেতে পারেন।
- একইভাবে পেঁয়াজ, এবং কাঁচা লঙ্কা ভিনিগার এবং নুন বা লেবুর রসে ভিজিয়ে রেখে দিতে পারেন। ভিনিগার মেশালে কিন্তু কিচ্ছু নষ্ট হবে না।
- একদিন টমেটো বা বিভিন্ন রকমের সবজি দিয়ে স্যুপও বানিয়ে নিতে পারেন। চটজলদি স্যুপ বানাতে টমেটো ও অন্যান্য সবজীর ভালো করো ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। এবার সেগুলি গ্রাইন্ড করে নিয়ে নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো, মাখন এবং চিজ যোগ করলেই তৈরি।
ঘরের অন্যান্য কাজের টিপস
- বাসন মাজার কাজটা কমাতে আপনি ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া যায় এমন বোল, গ্লাস, প্লেট, চামচ ব্যবহার করতে পারেন।
- ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার পর তা ড্রায়ারে শুকিয়ে নিতে পারেন। এইভাবে কাপড় শুকোনোর কাজটিও সহজ হতে পারে।
- পরিচারিকা না এলে ঘর মোছার কাজও যদি সহজে করতে চান, তাহলে তার জন্য রইল এইসব টিপস।
- বাথরুম এবং বাইরের চপ্পল আলাদা রাখুন। এতে বাইরের চপ্পল যদি ঘরে না নিয়ে আসেুন তাহলে আপনার ঘর জীবাণুমুক্ত থাকবে। এইভাবে চললে আপনাকে প্রতিদিন ঘর মোছার কাজ করতে হবে না। সপ্তাহে ২-৩ দিন মুছলেই হবে।
- জামাকাপড় ধোয়ার পর যে সাবান জল বাঁচবে তা কমোড এবং টয়লেট সিটের ওপর ঢেলে দিন। তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে দিন।
- আপনার স্বামী এবং শিশুর আন্ডারগার্মেন্টস, মোজা, রুমাল সব আলাদা আলাদা বক্সে ভরে রাখা অভ্যেস করুন। তাহলে রোজ আলাদা আলাদা করে বের করে তাদের দেওয়ার ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত হতে পারবেন।
মন্তব্য করুন