টিভি, ফেসবুক, টুঁইটার সর্বত্র এখন একটাই খবর! নভেল করোনা ভাইরাস। সারা দেশ জুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ। বিপদ এখন বেড়েই চলেছে। তাই ঘরে থাকুন লকডাউন মানুন।
আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে। তাই এর সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে ওয়াকিবহাল থাকুন নিজে ও অন্যদেরও সতর্ক থাকতে বলুন। এতদিন ধরে ঘরে বন্দি বলে অযথা বিভ্রান্ত হবেন না ফেক নিউজ পড়ে। সজাগ থাকুন সুস্থ্য থাকবেন।
করোনা ভাইরাস কি?
করোনা ভাইরাস একটি বিশেষ বড় ধরনের ভাইরাস, যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। যা সাধারন সর্দিকাশির থেকে বড় ধরনের রোগের দিকে রোগীকে ঠেলে দেয়। এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। করোনা ভাইরাস একটি নতুন স্ট্রেন যা আগে মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। এই ভাইরাস মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।
করোনা ভাইরাসের উপসর্গ বা লক্ষণ কি কি?
- COVID-19 সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, শুকনো কাশি এবং শ্বাসকষ্ট।
- ভাইরাস আক্রান্ত ব্যাক্তি শরীরে নানা রকমের ব্যাথা অনুভব করতে পারে। যেমন শরীরে ব্যাথা বিশেষ করে গলা ব্যাথা।
- বয়স্ক ব্যাক্তি যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা বা ডায়াবেটিসের মতো রোগ আগে থেকে আছে, তারা এই ভাইরাস দ্বারা গুরুতর ভাবে আক্রান্ত হতে পারেন।
- গুরুতর ক্ষেত্রে, এই সংক্রমণ নিউমোনিয়া, তীব্র শ্বাসকষ্টের সিন্ড্রোম, কিডনির ব্যর্থতা এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
করোনা ভাইরাস সনাক্ত করবেন কি ভাবে?
- ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১ থেকে সর্বাধিক১৪ দিনের মধ্যে হয়। সাধারণত পাঁচ দিনের মধ্যে।
- প্রাথমিক লক্ষণগুলি উপস্থিত হওয়ার পরে, তিনটি রাউন্ড পরীক্ষা করা উচিত। কেউ আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তাদের পরে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।
করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
- ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তির দ্বারাই এটি মূলত ছড়ায়।
- নাক বা মুখের সাহায্যে এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে।
- আক্রান্ত ব্যাক্তি কাশলে বা নিশ্বাস প্রশ্বাস নিলে তার মধ্যে দিয়ে এটি অন্যের শরীরে ঢুকতে সক্ষম।
- ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) বলেছে যে গবেষণায় দেখা গেছে যে COVID-19 (সিভিভিড -১৯) ভাইরাসটি মূলত শ্বাস প্রশ্বাসের সময় ছড়াচ্ছে।
করোন ভাইরাস সম্পর্কে সাধারণ ভুল ধারণা কী কী?
ভুল ধারণা: এই ভাইরাস বাতাসের মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
সত্য: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এটি সাধারণ ভুল ধারণা। এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে পারে ঠিকই। তবে এটি মূলত শ্বাস প্রশ্বাসের ছিদ্রের সংস্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়।
ভুল ধারণা: এটি মল পরিত্যাগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সত্য: সংক্রামিত ব্যক্তির মল থেকে COVID-19 ধরার ঝুঁকি কম। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে এই ভাইরাসটি কিছু ক্ষেত্রে মলত্যাগে উপস্থিত হতে পারে, তবে তাই বলে এই পথ দিয়ে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রধান নয়।
ভুল ধারণা: প্রাণীর উৎসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সত্য: COVID-19 এর সম্ভাব্য প্রাণী উৎস এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সুরক্ষার জন্য, পশুর বাজার ঘুরে দেখার সময়, প্রাণী এবং পশুর থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। কাঁচা বা কম পাঁকে রান্না করা খাবার খাবেন না আপাতত। প্রাণী পণ্য এড়াতে যত্নের সাথে কাঁচা মাংস, দুধ ভালো করে রান্না করুন। দুধ ভালো ভাবে ফুটিয়ে নিয়ে তবেই খান।
ভুল ধারণা: পোষা প্রাণীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সত্য: বিড়াল এবং কুকুরের মতো পোষা প্রাণী এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে বা ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে এমন কোনও প্রমাণ নেই। তাই অযথা ভুল খবরে নিজে বিব্রত হবেন না।
ভুল ধারণা: অ্যান্টিবায়োটিক করোন ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে।
সত্য: না, অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। তাই এটি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে অক্ষম।
ভাইরাস সংক্রামিত হওয়া রোধ করতে কী করবেন?
- অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ডওয়াস বা সাবান জল দিয়ে নিয়ম করে হাত ধুন। যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে ও পরে নিয়ম করে ভালো ভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- সংক্রমিত হওয়া ব্যাক্তির থেকে এক মিটারের (৩ ফুট) দূরত্ব বজায় রাখুন।
- ভিড় জায়গায় এই সময় বেশিক্ষণ না থাকার চেষ্টা করুন।
- নিজে বা কেউ যদি জ্বর, সর্দি, কাশি বোধ করেন তাহলে সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যান। চিকিৎসার মধ্যে থাকুন।
- আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। নিশ্চিত হোন যে আপনি এবং আপনার চারপাশের লোকেরা ঠিক আছে কিনা। কেউ আক্রান্ত নয় তো!
- হাঁচি, কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখুন। মুখ ঢাকার কাপড় প্রতিনিয়ত বদলান।
- কাশি বা শ্বাস প্রশ্বাসের কোনও লক্ষণ না থাকলে মাস্ক পরার দরকার নেই। লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে একটি মাস্ক অবশ্যই পরে থাকা উচিত।
- মাস্ক মানে যেকোনো ধরনের নয়। ওষুধের দোকান থেকে মেডিকেটেড মাস্ক পাবেন তা ব্যবহার করবেন। আর এটি ব্যবহার করার পর ফেলে দিয়ে ভালো করে হাত, মুখ ধুয়ে নেবেন।
ভাইরাসের নিরাময় কি আছে?
- আপাতত এই ভাইরাস থেকে সেরে ওঠার কোন টীকা, প্রতিষেধক বা ওষুধ পাওয়া যায় নি। গবেষণা চলছে।
- তবে হাসপাতালে ভর্তি এবং যত্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে। সম্ভাব্য ভ্যাকসিন এবং কিছু নির্দিষ্ট ড্রাগ জাতীয় চিকিৎসার তদন্তাধীন রয়েছে।
- ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মাধ্যমে আক্রান্তদের পরীক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই এখন অবধি।
- পৃথিবীর সমস্ত দেশ এই রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং এটির জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে।
- এই রোগ সম্পর্কে গবেষণা চলছে, জলদি কোন সুরাহা পাওয়ার আশা আমরা করতে পারি। তাই আতঙ্কিত না হওয়া এবং ভাইরাস সম্পর্কে গুজবে মনোযোগ না দেওয়ার খেয়াল করুন।
মন্তব্য করুন